মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে বিরল প্রজাতির একটি গন্ধগোকুল উদ্ধার করে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে অবমুক্ত করা হয়েছে। গত শনিবার রাত ৯টার দিকে কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের পতনউষার গ্রামের প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম চৌধুরীর বাড়ি থেকে বিলুপ্ত প্রজাতির গন্ধগোকুলটি উদ্ধার করা হয়। রাতেই এটাকে লাউয়াছড়া বনে ছেড়ে দেন বন বিভাগের কর্মীরা।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, শনিবার সন্ধ্যায় শিক্ষক আমিনুল ইসলাম চৌধুরীর ঘরে দৌড়ে ঢুকে পড়ে গন্ধগোকুলটি। পরে বাড়ির লোকজন মাছ ধরার জাল দিয়ে সেটা আটক করে স্থানীয় কমলগঞ্জ জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটি সভাপতি মনজুর আহমদ আজাদ মান্নাকে অবগত করলে তিনি বিষয়টি মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগকে জানান। খবর পেয়ে মৌলভীবাজারের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের লাউয়াছড়া বন রেঞ্জ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে বন্যপ্রাণী টিমের একটি দল শনিবার রাতে প্রাণীটিকে উদ্ধার করে। রাতেই এটিকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে অবমুক্ত করা হয়।
কমলগঞ্জ জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটি সভাপতি মনজুর আহমদ আজাদ মান্না জানান, আমাকে জানানোর পর বিষয়টি বন বিভাগকে জানাই এবং শিক্ষককে জানাই আপনারা এটাতে আঘাত করবেন না। বন বিভাগের লোকজন এসে এটা নিয়ে যাবে। তিনি বলেন, এর বৈজ্ঞানিক নাম চধৎধফড়ীঁৎঁং যবৎসধঢ়যৎড়ফরঃঁং। এরা নিশাচর প্রাণী, মূলত এরা ফল খেকো হলেও কীটপতঙ্গ ও শামুক খেয়ে জীবনযাপন করে। এ ছাড়া এরা ইঁদুর খেয়ে ফসলের উপকার করে।
বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, মৌলভীবাজার এর বনরেঞ্জ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, প্রাণীটি সুস্থ থাকায় রাতেই লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ পৌরসভার যোদ্ধাপুর-নাগড়া গ্রামের সনাতনী ধর্মাবলম্বী লোকদের সাথে কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো: জুয়েল আহমদ এর এক মতবিনমিয় সভা গত শনিবার রাত ৮টায় স্থানীয় দুর্গামন্ডপ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়।
কমলগঞ্জ পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর দেওয়ান আব্দুর রহিম মুহিনের সভাপতিত্বে ও উপজেলা যুবলীগ সদস্য জহির আলম নান্নুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো: জুয়েল আহমদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন কমলগঞ্জ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্যামল চন্দ্র দাশ, সাধারণ সম্পাদক প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ, জেলা জাতীয় হিন্দু মহাজোটের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত দেবরায় সঞ্জয়, কমলগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি বিশ্বজিত রায়, যুবলীগ নেতা আলাল আহমদ, আফরোজ আলী। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মন্দির কমিটির নেতা সুসেন্দ্র মালাকার, জয়ন্ত মালাকার প্রমুখ।
সভায় কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো: জুয়েল আহমদ তাঁর ব্যক্তিগত তহবিল থেকে মন্দিরের উন্নয়নে নগদ ৫০ হাজার টাকা প্রদান করেন।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের আদকানি-খাপার বাজার এলাকায় এক কি.মি. রাস্তায় নি¤œমানের কাজ চলছে। রাস্তা সংস্কার ও কার্পেটিং এর জন্য খনন না করেই মাটি ও পানির উপর নিম্নমানের ইটের খোয়া ফেলে জোড়াতালি দিয়ে চলছে কার্পেটিং কাজের প্রস্তুতি। স্থানীয় চেয়ারম্যান আপত্তি জানালেও তা দেখার কেউ নেই। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সড়কের কাজের বেহাল দশায় দ্রুত সময়ে রাস্তা ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে দেখা যায়, এলজিইডি’র তত্ত্বাবধানে আধকানি-খাপার বাজার এলাকায় এক কি.মি. রাস্তার সংস্কার ও কার্পেটিং এর কাজ চলছে। তবে কাজের এলাকায় কোথাও কোন সাইনবোর্ড নেই। অর্ধ কিলোমিটার রাস্তা খনন করে কনক্রিট ও বালি ফেলার কথা। অবশিষ্ট অর্ধ কিলোমিটার রাস্তায় কনক্রিট ও বালি দিয় কার্পেটিং করার কথা। বাস্তবে এসব কিছুই হচ্ছে না। প্রায় ৭৬ লাখ টাকা ব্যয়ে কাজ সম্পন্ন হচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে গ্রাম্য এলাকায় থাকায় সংশ্লিষ্টরা এসব বিষয়ে দেখভালের কোন গুরুত্ব মনে করছেন না। ফলে ঠিকাদার তার ইচ্ছেমতো কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। রাস্তা খনন করে বালি ও কনক্রিট দেয়ার কথা থাকলেও তার কিছুই হচ্ছে না। রাস্তায় মাটি ও জমে থাকা পানির উপরে অতি নি¤œমানের কনক্রিট ফেলে রুলার করা হচ্ছে। নি¤œমানের কাজ হওয়ার কারনে স্থানীয় চেয়ারম্যানও আপত্তি জানিয়েছেন।
আদমপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবদাল হোসেন বলেন, রাস্তায় যেভাবে কাজ হওয়ার কথা সেভাবে কাজ হচ্ছে না। হাফ কি.মি. রাস্তা ভেঙ্গে আর অবশিষ্ট হাফ কি.মি. রাস্তায় সংস্কার ও কার্পেটিং হওয়ার কথা। তবে এভাবে কাজ হচ্ছে না এবং এলজিইডি অফিসের কেউও তদারকি করছেন বলে মনে হয় না। ফলে অল্পতেই রাস্তাটি আবারো ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে রাস্তার কাজের ঠিকাদার হিমাংসু দেব এর মোবাইল নাম্বারে কল দিয়ে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
অভিযোগ বিষয়ে এলজিইডি কমলগঞ্জ অফিসের উপসহকারী প্রকৌশলী রাকিবুল ইসলাম বলেন, ৭৬ লাখ টাকা ব্যয়ে রাস্তার কাজ চলমান রয়েছে। কাজটি আমি তদারকি করছি। কাজে কোন অনিয়ম হচ্ছে না। যথাযথভাবেই কাজ হচ্ছে। তবে ঠিকাদার ভারতে চলে যাওয়ায় তাকে পাওয়া যাচ্ছে না।
আলোয়-আলো প্রকল্প চা বাগানের শিশুদের বিকাশে এক নবদিগন্ত সূচনা করেছে। ২০১৯ সাল থেকে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার ২টি হাওর ও ৩০টি চা বাগানে এই কার্যক্রম চলমান রয়েছে। চাইল্ডফান্ড কোরিয়ার অর্থায়নে ও এডুকো বাংলাদেশের সহযোগিতায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা প্রচেষ্টা, আইডিয়া, এমসিডা ও বিটিএস আলোয়-আলো প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।
তাদের কর্মএলাকা কমলগঞ্জের কুরমা চা বাগানে দেখা যায়, চা শ্রমিক শিশুদের শিক্ষা গ্রহণে চা বাগান পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয়টি জীর্ণশীর্ণ। শিশুদের শিক্ষাদানে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা নেই। প্রচেষ্টা পরিচালিত শিশুদের জন্য গড়ে ওঠা আলোয়-আলো প্রকল্প-প্রাক শৈশব বিকাশে সাড়া জাগিয়েছে। পাল্টে দিয়েছে পূর্বের চিত্র। অবকাঠামো উন্নয়নসহ শিশুদের খেলাধুলা, নাচ গান ও শিক্ষা প্রদানের কারনে মনোযোগী হয়ে উঠছে এবং পাশাপাশি তাদের মা-বাবাও নিশ্চিন্তে শিশুটিকে রেখে কাজে যেতে পারছেন।
বিদ্যালয়ের দিবাযত্ন কেন্দ্রে শিশুরা শিক্ষা গ্রহন ও স্নাতকত্ব লাভের মাধ্যমে ইসিডি সেন্টারে(শিশু কানন কেন্দ্র) শিক্ষা গ্রহণ করছে। শিশুদের জন্য অবকাঠামে, স্থানীয় শিক্ষক, শিক্ষকের প্রশিক্ষণ, শিশু কানন পরিচালনায় শিশু শিক্ষার্থীকে শিক্ষা উপকরণ এবং ৩২টি বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেনি পর্যন্ত শিক্ষার্থীর মধ্যে উপকরণ প্রদান করা হয়। ১৫১ জন শিক্ষককে প্রশিক্ষণ ও ৩২টি বিদ্যালয়ে লাইব্রেরী স্থাপন করা হয়।
৩২টি কমিউনিটি ভিত্তিক শিশু সুরক্ষায় কমিটি গঠন ও ৩২টি এডলোসেন্ট এন্ড ইয়থ ক্লাব, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক ৩২টি কমিটি দূর্যোগে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে। শিশুদের আনন্দের সঙ্গে পড়াশোনায় শারিরিক বিকাশে মায়েদের পুষ্টি বিষয়ক সভা, বাড়ির আঙ্গিনায় সবজি চাষে প্রশিক্ষণ এবং ওয়াটার সেনিটেশন ও হাইজিন এর জন্য ৩০টি ডিপ টিউবওয়েল, ৯১টি স্যালো টিউবওয়েল ও ১২৪টি লেট্রিন স্থাপন করা হয়েছে।
কুরমা চা বাগান বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুনীল কুমার পাল বলেন, আলোয়-আলো প্রকল্পের কার্যক্রমে প্রাক-প্রাথমিকের পূর্বে শিশুদের খেলাধূলা, নাচ গান ও শিক্ষা প্রসংশনীয় উদ্যোগ। এতে পরবর্তী ক্লাস গুলোতে শিশুরা শিক্ষায় আগ্রহী হচ্ছে।
আলোয়-আলো প্রকল্পের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর হামিদুল ইসলাম জানান, চা বাগানের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শিশুদের বিকাশে এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। প্রচেষ্টা এর নির্বাহী পরিচালক আলী নকি খান বলেন, চা বাগান ও হাওর এলাকার শিশুদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, মানসিক বিকাশ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে এই প্রকল্প ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে। দুর্যোগে ঝুঁকি হ্রাসকরনে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
এ ব্যপারে কমলগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসার সাইফুল ইসলাম তালুকদার বলেন, আলোয়-আলো প্রকল্প চা বাগানে শিশুদের বিকাশ ও শিক্ষার উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। এতে শিশুদের মধ্যে শিক্ষা গ্রহনে আগ্রহ বাড়ছে।