লন্ডন: কিছু কিছু ঘটনা আছে যা দিয়ে ঘটনার সাথে জড়িত মানুষের মন-মেজাজ কিংবা ইচ্ছা-উদ্দেশ্য আন্দাজ করা যায়। যৌবনে মানুষ অনেক কিছুই করে। তার কোনটা খুবই ভাল আবার খারাপও থাকে কিন্তু এসব দিয়ে একজন মানুষকে পুরোপুরি চেনা যায়না। আবার এসবের মাঝেই কিছু ঘটনা পাওয়া যায় যা থেকে একজন মানুষকে কিঞ্চিৎ হলেও চেনা যায়। এমনই এক কাহিনী আজ পড়ার সুযোগ হলো। ঘটনাটি একদিক দিয়ে খুবই হাস্যকর আর ক্ষুদ্রই বলবো। কিন্তু যতদূর বুঝেছি খুবই খাঁটী একটি সত্য ঘটনা। আর এমন রসের কাহিনীখানা সংগ্রহ করেছেন দিল্লীস্থ বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী সাহেব। তিনি শুধু সংগ্রহই করেছেন তা নয় স্বয়ং তার ফেইচবুকে পোষ্ট করেছেন।
কাহিনীখানা পাকিস্তানী স্বাধীনতার সময়ের। ভারত স্বাধীন হয়েছে কিন্তু একটি অংশকে ছেড়ে দিয়ে। সেটি পাকিস্তান! মুসলমানদের জন্য আলাদা একখানা ভূখন্ড। শুরু হয়েছে স্থানবদল। বিশেষ করে যারা চাকুরে, তাদের সুযোগ দেয়া হয়েছে পছন্দ করে কর্মক্ষেত্র ঠিক করার।
সামরিক বাহিনীর দুই মেজর। একজন মুসলমান অন্যজন হিন্দু। যিনি হিন্দু তাকে কোথায়ও যেতে হবে না। তিনি তার দেশেই আছেন। কিন্তু যিনি মুসলমান তিনিতো ঠিক করেছেন পাকিস্তান। অতএব তাকে পাকিস্তানে যেতে হবে। অতএব গোছগাছ করে রাখছেন সব। হঠাৎ খেয়াল হলো তার পছন্দের একটি জিনিসের বিষয়ে। গেলেন তারই সুপরিচিত ওই বন্ধুর কাছে।
বিষয় একটি লাল রংয়ের জেমস মটর সাইকেল। তার খুবই প্রিয় সেই সাইকেলখানা। বন্ধুকে গিয়ে বললেন তার খায়েশের কথা। যেহেতু তিনি চিরতরে চলে যাচ্ছেন, বন্ধু যদি তার ওই জেমস মটর সাইকেলখানা বিক্রি করেন তা’হলে সে ১০০০ টাকায় কিনতে রাজী আছে। একহাজার সে সময় বিশাল একটি অংক। বন্ধু রাজী হয়ে সাইকেলখানা দিয়ে দিলেন। কথা হলো, পাকিস্তান পৌঁছেই টাকা পাঠিয়ে দেবেন।
সাইকেলের মালিক সেই অফিসার অপেক্ষা করেন টাকার কিন্তু হায় হোতস্মি! টাকাতো আর আসে না। এই করে করে ২৪ বছরই পার হয়ে গেল একহাজার টাকা আর তার কাছে পৌঁছেনি। এর মাঝেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেলো। একপর্যায়ে যুদ্ধ শেষ হলো। বাংলাদেশ স্বাধীন হলো। ৯৫ হাজার পাকসেনা ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে অস্ত্র রেখে দিয়ে আত্মসমর্পণ করলো। সেই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে ভারতীয় সামরিক প্রধান যুদ্ধে ভারতীয় পক্ষের অধিনায়ক জেনারেল সাম মানেকশো পরাজিতদের সামনে বিজয়ীর ভাষণে বললেন-“ইয়াহিয়া কোনদিনই আমার মটর সাইকেলের একহাজার টাকা শোধ করেনি। কিন্তু আজ সে পরিশোধ করেছে…।” হ্যাঁ তিনি ছিলেন সাম বাহাদূর মানেকশো আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের পক্ষে সর্বাধিনায়ক। তিনি বন্ধুপ্রতিম ইয়াহিয়া খানের খায়েশে তার পছন্দের মটর সাইকেলখানা বিক্রি করেছিলেন ১৯৪৭ সালে আর তার মূল্য পেয়েছিলেন ২৪ বছর পর। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিয়ে! যা তার নিজের ভাষায় বলা