মুক্তকথা: ঢাকা ২৯জ্যৈষ্ঠ ১৪২৩বাংলা: ১২ই জুন ২০১৬ইংরাজী:
গত শুক্রবারে শুরু হওয়া পুলিশী অভিযানে এ পর্যন্ত সারা বাংলাদেশে ৫৩২৪ জন সন্দেহভাজন ও জঙ্গি অপকর্মকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই গ্রেপ্তারের মধ্যে ঢাকায় ৮৫জন ইসলামপন্থি জঙ্গিও রয়েছে। সুনির্দিষ্ট মামলায় এদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে বাংলাদেশ পুলিশ প্রধানের নামোল্লেখ করে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার খবর দিয়েছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মানের দৈনিক ইত্তেফাক খবর দিতে গিয়ে লিখেছে- সারাদেশে সাঁড়াশি
অভিযানের দ্বিতীয় দিনে ৪৮ জন জঙ্গিসহ দুইহাজার ৫৬৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। শনিবার সকাল থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত এদের গ্রেফতার করা হয়েছে। ‘স্কাই নিউজ’ বলেছে ৫৩২৪জন গ্রেপ্তার।
বাংলাদেশের পুলিশ প্রধান শহিদুল হক খান এ প্রসঙ্গে রয়টারকে বলেছেন যে জাতি হিসাবে সম্মিলিতভাবে আমরা এই জঙ্গিউত্থানকে দমন করবো। বিগত সপ্তাহে একজন হিন্দু পুরোহিত, একজন মন্দির সেবায়েত ও একজন
খৃষ্টান দোকানদারকে ছুরি-চাকু ব্যবহার করে হত্যা করা হয় এবং আইএস আইএস এই হত্যার দায় স্বীকার করে। একই সাথে, দেশে সন্ত্রাস দমনে সক্রিয় থাকা একজন উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীকে দিনে-দুপুরে খঞ্জর দিয়ে ঘা মারা হয় পরে গুলি করে হত্যা নিশ্চিত করা হয়।
গেল বছরের শুরুতেই এই ইসলামী জঙ্গিগুষ্ঠী গোপন হত্যা শুরু করে এবং দেখে দেখে অন্যুন ৩০জনকে হত্যা করে। তাদের হত্যার নমুনায় স্পষ্টই বুঝা যায় যে তাদের একটি হত্যা তালিকা রয়েছে এবং তালিকানুযায়ী বেচে বেচে হত্যা করছে। এই সব নিহত মানুষের মধ্যে রয়েছেন অধর্মি ব্লগারস, উদারপন্থি শিক্ষানুরাগী, ‘গে’ অধিকার প্রচারকর্মী, বিদেশী সহায়তা কর্মী, ভিন্ন মতাবলম্বী সংখ্যালঘু মুসলিম ও অন্যান্য ধর্মীয় গুষ্ঠীর মানুষ।
গেল সেপ্টেম্বরে সর্বপ্রথম আইএসআইএস নরহত্যার দায় স্বীকার করতে শুরু করা থেকে অদ্যাবদি ২১টি আক্রমণের দায় নিয়েছে। বাকীগুলোর অধিকাংশের বিষয়ে আলকায়দা দায় নিয়েছে বলে আমেরিকা ভিত্তিক ‘সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ’ বলেছে।
বাংলাদেশ সরকার অবশ্য উভয় জঙ্গিদলের উপস্থিতির বিষয় স্বীকার করতে রাজী নয় বরং অস্বীকার করেছেন। সরকার বলছেন এসব হত্যাকান্ড দেশে সৃষ্ট জঙ্গিবাদীদের কাজ।
আইএসআইএস এসব খুনোখুনির দায় নিয়ে দেশের ভেতরে একটি মেকি ধর্মীয় মৌলবাদের উত্থান হতে চলেছে এমন একটা কিছু মানুষকে দেখাতে চায় তাই চরম মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে এসব প্রচারণা চালাচ্ছে বলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম গেল মাসে রয়টারকে বলেছেন। তিনি আরো বলেছেন, এসব মানুষ হত্যাকান্ড দেশে গড়ে উঠা ধর্মীয় মৌলবাদী ইসলামী জঙ্গিগুষ্ঠীরা যে করছে তার যথেষ্ট নমুনা সরকারের হাতে রয়েছে।
‘জামাতুল মুজাহেদিন’ এবং ‘আনসার উল্লাহ বাংলাটিম’ এসব হত্যাকান্ডের পেছনে রয়েছে, তারা চায় বাংলাদেশে তাদের মনগড়া ইসলামী আইন মানুষের কাঁধে চাপিয়ে দিতে। বাংলাদেশ পুলিশ রয়টারের কাছে একথা বলেছে। অথচ বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ হল আধুনিক মুসলমান।
বিগত নভেম্বর থেকে আজ অবদি, বেআইনি ঘোষিত জামাতুল মুজাহিদিনের সন্দেহজনক ১০জন সদস্য গুলিতে নিহত হয়েছে বলে রয়টারকে পুলিশ আরো বলেছে।
ইসলামি ধর্মীয় গুষ্ঠীর মৌলবাদি এসব খুনিদের দমনে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা সংকল্পবদ্ধ। তিনি বলেছেন বিরুদ্ধবাদী রাজনীতিকদের গোপনে হত্যার এসব জঘন্য অপরাধের সাথে ইসলামী মৌলবাদি ও তাদের দোসরদেরই যোগাযোগ সুস্পষ্ট। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া অবশ্য প্রধানমন্ত্রী হাসিনার এই বক্তব্যকে বাতিল করে দিয়ে বলেছেন বিরুধী রাজনীতিকদের দমন করাই এই অভিযানের মূল লক্ষ্য।
গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশে শুক্রবার থেকে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জঙ্গি গ্রেফতারে সাঁড়াশি অভিযানে নামে। ৭ দিন এ অভিযান চলার কথা।