সৈয়দা জসিমুন্নেসা খাতুনের নাম বললে কেউ চিনবে বলে মনে হয় না। ‘রাণী হামিদ’ বললে বহুলোকই চিনতে পারবে। ব্রিটিশ মহিলা দাবা প্রতিযোগিতায় তিনি চ্যাম্পিয়ন হন তিন তিনবার! দাবায় আন্তর্জাতিক খ্যাতির অধিকারী এই নারী বৃহত্তর সিলেটের কন্যা। রাণী হামিদের ছেলে কায়সার হামিদ ছিলেন ১৯৮০এর দশকে বাংলাদেশের কীর্তিমান ফুটবল খেলোয়াড়।
বাংলাদেশে দাবার ইতিহাসে পথিকৃৎ হিসেবে যিনি অবিস্মরণীয় হয়ে আছেন তিনি জ্ঞানতাপস ড. কাজী মোতাহার হোসেন। জাতীয় অধ্যাপক কাজী মোতাহার হোসেনের জ্ঞানচর্চার বাইরেও বাংলাদেশ জুড়ে খেলুড়ে হিসেবে খ্যাতি ছিল। দি স্টেটসম্যান পত্রিকার আয়োজনে ১৯২৫ সালের “অল ইণ্ডিয়া দাবা মেধাবী দীপ্তিমান প্রতিযোগিতা”(All India Chess Brilliancy Competition)-এ তিনি মোট ১০৩ পয়েন্টের মধ্যে ১০১ পয়েন্ট পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন। তিনি ১৯২৯ থেকে ১৯৬৯ পর্যন্ত দাবার জগতে একাধিপতি ছিলেন।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ দাবা সংঘ যা পরবর্তী সময়ে(১৯৭৪ সালে) বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশন রূপে পরিচিত হয় তারও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন তিনি। তাঁর স্মৃতির স্মরণে ১৯৮৫ সাল থেকে বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশন ‘ড. কাজী মোতাহার হোসেন আন্তর্জাতিক মাস্টার্স চেস টুর্নামেন্ট’ আয়োজন করে আসছে।
বৃটিশ মহিলা দাবা বাদেও সৈয়দা রাণী হামিদ ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশীপের মালিকানা দখল করে রেখেছিলেন সুদীর্ঘকাল। ২০১৯ সাল পর্যন্ত পুরো ২১ বার হয়েছেন জাতীয় মহিলা দাবা চ্যাম্পিয়ন। কমনওয়েলথ দাবা চ্যাম্পিয়নশীপ ২০১৫-তে বাংলাদেশের হয়ে অর্জন করেন স্বর্ণপদক। ১৯৭৯ সাল থেকে আয়োজিত জাতীয় মহিলা দাবা প্রতিযোগিতায় ১২ বার চ্যাম্পিয়ন হন বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক মহিলা মাস্টার রানী হামিদ।
দাবার জগতে খ্যাতীমান এই নারী, রাণী হামিদের জন্ম সিলেটে। বাবা সৈয়দ মমতাজ আলী পেশায় ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। মা মোসাম্মাৎ কামরুন্নেসা খাতুন ছিলেন গৃহিণী। চার ভাই ও চার বোনের মধ্যে রাণী হামিদ তৃতীয়। দাবা জগতের রানী, রাণী হামিদ নামে পরিচিত হলেও তার আসল নাম সৈয়দা জসিমুন্নেসা খাতুন। নামটি এখন শুধু কাগজে-কলমেই আছে। রাণী হামিদ নামটি তার বাবার দেওয়া নাম। তার বাবা মহারানী ভিক্টোরিয়ার খুব ভক্ত ছিলেন। সেই কারণ থেকে ছোটবেলা থেকেই তা’কে রাণী বলে ডাকতেন। আর সৈয়দা জসিমুন্নেসা খাতুন নামটি তার দাদির রাখা নাম। তিনি চার সন্তানের জননী। এসকল তথ্য তার মুখ থেকেই জানা।
|