শ্রীমঙ্গল থেকে লিখেছেন সৈয়দ ছায়েদ আহমদ।। আগামীকাল ৬ ডিসেম্বর শ্রীমঙ্গল মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল মুক্ত হয়েছিল। ১৯৭১ সালের এই দিনে লড়াকু মুক্তিযোদ্ধাগন মরণপন লড়াই করে হানাদার বাহিনীকে শ্রীমঙ্গল থেকে হটিয়ে শত্রুমুক্ত করেছিল। তবে এর আগে হানাদার বাহিনীর সাথে লড়াই করে নিহত হয়েছিলেন বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা। এদিকে স্বাধীনতার যুদ্ধে নিরীহ নিরস্ত্র শ্রীমঙ্গলের সাধারণ মানুষের পাশাপাশি শত শত চা শ্রমিককেও হত্যা করে পাকবাহিনী। এসব হত্যা কান্ডের নীরব সাক্ষী শ্রীমঙ্গলের ৫ টি বধ্যভূমি পড়ে আছে অযত্ন আর অবহেলায়। ফলে এ প্রজন্মের অনেকেই জানেনা এসব বধ্যভুমি সর্ম্পকে।
১৯৭১ সালের এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র আক্রমনের মুখে শ্রীমঙ্গল শহর ছেড়ে পালিয়েছিল পাক হানাদার বাহিনী। তবে এই মুক্তির স্বাদ নিতে গিয়ে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে চা বাগান ঘেরা এই জনপদের মানুষকে। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষনের পর তৎকালীন সংসদ সদস্য আলতাফুর রহমান, কমান্ডার মানিক চৌধুরী ও ফরিদ আহম্মদ চৌধুরীর নেতৃত্বে শ্রীমঙ্গলে গঠিত হয় মুক্তিবাহিনী। ২৩ মার্চ শ্রীমঙ্গল পৌরসভার সামনে পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে স্বাধীন বাংলার রক্তস্নাত পতাকা উত্তোলন করেন তৎকালীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতারা।
দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধ শেষে ৬ ডিসেম্বর শহরের ভানুগাছ সড়ক দিয়ে আবারও পৌরসভা চত্বরে প্রবেশ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। সেখানে স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়িয়ে বিজয়ের উল্লাসে মেতে উঠেন তারা। এদিকে স্বাধীনতা যুদ্ধে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে সেদিন মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিয়েছিল এ অঞ্চলের নিরীহ চা শ্রমিকরা। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন এক পর্যায়ে ৩০ এপ্রিল পাক হানাদার বাহিনী নির্মম ভাবে গণহত্যা চালায় তাদের উপর। যুদ্ধের ব্যাংকার বানানোর কথা বলে শহর সংলগ্ন ভাড়াউড়া চা বাগানে প্রবেশ করে সেখানে এক সঙ্গে ৫৫ জন চা শ্রমিককে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড় করিয়ে তাদের উপর গুলি চালায় পাক বাহিনী। সেদিন সম্মুখ যুদ্ধ করে মুক্তির স্বাদ নিয়ে আজও বেঁচে আছেন চা শ্রমিক মুক্তিযোদ্ধা পরাগ বাড়ই।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৫টি বধ্যভূমির মধ্যে অন্যতম এই ভাড়াউড়া বধ্যভূমিতে ১৯৯৭ সালে একটি স্মৃতিস্তম্ভ গড়ে তোলা হলেও আজও পূর্ণতা পায়নি। কোন সীমানা প্রাচীর না থাকায় বধ্যভূমির যায়গা বেদখল হতে চলেছে। অপরদিকে সাধু বাবার বটতলী হিসাবে পরিচিত বধ্যভূমিটি সম্প্রতি সংস্কার করে ‘বধ্যভূমি ৭১’ নামে গড়ে তোলা হলেও বধ্যভূমির কেন্দ্রবিন্দু সাধুবাবার বটতলী বিজিবি ক্যাম্পের ভেতরে থাকায় সেখানে বিশেষ দিবস গুলোতে সাধারণ মানুষ যাতায়াত করতে পারেনা। অপরদিকে এর পাশে চা বাগানের ছড়ার উপর একটি দৃষ্টি নন্দন স্মৃতিস্তম্ভ নির্মান করা হয়েছে। মূলত এটি বিনোদন কেন্দ্র হিসাবে সবার কাছে পরিচিত।
শহরের পূর্বাশা আবাসিক এলাকার বধ্যভূমিটির যায়গা বেধখল হয়েগেছে আরো আগেই। সেখানে নাম মাত্র একটি স্মৃতিস্তম্ভ থাকলেও সেটি এখন বাসা বাড়ীর দেয়ালের মাঝখানে। এলাকার অনেকেই জানেন না এটি মুত্তিযুদ্ধকালীন একটি গণকবর। একই দশা শহরের ওয়াপদা রেষ্ট হাউজ সংলগ্ন বধ্যভূমির। এদিকে উপজেলার সবচেয়ে বড় বধ্যভূমিটি রয়েছে সিন্ধুরখান ইউনিয়নে। এলাকাবাসী জানান, যুদ্ধের সময়ে সেখানে শত শত নিরীহ মানুষদের হত্যা করে ফেলে রাখা হতো এই বধ্যভূমিতে। সেখানে আজও গড়ে উঠেনি কোন স্মৃতিস্তম্ভ।