কমান্ডো অভিযান চালিয়ে
মাত্র ১১ মিনিটে জিম্মি সঙ্কটের অবসান" />
মুক্তকথা: ১১.২০: লন্ডন শনিবার ২রা জুলাই ২০১৬::
গুলশানের জিম্মি সংকট নিয়ে ইত্তেফাক সর্বশেষ যে খবর দিয়েছে তাতে লিখেছে, গুলশান ৭৯ নম্বর সড়কে হলি আর্টিজান বেকারি ও এর দোতলায় অবস্থিত ‘ও’ কিচেন বলে খ্যাত স্পেনিশ রেস্টুরেন্টে কমান্ডো অভিযান চালিয়ে মাত্র ১১ মিনিটে জিম্মি সঙ্কটের অবসান ঘটিয়েছে বাংলাদেশের কমান্ডো বাহিনী। ইত্তেফাক আরো লিখছে-এ সময় ১৩ জিম্মিকে জীবিত উদ্ধারের পাশাপাশি ৬ হামলাকারীকে হত্যা এবং ১ জন হামলাকারীকেও জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর কমান্ডো ঘটনাস্থলে আসার পর সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে শুরু হয় জিম্মি সঙ্কটের অবসানের অভিযান।
গুলশানের সন্ত্রাসী ঘটনা বাংলাদেশকে নতুনকরে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে নিয়ে এলো। দুনিয়ার বাঘা বাঘা সব সংবাদ সংস্থা, টিভি চেনেল আর সংবাদপত্রে বাংলাদেশ বিশেষ গুরুত্বসহকারে স্থান করে নিল আবারও। অবশ্য এর আগেও বিশ্ব সংবাদ মাধ্যমে বাংলাদেশ এসেছে এবং সময়ের বিশেষ মোড়ে মোড়ে প্রায়ই আসে। তবে ওই আসা আর এ দফার আসায় বিস্তর ফারাক আছে।
বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ একসময় ছিল দরিদ্র আর প্রাকৃতিক দূর্যোগের দেশ হিসাবে পরিচিত। তার পর ধীরে ধীরে এ পরিচয়ে পরিবর্তন আসে। বাংলাদেশ হয়ে উঠে গার্মেন্টস শিল্পের আধা মধ্যম আয়ের দেশ। খারাপ ছিল না এ পরিচয়। বিদেশীরা বেশ আনন্দচিত্তেই ব্যবসা বাণিজ্যের সম্ভার নিয়ে বাংলাদেশে তাদের দোকান সাজাতে শুরু করেছিল। এই অস্বাভাবিক ঘটনা তাদের সেই প্রফুল্ল চিত্তে অনেকটাই ভয় ঢুকিয়ে দেবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। ঘটনাতো ছোটখাটো নয়, একেবারে বলতে গেলে দল বেঁধে কামান-বন্দুক নিয়ে সুসংরক্ষিত একটি বিশেষ এলাকার সুপরিচিত একটি দোকানে হামলা এবং পরপরই ২০জন মানুষকে দেখে দেখে ছুরি-চাকু দিয়ে জবাই করা। জবাইয়ের আগে তাদের জিজ্ঞেস করা তারা কলেমা বলতে পারে কি-না! এ সবই একটি বিশেষ আঙ্গিকের একটি বিশেষ ঘরানার পরিচয় বহনকারী।
বাংলাদেশের ইত্তেফাক থেকে শুরু করে ভারতের আনন্দবাজার হয়ে এই সংবাদ কোথায় যে যায়নি তা হয়তো খুঁজে বের করতে হবে। বাংলাদেশের এটিএন বাংলাটিভি থেকে শুরু করে বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা সহ রুশটিভি, চায়না টিভি, ফরাসী টিভি, জর্মনটিভি, ইটালিয়ান টিভি সর্বত্র ছড়িয়ে পরে সেকেন্ডের মধ্যে। ঘন্টায় ঘন্টায় খবর আসতে থাকে ওই রেস্তোঁরা, গুলশান আর জিম্মিদেরকে নিয়ে।
ভারতের আনন্দবাজার খুব রসিয়ে লিখেছ এভাবে-খাস রাজধানী ঢাকারই এক অভিজাত রেস্তোরাঁয় হামলা চালাল এক দল বন্দুকবাজ। গুলশন এলাকার হলি আর্টিজান বেকারি নামে ওই রেস্তোরাঁয় প্রায় ২০-২৫ জনের সশস্ত্র একটি দল ঢুকে পড়ে নির্বিচারে গুলি চালায়। শুক্রবার রাত সওয়া ন’টা নাগাদ এই ঘটনা ঘটে। রাতভর চলল গোলাগুলি। প্রায় ১২ ঘণ্টার দম বন্ধ করা আতঙ্কের প্রহর পেরিয়ে অবশেষে শনিবার সকালে জঙ্গি কবল থেকে মুক্ত হল ঢাকার গুলশন এলাকার স্প্যানিশ রেস্তোরাঁ।….গুলির লড়াইয়ে বনানী থানার ওসি সালাহউদ্দিন আহমেদ এবং রবিউল নামে এক অতিরিক্ত কমিশনার নিহত হয়েছেন বলে গভীর রাতে সংবাদ সংস্থা পিটিআই এই খবর দিয়েছে। জখম হয়েছেন অন্তত ১০ জন পুলিশ কর্মী।
গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত পৌনে ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটার পরপরই সেখানে বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানরা উপস্থিত হন এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সাভার ও সিলেট থেকে অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্যারা কমান্ডো আনা হয়। এর মধ্যে নৌবাহিনীর ৩০ জন কমান্ডো উপস্থিত ছিলেন। তবে এখনও সনাক্ত করা যায়নি এরা কারা? মূলতঃ কোন উদ্দেশ্যে তারা এমনতরো জাহেলি একটি ঘটনা ঘটালো তা এখনও পরিষ্কার নয়। তবে এটি তো ঠিক যে এই মধ্যযুগীয় নরপিশাচসুলভ আইয়ামে জাহেলি ঘটনা দেশের অগ্রগতিকে কিছুটা হলেও পিছিয়ে দিল। দেশের গড়ে উঠা ভাবমূর্তিতে কিছুটা আঁচড় লাগিয়ে দিল।
অপারেশন ‘থান্ডার বোল্ড’ দিয়ে জীবিত মাত্র একজন অপরাধীকে ধরা সম্ভব হয়েছে যদিও ২০জন নিরপরাধ মানুষের হত্যা আটকানো যায়নি। ইত্তেফাকের খবরানুযায়ী ৮জন জঙ্গি রেষ্টুরেন্টে আক্রমণ চালায়। তাদের মধ্যে ৬জন মারা পড়ে ১জন ধরা পড়ে, বাকী ১জনের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। ওই একজন কোথায় গেল?
শেষ কথা, মনে হয় দুনিয়ার সকলেই এখন অপেক্ষায় আছেন, এসব দুষ্কৃতিকারীদের নেকাবমুক্ত আসল চেহারা জানার আশায়। আশাকরি বাংলাদেশের পুলিশ মানুষের সে আশা পুরণে স্বার্থক হবে এবং আসল দুষ্কৃতিকারীদের মুখোশ উন্মোচন করে দিয়ে ও কঠোর শাস্তির বিহিত করণে সফল হবে।