সর্বসাধারণ তথা দর্শক নন্দিত চিত্র নায়িকা কবরীর মৃত্যুর পর বাংলাদেশের ফেইচবুক উত্তাল হয়ে উঠেছে। মানুষ তাদের প্রানপ্রিয় শিল্পীর অনন্তযাত্রাকে কথার ফুলে ফুলে ভরে তোলে ফেইচ বুকের পাতা। অভিনয় শিল্পী ছাড়াও সমাজের সকল পেশার মানুষই শ্রদ্ধা আর ভালবাসার কথামালায় তাদের হৃদয়ের শিল্পীকে শেষ বিদায় জানিয়ে যাচ্ছেন। ফেইচবুক ছাড়াও দেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম অভিনেত্রী কবরীকে নিয়ে হৃদয় ছোঁয়া খবর পরিবেশন করেছেন বিস্তৃতভাবে। বিবিসি শুরুই করেছে-‘চিত্রনায়িকা কবরীর মৃত্যুর পর গভীর শোক প্রকাশ করছেন দেশের সর্বস্তরের মানুষ’এ কথা দিয়ে। সম্ভবতঃ বিবিসি-ই তাদের চিরাচরিত নিয়মে মহিয়সী এ শিল্পী সারাহ কবরীর জীবন নিয়ে সুবিস্তারীতভাবে সংবাদ প্রকাশ করেছে। |
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
শুক্রবার ৯ এপ্রিল ঢাকার শেখ রাসেল গেস্ট্রোলিভার হাসপাতালে রাত ১২-২০ মিনিটে মহিয়সী এ নারী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। শোক বিহ্বল সকল মানুষের সাথে আমরাও তার অনন্ত যাত্রায় গভীর শোক ও পরিবারের প্রতি হৃদয়ের গভীর থেকে সমবেদনা প্রকাশ করছি। প্রার্থনা জানাই স্রষ্টায় তার অনন্ত যাত্রা ফুলে ফুলে ভরে উঠুক। |
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বাবা কৃষ্ণদাস পাল ও মা লাবণ্য প্রভা পালের ঘর আলো করে ১৯৫০ সালের ১৯ জুলাই কবরী এ ধরা ধামে জন্ম নিয়েছিলেন। তার গ্রামের বাড়ী চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা যায় ১৯৬৩ সালে কবরীর বয়স যখন ১৩ বছর, সে বয়সে তিনি নাচের শিল্পী হিসেবে জীবনের প্রথম মঞ্চে উঠেন। এর পর টেলিভিশন ও শেষে সিনেমায় পদার্পণ। |
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
কবরী ছিলেন একাধারে শিল্পী, মানবাধিকার কর্মী, রাজনীতিক ও সমাজ বিশেষজ্ঞ। কিশোরী নৃত্য শিল্পী মিনা পাল থেকে সিনেমা পর্দার অভিনেত্রী কবরী হতে তার বেশী সময় লাগেনি। গ্রামীণ বাংলা সংস্কৃতির কাছাকাছি থেকে অভিনয়ের তার যে স্বকীয়তা, বাংগালী নারী মানসের শান্ত কোমল স্বভাব অভিনয়ে ফুটিয়ে তোলার দক্ষতা তাকে দর্শক প্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে গিয়েছিল। |
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
মাত্র ১৩ বছর বয়সে কবরী তার নায়িকা জীবন শুরু করেছিলেন। ১৯৬৪সালে সুভাষ দত্তের সুতরাং ছবিতে তিনি জীবনের প্রথম মূল নারী বা নায়িকা চরিত্রে অভিনয় দিয়ে শুরু করেন। এর পর একনাগারে ৪০ বছর সফলতার সাথে বিভিন্ন ছবিতে কাজ করেন। দেশের সকল পেশার মানুষের হৃদয় জয়ী তাঁর সফলতার পরিমাপ করা যায় একটি উদাহরণ দিয়ে- ২০০৪-৬ সালে কবরী নিজে ‘আয়না’ নামের ছবি তৈরী করেন। এ ছবিতে অভিনয় করেন তিনি, যার হাত ধরে কবরী সিনেমা জগতে পা রেখেছিলেন সেই স্বনামে খ্যাত অভিনেতা ও পরিচালক প্রয়াত সুভাষ দত্ত। |
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
কবরী অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছায়াছবিগুলো হলো- ১৯৭০এর সুজন সখি ও সারেং বৌ। এ ছবি দু’টিতে তিনি অভিনেতা ফারুখের সাথে অভিনয় করেন। খ্যাতিমান অভিনেতা প্রয়াত বুলবুল আহমদের সাথে তিনি দেবদাস ছবিতে অভিনয় করেন। ভারতীয় খ্যাতীমান পরিচালক প্রযোজক ঋত্বিক ঘটকের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ ছবিতে কবরী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। স্বাধীনতা পূর্বকালীন সময়ে প্রয়াত জহীর রায়হানের উর্দূ ছবি ‘বাহানা’য় তিনি প্রয়াত অভিনেতা রহমানের সাথে অভিনয় করেন। সময়ের সব কৃতি অভিনেতা রাজ্জাক, আলমগীর, সোহেল রাণা, উজ্জ্বল, ওয়াসিম, খান আতাউর রহমান, গোলাম মোস্তাফা, আনোয়ার হোসেন, এটিএম সামসুজ্জামান প্রমুখ অভিনেতাদের সাথেও কবরী অভিনয় করেছেন অভুতপূর্ব সফলতায়। |
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ মোট ৮টি জাতীয় পুরস্কারে তিনি ভূষিত হয়েছেন জীবনে।বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধেও কবরীর অবদান ছিল অসামান্য। তিনি রেডিও ইণ্ডিয়াতে মুক্তিযুদ্ধের সময় কাজ করেছেন। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদেরও সদস্য ছিলেন দীর্ঘ সময়। |
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
তিনি বিয়ে করেছিলেন চিত্ত চৌধুরীকে। তাদের ছাড়া-ছাড়ি হয়ে গেলে আবার বিয়ে করেন নারায়ণ গঞ্জের ব্যবসায়ী সফিউদ্দীন সরোয়ারকে ১৯৭৮সালে। ২০০৮সালে আবারও বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এর পর আর কোন বিয়ে করেননি। তিনি ছিলেন ৫ সন্তানের মা। |