মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলা নিয়ে বিস্তৃত কাউয়াদীঘি হাওরের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম কাশিমপুর পাম্প হাউজ। গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে পাম্প হাউজের সেচ কার্যক্রম এবং নিষ্কাশন গেইট বন্ধ থাকায় গত ২ দিনের বৃষ্টিতে হাওরে পানি বৃদ্ধি পেয়ে মনু নদী প্রকল্পভু্ক্ত এলাকায় প্রায় ২০০ একর আমন ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।
এই বছর বৃষ্টি এবং উজানের ঢলের কারণে কাউয়াদীঘি হাওরে পানির মাত্রা বেড়ে গেলে মনু নদী প্রকল্পের ভেতরে থাকা দুই হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। লোডশেডিং এর কারণে পাম্প হাউজ কর্তৃপক্ষ পর্যাপ্ত পরিমাণে সেচ কার্যক্রম চালিয়ে যেতে না পারায় হাওর পাড়ের কৃষক ও সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। কাউয়াদীঘি হাওরের জলাবদ্ধতাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সংগঠন হাওর রক্ষা সংগ্রাম কমিটি এবং সাধারণ কৃষকদের আন্দোলনের মুখে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসন গত মাসের ১১ তারিখ সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগের সমন্বয়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ এর ব্যবস্থা করলে পাম্প হাউজ কর্তৃপক্ষ নিয়মিত সেচ কার্যক্রম শুরু করে। যার ফলে দ্রুতই হাওরের পানি নেমে আসতে শুরু করে। পানি কমায় জমি চাষের উপযোগী হলে কৃষকেরা আমন চাষে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ইতিমধ্যেই প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়ে গেছে। প্রকল্পভুক্ত এলাকায় আমন চাষ এখনও চলমান রয়েছে। এমত অবস্থায় গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে পাম্প হাউজের সেচ কার্যক্রম বন্ধ থাকায় গত দুই দিনের বৃষ্টিতে হাওরে পানি বৃদ্ধি পায়। যার ফলে নতুন রোপণ করা আমন ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।
|
সরেজমিনে দেখা গেছে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার জগৎপুর, জুমাপুর, রায়পুর, বানেশ্রী, বিরাইমাবাদ, বুড়িকোনা, বড়কাপন, কচুয়া, একাটুনা, মল্লিসরাই, উলুয়াইল এবং রাজনগর উপজেলার মধুর বাজার, আমিরপুর, রক্তা, বানুরমহল, বড়গাঁওসহ বিভিন্ন এলাকায় আমন ধান পানিতে ডুবে আছে।
হাওর রক্ষা সংগ্রাম কমিটি মৌলভীবাজার জেলা সভাপতি এডভোকেট মঈনুর রহমান মগনু বলেন, ‘আমন রোপন চলমান থাকা অবস্থায় সেচ কার্যক্রম বন্ধ করার কোন যৌক্তিকতা নেই। এখন অতি দ্রুত সবগুলো পাম্প সচল করে এবং নিষ্কাশন গেইটের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশন করে কৃষকের কষ্টের ফসল রক্ষা করতে হবে। এতে কোন অযুহাত দেখালে কৃষকের স্বার্থে আমরা আবারও রাজপথে আন্দোলন করবো।
এ বিষয়য়ে মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কিছু কিছু জায়গায় ধান তলিয়েছে, পানি কমার কারণে সেটা আজ রাতেই ঠিক হয়ে যাবে। আশা করি আর বৃষ্টি না হলে সমস্যা হবে না। আমি নিজে কাশিমপুর পাম্প হাউজ দেখে এসেছি, গেইট খুলে দেয়া হয়েছে এবং পাম্পও চালু করা হয়েছে।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী(যান্ত্রিক) এম. এ. হান্নান খান বলেন, ‘আমরা গত মাসের ১০ তারিখ থেকে চলতি মাসের ১ তারিখ পর্যন্ত পাম্পের মাধ্যমে সেচ এবং গেইট দিয়ে পানি নিষ্কাশনের দ্বারা হাওরের প্রায় সাড়ে ৪ ফুট পানি কমাতে সক্ষম হই। কৃষি অফিসের সুপারিশের প্রেক্ষিতেই গত ১ সেপ্টেম্বর বিকাল থেকে সেচ কার্যক্রম এবং নিষ্কাশন গেইট বন্ধ করা হয়। হাওরের পানি বৃদ্ধির সাথে সাথেই আজ আবার আমরা সকাল ১০ টায় নিষ্কাশন গেইট খুলে দিয়েছি এবং দুপুর ১২ টা থেকে পাম্প চালু করেছি। এখন গেইট দিয়ে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে এবং পাম্পের সেচ অব্যাহত আছে।
|