চান মিয়া, ছাতক, সুনামগঞ্জ।। ছাতকস্থ ‘লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট লিমিটেড’ পরিবহন শ্রমিকদের চাকুরি পূনর্বহাল ও বকেয়া বেতন ভাতা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। গত ২০১৭সালের ৩১ডিসেম্বর চট্টগ্রাম শ্রম আদালত এ রায় প্রদান করেন। জানা যায়, লাফার্জের পরিবহন শ্রমিকদের চাকুরি স্থায়ি করার দাবিতে ২০১৩সালের ৯ডিসেম্বর চট্টগ্রাম ২য় শ্রম আদালতে আইআর মামলা নং ৩০থেকে ৬২/২০১৩ইং মোট ২৩টি মামলা দায়ের করেন। এতে লাফার্জ কর্তৃপক্ষ মামলার জবাব না দিয়েই সিভিল প্রসেডিওর কোর্টের অর্ডার নং ৭, রোল-১১তে মামলা খারিজের আবেদন করেন। পরে মামলার শুনানী শেষে আদালত ২০১৪সালের ১০মার্চ তাদের আবেদন নামঞ্জুর করেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে ঢাকা শ্রম আপীল ট্রাইব্যুনালে লাফার্জ কর্তৃপক্ষ আপীল মামলা নং- ৭২ থেকে ৯৪/২০১৪ পর্যন্ত দায়ের করেন।
এতে শ্রমিকদের চাকুরি স্থায়িকরণের বিষয়ে হয়রানীমুলক জটিলতা সৃষ্টি হয়। আপীল চলাকালে মাননিয় আপীল ট্রাইব্যুনাল ২০১৪সালের ১০এপ্রিল শ্রমিকদের বেতন ভাতাসহ যাবতিয় সুবিধা আপীল নিষ্পত্তি পর্যন্ত বহাল রাখার নির্দেশ দিলেও কোম্পানী কর্তৃপক্ষ তা, না দিয়ে আবারো ঢাকায় মাননীয় হাইকোর্টে একটি রিট মামলা নং ৩৫৩৯/২০১৪ দায়ের করেন।
এদিকে আপীল ট্রাইব্যুনালে আপীল শুনানী শেষে ২০১৪সালের ৮সেপ্টেম্বর নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে কোম্পানী কর্তৃপক্ষ মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগে আরেকটি রিট মামলা নং ৮৬৭২ থেকে ৪৬৯৪/২০১৪ পর্যন্ত দায়ের করেন। দীর্ঘদিন থেকে শ্রমিকদের এ হয়রানীতে আইনী মোকাবেলা করে ২০১৭সালের ৩০মার্চ মাননিয় হাইকোর্ট লাফার্জের দায়েরি রুল ডিসচার্জ করে দেন। এতে
চাকুরি স্থায়ীর মামলা দ্রুত নিষপত্তির জন্য চট্টগ্রাম শ্রম আদালতকে নির্দেশ দেন মাননিয় হাইকোর্ট।
এদিকে শ্রমিকদের বেতন ভাতার বিরুদ্ধে কোম্পানীর করা রিট মামলা নং ৩৫৩৯/২০১৪ লাফার্জ কর্তৃপক্ষ সেচ্ছায় ‘সারেন্ডার’ করে মামলাটি প্রত্যাহার করে নেন। এতে শ্রম আপীল ট্রাইব্যুনালের দেয়া বেতন ভাতার আদেশ বহাল থেকে যায়। কিন্তু শ্রমিকরা বেতন-ভাতা পায়নি। ফলে ২০১৭সালের ২৮আগষ্ট লাফার্জের পরিবহন শ্রমিক সংগ্রাম কমিটির সভাপতি খালেদ মিয়া বাদী হয়ে ঢাকা শ্রম আপীল ট্রাইব্যুনালে লাফার্জে’র বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা নং ০৪/২০১৭ দায়ের করেন। যাহা এখন বিচারাধিন রয়েছে।
এদিকে উচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী শ্রম আদালতে বেতন ভাতাসহ চাকুরিতে পূনর্বহালের জন্য আবেদন জানায় শ্রমিকরা। এতে শুনানী শেষে শ্রম আদালতের চেয়ারম্যন ও সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মুক্তার হোসেন ২০১৭সালের ৩১ডিসেম্বর শ্রমিকদের যাবতীয় বকেয়া পরিশোধসহ চাকুরীতে যোগদানের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
শ্রমিক নেতা খালেদ মিয়া জানান, কোম্পানী কর্তৃপক্ষ শ্রমিক হয়রানীর সব ধরনের কৌশল অবলম্বন করে যাচ্ছেন। তারা আদালত অবমানাসহ শ্রমিকদের ঘামের বিনিময় দিতে টালবাহানা করে যাচ্ছে। ফলে শ্রমিকরা খুবই কষ্টে জীবন-যাপন করছে।
আদালতের প্রতি সম্মান ও আদালতের নির্দেশ পালনের জন্যে অনুরুধ জানান খালেদ মিয়াসহ পরিবহন নেতৃবৃন্দ। অন্যথায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সহযোগিতায় কঠোর আন্দোলন-সংগ্রামের হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।