চান মিয়া, ছাতক: ছাতকে বেইলী ব্রীজ ভেঙ্গে সুইস গেটের মালামাল নিয়ে একটি ভারী ট্রাক খাদে পড়ে দু’জনের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটেছে। গুরুতর আহত ট্রাক চালক ফারুক মিয়াকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সে সাতক্ষীরা জেলার মজুমদারকাটি এলাকার আব্দুল হাকিমের পুত্র। রোববার রাত দেড়টার দিকে ছাতক-দোয়ারাবাজার সড়কের লক্ষীবাউর মির্জা খালের বেইলী ব্রীজ ভেঙ্গে এ দূর্ঘটনা ঘটে। এসময় দূর্ঘটনা কবলিত ট্রাকে থাকা দোয়ারাবাজার উপজেলার বুগলা ইউনিয়নের মোল্লাপাড়া গ্রামের ছিফত আলীর পুত্র আবুল হোসেন(২৬) ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার তেঘরীয়া এলাকার বাসিন্দা আবেদীন(২৮) ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করে।
এদিকে ট্রাকের ভেতর আটকে পড়া অপর দু’জনের লাশ প্রায় ১৫ ঘন্টা পর ছাতক ও সিলেটের ফায়ার সার্ভিস, থানা পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চট্টগ্রাম থেকে ট্রাক যোগে দোয়ারার বুগলা রাবারড্যাম-সুইস গেট নির্মানের লৌহজাত ভারী মালামাল নিয়ে লক্ষীবাউর মির্জা খালের বেইলী ব্রীজের উপর উঠলে ব্রীজ ভেঙ্গে ট্রাক খাদে পড়ে যায়। এসময় ট্রাকে থাকা চালক সহ তিনজন ট্রাকের ভেতর আটকা পড়লে স্থানীয়রা আশংকাজনক অবস্থায় ট্রাক চালক ফারুক মিয়াকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। কিন্তু ফায়ার সার্ভিস, থানা পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন সকাল থেকে চেষ্টা করে বিকেল ৩টার দিকে দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া ট্রাকের ভেতর থেকে অপর দু’জনের লাশ উদ্ধার করেন।
ফায়ার সার্ভিস দলের সহায়তায় ট্রাকের বিভিন্ন অংশ যান্ত্রিক সিজার দিয়ে কেটে লাশ উদ্ধার করা হয়। ইউপি সদস্য লিয়াকত আলী, মনির উদ্দিনসহ স্থানীয় লোকজন উদ্ধার কাজে অংশ নেন। বর্তমানে ছাতক-দোয়ারা সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।
খবর পেয়ে ছাতক উপজেলা চেয়ারম্যান অলিউর রহমান চৌধুরী বকুল ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাছির উললাহ খান সকালে ঘটনাস্থলে পৌছে লাশ উদ্ধারে তৎপরতা চালান। পরে দোয়ারা উপজেলা চেয়ারম্যান ইদ্রিছ আলী বীর প্রতিক, দোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মহুয়া মমতাজ, ছাতক থানার ওসি(অপারেশন) গোলাম মোস্তফা, নোয়ারাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেওয়ান পীর আব্দুল খালেক রাজা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসা সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, এ ব্রীজ দিয়ে ৩ টনের অধিক মালামাল নিয়ে পরিবহন করা নিষেধ রয়েছে। ব্রীজের উভয় পাশে সংকেতসহ সাইনবোর্ডও রাখা হয়েছে। চালকরা সংকেত অমান্য করে গাড়ি চালিয়ে এসব দূর্ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে। দুর্ঘটনা কবলিত ট্রাকটির মালা-মালের ওজন ছিল ৩০ থেকে ৩৫টন। স্থানীয় একাধিক লোকজন জানান, ঝুকিঁপূর্ণ বেইলী ব্রীজ দিয়ে প্রায় ৩৫ টনের অধিক মালামাল নিয়ে যেতে চালক অসম্মতি জানালে স্লুইস গেটের ঠিকাদার সুনামগঞ্জ শহরের উকিল পাড়া এলাকার বাসিন্দা উত্তম কুমার দাস ও পার্টনার বুগলা ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার আলমের চাপে ট্রাক নিয়ে ব্রীজে উঠলেই এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার সাথে-সাথেই মোটর সাইকেল যোগে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে তারা। বর্তমানে তাদের ব্যবহৃত মুঠোফোন বন্ধ রয়েছে।
এদিকে ইউপি সদস্য মনির উদ্দিন ও লক্ষিবাউর গ্রামের এনামুল হকসহ লোকজন জানান, সড়ক সংস্কার কাজের সময় ঝুকিঁপুর্ন এ ব্রীজটি মেরামতের জন্য সড়ক ও জনপথের এসও রমজান আলীর কাছে তারা বার-বার অনুরোধ করেছেন। তারা কিছুটা হলেও ব্রীজটি সংস্কারের দাবি করলেও রমজান আলী এতে কোন কর্ণপাত করেননি।