একটি সামাজিক আন্দোলন প্রয়োজন" />
হারুনূর রশীদ: লন্ডন ২১শে জুন ২০১৬: ৫.৩৭::
আমাদের কি হয়েছে বুঝতে পারিনা। এই সমাজ সংস্কৃতি, এই সভ্যতা নিয়ে কতই না গর্ব করে কথা বলি। কোন সভাসমিতিতে মাইক হাতে পেলে তো আর রক্ষা নেই যদি বক্তা রাজনীতি অঙ্গনের মানুষ হন। বাঙ্গালী সমাজ সাহিত্য সংস্কৃতি নিয়ে আমাদের মুখে খই ফোটে। আমাদের হাজার বছরের সংস্কৃতি। আমরা বাঙ্গালী। চর্যাপদ থেকে শুরু করে পালি মাড়িয়ে আজ আমরা এই অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছি। কিন্তু এইকি সে অবস্থা?
এক কেজি গরুর মাংসের জন্য ফাহিম নামের ৮বছরের একটি শিশুকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে গত মঙ্গলবার ১৪ই জুন। আলতাফ মাহমুদের কন্যা শাওন মাহমুদ তার ফেইচবুক স্টেটাসে ঘটনাটির বিবরণ দিয়েছেন। তারই সেই বিবরণের উদ্ধৃতি দিয়ে অনলাইন চ্যানেল আই ২০শে জুন ঘটনাটির খবর প্রকাশ করেছে। কি লিখেছেন শাওন তা’হলে? শাওন লিখেছেন যে সাতক্ষীরা কুশখালি গ্রামের এক মুজিবর রহমান ১৪জুন বাজার থেকে এককেজি গরুর মাংস কিনে প্রতিবেশীর নাতি ৮বছরের এক শিশু সন্তান ফাহিমকে দিয়ে তার বাড়ীতে পৌছে দিতে বলেন। শিশু ফাহিম মাংস নিয়ে মুজিবরের বাড়ীতে গিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ দেখে বন্ধ দরজার সমনেই মাংসের পুটলা রেখে নিজের বাড়ীতে চলে আসে। একপর্যায়ে কুকুর এসে সেই মাংস টানাটানি করে খেয়ে ফেলে। বাড়ী ফিরে এসে মুজিবর মাংসের এ অবস্থা দেখে ফাহিমকে ডেকে পাঠায়। ফাহিম এসে সত্য ঘটনাটি বলার পর মুজিবর ও তার পরিবার বেদম পেটাতে থাকে ফাহিমকে। ফাহিমের শরীরের বিভিন্ন স্থান ফেঁটে রক্ত ঝরতে থাকলে ফেবিকল আঠা দিয়ে ফাটল জোড়া দেয়া হয়। কিন্তু একসময় ফাহিমের গা ফুলে উঠতে থাকলে তাকে একটি বাক্সে ঢুকিয়ে রাখা হয়। সেই বাক্সের ভিতরেই ফাহিমের মৃত্যু ঘটে। তার মৃতদেহ লুকাতে মুজিবররা পাশের পাটক্ষেতে বাক্সটি ফেলে দেয়। পরের দিন ১৫ই জুন ফাহিমের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয় এবং ১৭জুন মুজিবরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ফাহিমের বাবা প্রবাসী তাই সে মায়ের সাথে নানাবাড়ী থাকতো।
মুসলমানদের রমজানের মাস। সমাজের নীপিড়িত মানুষের দুঃখ দুর্দশা নিজের মন দিয়ে বাস্তবে উপলব্দি করার তাগিদে মুসলমানরা রোজা রাখেন। ওই পশু মুজিবর নিশ্চয়ই রোজা রাখার লক্ষ্যে শেষ রাতের ভুরিভোজের জন্য গরুর মাংস খরিদ করেছিল। এই তার কাছে রোজার মরতবা? এরা পাষন্ড! ধর্মকর্ম এদের লেবাছ। লোক দেখানো! এককেজি মাংসের জন্য একটি শিশুকে মেরে ফেলতে হবে? কে কার জবাব চাইবে আর কে ই বা জবাব দেবে। একটি লোভী পশুর হাতে শিশু ফাহিমকে নৃশংসভাবে খুন হতে হলো। আমাদের এই পাশবিকতা থেকে বেরিয়ে আসার উপায় কি? শুধু আইন আর বিচার দিয়ে কি এসব পাশবিকতা বন্ধ করা যাবে? না কি একটি সামাজিক আন্দোলনের প্রয়োজন?
হয়তো অনেকেই বলবেন একজন অধম মুজিবরের পশুত্ব দিয়ে গোটা জাতির বিচার করা পাগলামো ছাড়া আর কি? হয়তো তাই! কিন্তু প্রশ্ন কি এখানেই শেষ হয়ে যায়?