আব্দুল ওয়াদুদ, মৌলভীবাজার থেকে।।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হাওয়া বইছে চায়ের রাজধানীখ্যাত ও পর্যটন জেলা মৌলভীবাজারে। এ জেলায় চারটি সংসদীয় আসন রয়েছে। ২৩৫, ২৩৬, ২৩৭, ২৩৮ এই অংকযুক্ত সংসদীয় আসনগুলোতে প্রতিদ্বন্ধিতায় থাকবে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এছাড়াও জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য ইসলামী দলও রয়েছে। জেলা জুড়ে বড় দুই দলেই রয়েছেন একাধিক প্রার্থী। মনোনয়ন পেতে ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে আনাগোনা। অনেকেই কেন্দ্রমূখী হয়ে মনোনয়নের প্রত্যাশা নিয়ে মহাব্যস্ততায় সময় পাড় করছেন রাজধানী ঢাকায়। গত রমজানকে পুঁজি করে ইফতার পার্টি ও ঈদ-পরবর্তী পুনর্মিলনীর মাধ্যমে সম্ভাব্য অনেক প্রার্থীই চালিয়েছেন নির্বাচনী প্রচারণা। অনেকেই আবার এ জেলায় পাঁচ মাসের দীর্ঘস্থায়ী অকাল বন্যায় হাওর এলাকার দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরনের মাধ্যমে নিজ নিজ এলাকায় দৃষ্টি আর্কষণের চেষ্ঠা চালিয়েছিলেন। আগামী ঈদুল আজহা উপলক্ষে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা অগ্রীম জানান দিচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, পোষ্টার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড এর মাধ্যমে। তবে এবার মৌলভীবাজারে প্রধান দুই দলেই বেশি তরুণ নেতার আগমন ঘটেছে। তারা একাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হতে ইতিমধ্যেই তৎপরতা শুরু করেছেন।
মৌলভীবাজার-১, জুড়ী-বড়লেখা
মৌলভীবাজার -১ আসনে আ’লীগ, বিএনপি ও জামায়াত এই তিনটি দলই প্রায় শক্ত অবস্থানে। নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে ত্রিমুখী লড়াই হবে বলে স্থানীয়দের মুখে মুখে সুর উঠেছে। এ আসনে গত নির্বাচনে তৎকালীন আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন ৩৬ হাজার ভোট বেশী পেয়ে বিএনপি’র এবাদুর রহমান চৌধুরীকে হারিয়ে বিজয়ী হন। তাই ভোটারদের কাছ থেকে শুনা যাচ্ছে যে, ওই আসনে দলের একক প্রার্থী হিসেবে বড়লেখা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, বর্তমান সাংসদ ও জাতীয় সংসদের হুইপ মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিনই মনোনয়ন পাবেন। ক্ষমতাসীন এই নেতা ইতিপূর্বে বিদ্যুৎ সরবরাহ ও বন্যা দূর্গতদের মধ্যে ত্রান বিতরনে তৎপড়তা চালিয়ে নির্বাচনী এলাকায় বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছেন।
বিএনপি থেকে দলীয় মনোনয়নের হিসেব নিকাশে এখনো আছেন দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান প্রতিমন্ত্রী এবাদুর রহমান চৌধুরী, এছাড়াও জেলা বিএনপি’র সহ সভাপতি ও জুড়ী উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক, বিশিষ্ট শিল্পপতি নাসের উদ্দীন আহমেদ মিটু তৎপরতা চালাচ্ছেন মনোননের আশায়। কাতার বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুল হকও আছেন নির্বাচনী মাঠে।
বড়লেখা-জুড়ী উপজেলা জামায়াতের শক্ত ঘাটি হিসেবে পরিচিত। এই আসনে জামায়াত-এর প্রার্থী কেন্দ্রীয় ছাত্রশিবিরের সাবেক অর্থ সম্পাদক, বিশিষ্ট সমাজসেবি ও ব্যবসায়ী জামায়াত নেতা মাওলান আমিনুল ইসলাম। বিএনপির একাধিক প্রার্থী থাকায় জামায়াত শক্ত অবস্থান নিয়ে মাথা তুলতে চাইছে এই আসনে। বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থী বড়লেখায় উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রায় ২৮ হাজার ও জুড়ী উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রায় ২০ হাজার ভোট পায়। এই হিসেবে তাদের ভোট ৪৮ হাজারে দাঁড়িয়েছে। তাই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও এই আসনে দাঁড়াতে তারা আগ্রহী। এ ছাড়াও কারাগারে থাকা সাঈদী পুত্র শামীম সাঈদী গত মাসে বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলায় ওই প্রার্থীকে নিয়ে বন্যা দূর্গতদের মাঝে ত্রানতৎপরতা চালানোর পর থেকেই স্থানীয়ভাবে সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নের বিষয়ে জামায়াত আলোচনায় এসেছে।
মৌলভীবাজার-২, কুলাউড়া-কমলগঞ্জ এর একাংশ
এই আসনে বিগত নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ও বিএনপিকে হারিয়ে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়। তাই ২০ দলীয় জোটের শরীক এই দলটি জোটগতভাবে নিজেদের পক্ষে মনোনয়ন চাইতে পারে। আওয়ামীলীগ থেকে বর্তমান আওয়ামীলীগের সাংসদ আব্দুল মতিন, ডাকসুর সাবেক ভিপি ও কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর এর নাম শোনা যাচ্ছে। সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সংস্কারপন্থী সুলতান মনসুর আওয়ামীলীগের সমালোচনা করায় দীর্ঘদিন যাবৎ দলের বাহিরে রয়েছেন। দল থেকে দূরে থাকা এই ত্যাগী নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করতে আগ্রহী। তাঁর অভিযোগ, দীর্ঘদিন যাবৎ তাকে দল থেকে কোনঠাসা করে রাখা হয়েছে। আরো আলোচনায় আছেন জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য আতাউর রহমান শামীম, সাবেক পুলিশের এ আই জি সৈয়দ বজলুল করিম, ডা: রুকন উদ্দিন আহমদ, আওয়ামীলীগ নেতা ও উপজেলা চেয়ারম্যান আ,স,ম কামরুল ইসলাম, সিলেট মহানগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।
মৌলভীবাজার-৩, সদর ও রাজনগর
আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে এ আসন নিয়ে জেলা জুড়ে আলোচনা-সমালোচনার অন্ত নেই। দীর্ঘদিন যাবৎ আওয়ামীলীগ-বিএনপি লড়াই করে আসনে যৎসমান্য ভোটে বিজয়ী হয়েছে আওয়ামীলীগ। বিএনপি জোট সরকারের আমলের সাবেক অর্থ ওপরিকল্পনা মন্ত্রী এম সাইফুর রহমান ও মহাজোট সরকারের সাবেক সমাজকল্যান মন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলীর মধ্যে লড়াই হতো এই আসনে। গত নির্বাচনে আওয়ামীলীগ প্রার্থী সৈয়দ মহসীন আলী বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী এম সাইফুর রহমানকে হারিয়ে ৩১ হাজার ভোট বেশী পেয়ে বিজয়ী হন। এখন প্রধান এই দুই দলের নেতা জীবিত নেই। প্রয়াত স্বামীর গুনে মনোয়ন প্রত্যাশায় আছেন সৈয়দ মহসীন আলী পত্নী বর্তমান সংসদ সৈয়দা সায়রা মহসীন। এছাড়াও জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দি মৌলভীবাজার চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাস্ট্রির সভাপতি মোঃ কামাল হোসেন, পৌর মেয়র ফজলুর রহমান, সাবেক বৃটিশ কাউন্সিলার এম এ রহিম (সিআইপি), জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুর রহমান বাবুল।
আরো একজন দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ও ছাত্রলীগের সাবেক জেলা সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালিক তরফদার সুয়েব। ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতিতে সক্রিয় থাকা এই আ.লীগ নেতা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ড নিয়ে। ১৯৮৪ সাল থেকে মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক পদ পেয়ে ছাত্র আন্দোলন শুরু করে এখনও জেলা আ’লীগের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে কাজ করছেন। আব্দুল মালিক তরফদার সুয়েব নিজেকে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী উল্যেখ করে দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে তিনি মনোনয়ন প্রত্যাশী। তার কথায়, জন নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করছি।
অপরদিকে বিএনপি থেকে দলীয় মনোয়ন চাইবেন প্রয়াত সাইফুর রহমানের পুত্র সাবেক সাংসদ জেলা বিএপি’র সভাপতি এম নাসের রহমান। এছাড়াও আলোচনায় আছেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র ফয়জুল করিম ময়ূন, জেলা বিএনপি’র সাধারন সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান।
মৌলভীবাজার-৪, শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ একাংশ
আওয়ামীলীগ থেকে, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বর্তমান সাংসদ ও সাবেক চিফ হুইপ মোঃ আব্দুস শহীদ, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যাপক রফিকুর রহমান, শ্রীমঙ্গল উপজেলা চেয়ারম্যান রনধীর কুমার দেব, শ্রীমঙ্গল পৌর মেয়র মহসীন মিয়া মধু, অবসরপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডাঃ হরিপদ রায়।