লন্ডন: ৪৪ বছর যাবৎ বাইসাইকেল চালিয়ে গ্রামবাসীকে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছেন জহিরন বেওয়া (৯০)। প্রতিদিন গ্রামে গ্রামে ঘুরে অসুস্থ দরিদ্র মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ায় তার মূল কাজ। জহিরন বেওয়া উপজেলার ভেলাবাড়ী ইউনিয়নের তালুক দুলালী গ্রামের মৃত সায়েদ আলীর স্ত্রী। উপজেলায় সবাই তাকে নানী বললেই চিনেন।
জানা গেছে, মহান মুক্তিযুদ্ধের চার বছর আগে স্বামীর মৃত্যুর পর তিন ছেলে আর দুই মেয়েকে নিয়ে সংসার সংগ্রামে নেমে পড়েন জহিরন। আট বছর আগে বড় ছেলে দানেশ আলীর (৬৮) মৃত্যুর পর ছোট ছেলে তোরাব আলীকে (৫৯) নিয়ে বেঁচে আছেন। ১৯৭৩ সালে জহিরন পরিবার ও পরিকল্পনা বিষয়ে ছয় মাসের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এরপর চুক্তিভিত্তিক মাসিক মজুরিতে কাজে যোগ দেন। নিজ গ্রামসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে বাইসাইকেল চালিয়ে গ্রামবাসীদের স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছেন জহিরন। সবশেষে পাঁচশ টাকা মাসিক মজুরি পেয়ে ১০ বছর চাকরি করে অবসরে যান। আর অর্জিত অভিজ্ঞতা দিয়ে বাড়িতে বসে না থেকে আবারো গ্রামবাসীর স্বাস্থ্যসেবায় নেমে পড়েন জহিরন বেওয়া।
তিনি জানান, জ্বর, মাথা ব্যথা, বমি ও শারীরিক দুর্বলতাসহ অন্যান্য রোগের চিকিত্সাসেবা দিয়ে থাকেন। চিকিত্সার জন্য তাকে কোনো অর্থ দিতে হয় না। শুধু ওষুধের জন্য টাকা দিতে হয়। এখান থেকে প্রতিদিন গড়ে একশ পঞ্চাশ টাকা আয় হয় তার। তা দিয়েই কোনো রকম চলছে তার সংসার। উপজেলার ৩০টি গ্রামে প্রায় দুই হাজারের বেশি পরিবারের সঙ্গে রয়েছে যোগাযোগ। প্রতিদিন বাইসাইকেল চালিয়ে কমপক্ষে সাতটি গ্রামের ৭০টি বাড়িতে রোগীর খোঁজখবর নেন তিনি। গত ৫০ বছরে কোন রোগে আক্রান্ত হননি তিনি এমনটাই দাবি তার।
ভেলাবাড়ী রহমত আলী, চন্দনপাট গ্রামের জিলহাজ আলী জানান, ৪৪ বছর ধরে জহিরন বেওয়া বাইসাইকেল চালিয়ে গ্রামবাসীদের স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন। জহিরন বেওয়া গ্রামের গরিব মানুষের ডাক্তার। অনেক গরিব মানুষ তার কাছে বিনামূল্যে ওষুধ নিয়ে থাকেন। আর বড় ধরনের অসুখ বিসুখ হলে তিনি হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন বলে জানান তারা।
জহিরন বেওয়ার ছোট ছেলে তোরাব আলী (৫৯) জানান, বার বার চেষ্টা করে যাচ্ছেন মাকে বাইসাইকেল চালিয়ে বাইরে না যেতে। কিন্তু কোনো বাধাই মানছেন না তার মা। -ইত্তেফাক