1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
দুনিয়াটা রং বদলায়! আমরাও বদলে যাবো - মুক্তকথা
বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:০৪ পূর্বাহ্ন

দুনিয়াটা রং বদলায়! আমরাও বদলে যাবো

সংবাদদাতা
  • প্রকাশকাল : সোমবার, ২০ আগস্ট, ২০১৮
  • ৭৮৯ পড়া হয়েছে

[fvplayer src=”http://muktokotha.com/wp-content/uploads/2018/08/titurulis25.m4v” splash=”http://muktokotha.com/wp-content/uploads/2018/08/image8-1.jpeg” width=”1080″ height=”1920″]

হারুনূর রশীদ।। 
গানতো বুঝতেই পারিনি। এটি অবশ্য আমারই ব্যর্থতা। সুদীর্ঘকাল ধরে এখানে থেকেও তাদের সঙ্গীত চর্চ্চার বিষয়ে খুবই অজ্ঞ। আর জ্ঞাত হবোই বা কিভাবে? কাজ নিয়ে এখানকার বসবাসকারী সকল বিদেশীরই একই অবস্থা। কাজ নিয়েই ব্যস্ত। সন্তানাদির খবর নেয়াই যায়না। সংস্কৃতি চর্চ্চার সময় কোথায়? তাও আবার বিদেশী সঙ্গীত। নিজের ভাষা-সংস্কৃতির হলে না হয় শত কষ্টেও এ পথে পা রাখার চেষ্টা করা যেতো। তাই ইংরেজী সংগীত কি বলে তার বহু কথাই এখনও বুঝিনা। শুধু বাদ্যযন্ত্রের তাল শুনেই মাথা নেড়ে তৃপ্তি প্রকাশ করি।
যতটুকু বুঝি গানের, ততটুকু আমার মন ও মননে কোন আবেদন সৃষ্টি করতে পারে না। খাঁটী সত্য কথা হলো, এর চেয়ে আমাদের পল্লী-ভাওয়াইয়া শুনেই আমি বিনোদিত হই বেশী। গানের কথা না বুঝলেও অনুষ্ঠানটি যে আমার সেই আত্মীয়সহ বৃটেনে জীবনযুদ্ধে নাভিশ্বাস উঠা কর্মব্যস্ত বাঙ্গালীর হাফছেড়ে একটু অনাবিল বিনোদন আর প্রশান্তির আয়োজন তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি। আরো বুঝতে পেরেছি নিজেরটা পারি না তবে অন্যেরটা না জানলেও তার কদর বুঝি, এ দেখানোর মাঝেও কিছুটা বিনোদন আছে। নিজের সংস্কৃতি চর্চ্চার সুযোগ যারা জীবনে পায়নি কেবলমাত্র এরাই এমন ধরনের বিনোদনে বিনোদিত হতে পারে। আর এমন শ্রীমান-শ্রীমতিরাই বদলে যায় চিরতরে আপনা থেকে।

বাল্যের শুনা গান-‘দুনিয়াটা রং বদলায়, রং বদলায়…।’ এই রং বদলানো মানে পরিবর্তন। পরিবর্তন বা বদলে যাওয়া এ বিশ্বের নিয়ম। বিশ্ব প্রকৃতিতে সবকিছু প্রতিনিয়ত বদলে গিয়ে নব নব রূপে আবির্ভুত হয়। আমরা আজকে যে সূর্য্য দেখছি, কাল সে সূর্য্য আর থাকছে না। আগামীকালের সূর্য্য নতুন এক সূর্য্য। বিজ্ঞান থেকে আমরা জানতে পেরেছি সূর্য্যের মাঝে যে আগুন জ্বলে সে আগুনের উৎস হিলিয়াম গ্যাস। হিলিয়াম নামের এক প্রকার গ্যাস সেখানে অহর্নিশি জ্বলছে। সে জ্বলা বিরামহীন। বিজ্ঞানীদের কাছে হিসেব আছে প্রতি সেকেণ্ডে সেখানে কি পরিমাণ গ্যাস জ্বলছে। এ থেকে আমরা বুঝতে পারি, কাল যে সূর্য্যকে আমরা দেখেছি আজকের সূর্য্য সে সূর্য্য নয়। কারণ রবির জ্বলার উৎসে যে পরিমাণ গ্যাস গত কাল ছিল আজ তার পরিমাণ কমে গেছে। ফলে, কাল সূর্য্যের জ্বলায়, তাপের যে মাত্রা ছিল আজকের মাত্রা ঠিক তা নয়।
আর একটি উদাহরণ দিয়ে বলার চেষ্টা করি। আমার নাতনী সোহাঈরা চৌধুরী। জন্ম তার ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে। আজ সে ২বছর ৮মাস বয়সে এসে দাঁড়িয়েছে। তার বয়সের বেড়ে যাওয়া স্থির নয়। প্রতি মূহুর্তে সে বড় হচ্ছে। বড় হচ্ছে অর্থই হলো সে পরিবর্তিত হচ্ছে। তার এই পরিবর্তনকে আমরা ‘বড় হওয়া’ বলে দু’টি শব্দ সমষ্টি দিয়ে অন্যকে বুঝিয়ে থাকি।
বলছিলাম, পরিবর্তনের কথা। পরিবর্তন, আমাদের দেখা বস্তু জগতের সকল স্থান ও স্তরে পলে পলে ঘটে যাচ্ছে। এ কাজটি সবকিছুতেই খুব সুক্ষভাবে ক্রিয়াশীল। কবির ভাষায় বলতে গেলে, হে পরিবর্তন তুমি ভূবনে ভূবনে কাজ করে যাও গোপনে গোপনে।

২৫তম বিবাহ বার্ষিকীর কুশীলবেরা। ছবি-মুক্তকথা

বিবাহ বার্ষিকী অনুষ্ঠানের উপস্থিতি। ছবি-মুক্তকথা

আমার পর্যবেক্ষনে শুধু একটি জিনিষে আমি কোন পরিবর্তন দেখি না। আর সে বস্তু হল ‘মাটি’। বিশ্বের সবকিছু শুরু থেকে শেষাবদি পরিবর্তিত হয়ে মাটিতে মিশে যায়। বা বলতে পারি মাটি হয়ে যায়। বস্তু জগতের সবকিছুর জন্ম বা উৎস সেই মাটি। তাই মাটি মানুষের কাছে এতো পূজনীয় পবীত্র, এতো শ্রেষ্ট।
পরিবর্তনকে নিয়ে এতো বড় আকারের মুখবন্ধ রচনার একটি মাত্র কারণ প্রবাসে আমাদের মানুষের বদলে যাওয়া। 
অবশ্য এ বদলে যাওয়া আমার কোন আবিষ্কার নয়। বহু বহু আগেই সমাজের মানুষ এই পরিবর্তনকে লক্ষ্য করে আসছে। বিজ্ঞানীগন অনেক অনেক আগে এ পরিবর্তন-বিবর্তনের উপর সুদীর্ঘ গবেষণায় তাকে সজ্ঞায়িত করে গেছেন। 
সেই বদলে যাওয়ার পথ ধরে প্রবাসে আমাদের মানুষ যারা আছে তারাও বদলে যাচ্ছে। অবশ্য বদলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক ও বিজ্ঞানসম্মত। আমি না চাইলেও আমাকে বদলাতে হবে। কারণ আমার চারপাশে যে অবস্থা বিরাজমান সে অবস্থাই আমাকে বদলে দেবে আমার অজান্তে।

সেদিন মানে গতকাল ১৯শে আগষ্ট, আমার সুসম্পর্কের ছোটভাই ও ভায়রা ভাইয়ের এক অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ পেয়ে সস্ত্রীক গিয়ে উপস্থিত হলাম। হলঘরে ঢুকতেই হাতের বায়ে সামনের দিকে ডানে শেষ প্রান্তে দুই ইংলিশ পরিবারকে চোখে পড়লো। ছোট্ট একটি হলঘরে অনুষ্ঠানের আয়োজন ফলে আমন্ত্রিতদের ঘরের বাইরেও দাঁড়িয়ে থেকে গল্পগুজব চালিয়ে যেতে দেখি। হলঘরের ভেতরে কিছু উষ্ণতা উপলব্দি হয়। যারাই যেখানে দাঁড়িয়ে বা বসে আলাপ-আলোচনায় বিনোদিত সময় কাটাচ্ছিলেন তাদের সকলকেই মিশ্রভাষায় কথা বলতে দেখলাম। তাদের কথা-বার্তার দু’একটি শব্দ এখানে তুলে ধরলে পাঠক সকলেই নিখরচায় কিছুটা হলেও বিনোদিত হতে পারবেন।

২৫তম বিবাহবার্ষিকীর হোতা দম্পতি। ছবি-মুক্তকথা

যেমন- ‘ফাইন, বালা আছইন তো’,
‘আমিতো আপনারে ফোন দিছি অইলে বাট ন ওয়ান রিসিভ দি কল’।
‘হ্যালো, হাও আর ইউ ভাইসাহেব?’। ইত্যাদি।
অনেক সে সব কথা। 
খাবার পরিবেশনের পর খাবারের টেবিলেও সেই একই নতুন গড়ে উঠা সংস্কৃতির বদলে দেয়ার ঘন্টাধ্বনি। একজন বললেন, ‘নো নো, আই হেভ ডান ইট, বাট আপনিতো ওখানে ছিলেন না।’
আরেক টেবিলে আলাপ করছিলেন, ‘ভে…রি টেস্টি ফুড, কাচ্চি বিরাণীটা টেস্ট করে দেখুন।’ এই ভোজানুষ্ঠানে কিশোর-যুববয়সীদের উপস্থিতি ছিল সংখ্যানুপাতে কম।

সান্ধ্যভোজের পর একটি গান পরিবেশন করা হলো। উপস্থিত দুই পরিবার ছাড়া সকলেই বাঙ্গালী। ৯৭ভাগ সিলেটী। কিন্তু শুরু করা হলো একজন ভিন্নভাষী মহিলাকে দিয়ে ইংলিশ গান। গানতো গানই। গানের বিপক্ষে কারো বলার কিছু নেই। কিন্তু যারা আয়োজক তারা পারতেন, অন্ততঃ শুরুটা করতে পারতেন একটি বাংলাগান দিয়ে। করেননি। কেনো করেননি সে তারাই ভাল বলতে পারবেন। আমার কাছে মনে হয়েছে নিজেকে ক্ষয়ে ক্ষয়ে বদলে যাওয়ার সেই বিবর্তনমুখী ধারা।
একটু ভিন্ন মাত্রার এই অনুষ্ঠানের আয়োজকরা বাঙ্গালী সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলের মানুষ। তারা পারতেন নিজেদের বিশ্বনন্দিত সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে। কিনতু করেননি। এতেতো এটিই বলা যায় যে নিজেদের সংস্কৃতির প্রতি তাদের আগ্রহ আগের মত নেই। ধীরে ধীরে সে আগ্রহ কেবলই নিম্নমুখী। আশ-পাশের নতুন পারিপার্শিকতার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। নতুন দেখা সংস্কৃতিকে লালন করার এক কুলনাশী অভিসার।
এভাবেই একদিন আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি লোপ পেয়ে এখানে বীজ ফুটে গজে উঠবে নব্যনতুন সংস্কৃতি। একদিন তার শীষ মহীরূহ হয়ে দাঁড়াবে। আমরা হারিয়ে যাবো সেদিন। 
আমরা হয়ে যাবো পথাহারানো কুলহারা কুলনাশা কিছু প্যারীলাল রায়। যাদের কেউ কোনদিন স্মরণ করবে না। বদলে যাবে আমাদের মানুষ ও সমাজ। অথচ আমাদের পূর্বজনেরা চেয়েছিলেন নিজেদের রক্তবীজে ফুটে উঠা কিছু জীবাত্মাদের মাথা তুলে দাঁড়াবার প্রতিষ্ঠা দিতে। উদার সেই মানবিকতায় জীবন বাজী রেখে তারা দেশ ছেড়ে শতকষ্টে হাজার হাজার মাইল দূরের বিদেশ-বিভূঁইয়ের কোন এক সাগরতীরে এসে তরী ভিড়িয়েছিলেন। তারা সেদিন কল্পনায়ও ভাবতে পারেননি তাদের কুলজরা এভাবে হারিয়ে যাবে।
লণ্ডন সোমবার, ২০শে আগষ্ট ২০১৮সাল

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT