হারুনূর রশীদ।।
ছোট বেলায় পড়েছিলাম। স্রষ্টার গড়া আর মানুষের তৈরী মিলিয়ে সারা দুনিয়ার আশ্চর্য্যজনক বিষয় মাত্র ৭টি। আমাদের ‘তাজমহল’ ছিল তাদের একটি। তাজমহল অবশ্য এখনও বিশ্বের এক অবাক করা স্থাপত্য। কিন্তু এখন আর “সপ্তম আশ্চর্য্য” নেই। এখন আসলেই, সারা বিশ্বে, আশ্চর্য্য বিষয়ের পরিমাণ কত? মনে হয় একত্রে গুণা হয়নি এখনও। এখন অত্যাশ্চর্য্যের সংখ্যা এতই যে সব ভাগ ভাগ করে নেয়া হয়েছে। যেমন, বিশ্বের আশ্চর্য্য দালান, আশ্চর্য্য সমুদ্র সৈকত, আশ্চর্য্য প্রাণী, আশ্চর্য্য জাহাজ ইত্যাদি ইত্যাদি। ‘প্লায়া ডেল আমর’, ‘দি মেরিয়েটা দ্বীপপুঞ্জ’-এর একটি। একটি সাগর সৈকত। স্রষ্টা, প্রকৃতির অপার লীলা। পুরো যেনো একটি শিল্পকর্ম। অদেখা স্রষ্টার অদৃশ্য হাতের কাজ। কত হাজার বা লক্ষ বছরের পুরানো এখনও পুরোপুরি জানা হয়নি। অনুমান করা হয় কোন এক সময় অগ্নি উৎপাতের মধ্য দিয়ে বিশ্বকর্মা স্বয়ং এর জন্মদিয়েছেন। বিগত হাজার বছরেও কেউ ওখানে বসবাস করতে যায়নি। লোকচক্ষুর আড়ালে পরেছিল এই সৈকতটি। একেবারে পরিত্যক্ত। আর ১৯০০ সালের একেবারে প্রথম দিকে এই সুযোগটিকে কাজে লাগালেন মেক্সিকো সরকার।
বিভিন্ন সামরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য উন্মুক্ত নিঃশব্দ নীরব এই সাগর তীরটিকে ঠিক করলেন। শুরু হল বিভিন্ন সামরিক মহড়া আর গুলাগুলি। ফলে সাগরতীরের এই ভূস্বর্গে জলজ আর বনজ প্রাণীকূলের সর্বনাশ হতে শুরু করলো। প্রায় এক দশকের গবেষণার পর গবেষক বৈজ্ঞানিকগন মেক্সিকো সরকারকে বুঝাতে সক্ষম হলেন যে এটি একটি জাতীয় উত্তরাধিকার, প্রকৃতির কাছ থেকে পাওয়া। একে জাতীয় ঐতিহ্য হিসেবে সংরক্ষন করতে হবে। মেক্সিকো সরকার রাজী হয়ে দ্বীপপুঞ্জটিকে একটি জাতীয় উদ্যান বলে ঘোষণা দিলেন। পশু আর মাছ শিকার থেকে শুরু করে যাবতীয় শিকার ও দ্বীপপুঞ্জকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে এমন সকল মনুষ্যকর্ম এখানে বন্ধ করা হলো। একমাত্র পর্যটকদের জন্য সরকারী তালিকাভুক্ত নৌকা কোম্পানীকে ওখানে যাবার অনুমতি দেয়া হল। সেই থেকে মেক্সিকো’র “প্লায়া ডেল আমর” স্রষ্টার অপার মহিমার কথা শুনিয়ে যাচ্ছে দুনিয়ার অসংখ্য মানুষকে প্রতিনিয়ত।
সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন সেখানে পৌঁছানোর রাস্তাটি। প্রকৃতির তৈরী একটি ৮০ফুট গুহাপথে নৌযানে করে ওখানে যেতে হয়। আর কোন বিকল্প নেই। প্রশান্ত সাগর থেকে ওই গুহাপথেই ‘প্লায়া ডেল আমর’ এ পৌঁছাতে হয়। কেউ কেউ বলেন এটা মা প্রকৃতির দান। (অদিতিসেন্ট্রাল.কম অনুসরণে)
লন্ডন: শনিবার, ১৪ই মাঘ ১৪২৩