আজ থেকে ৪বছর আগের গল্প। ২০১৩ সালের কথা। বাংলাদেশে কাঠ দিয়ে রুটি বানানোর যন্ত্র তৈরি করেছেন মাগুরার বুনাগাতি গ্রামের হুমায়ুন কবির। বিদ্যুৎবিহীন পরিবেশবান্ধব রুটি তৈরির যন্ত্রটির একটি নামও তিনি দিয়েছেন। তিনি তার ছোট কন্যার নামে এর নাম রেখেছেন-‘লাইবা রুটি মেকার’।
রুটি। বিশ্বের সকল মানুষেরই খাদ্য তালিকায় যে বিশেষ নামটি আসে তাই রুটি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সংখ্যাধিক জনগোষ্ঠীর প্রিয় খাবার রুটি। আবার অনেকের ক্ষেত্রে রুটি পথ্য হিসেবে খাবারের দৈনন্দিন তালিকাভুক্ত হয়ে গেছে। বাংলাদেশের খাদ্য তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে এই রুটি। অধুনা বিশ্বব্যাপী বহুমূত্ররোগের(ডায়াবেটিক) আধিক্যের কারণে মানুষের খাদ্যতালিকায় রুটি বিশেষ একটি স্থান করে নিয়েছে।হাতে রুটি বানানো বেশ কষ্টসাধ্য ও সময়ক্ষেপনকারী। বিশ্ব ও মানুষ যত সামনের দিকে যাচ্ছে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মানুষের ব্যস্ততা।এখন আর হাত দিয়ে রুটি বানিয়ে মানুষের চাহিদাপূরণ একেবারেই অসম্ভব। অন্ততঃ দুনিয়ার সমৃদ্ধ শহর বন্দর বা নগরে। এ কারণে অনেক বিত্তবান পরিবারে কেবল রুটি বানানোর জন্যই কাজের লোক রাখতে হয়।
রুটি বানানোর গতানুগতিক এই প্রক্রিয়াকে সহজ ও দ্রুত করার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি নজরে আসে বাংলাদেশের মাগুরার এক ব্যবসায়ী যুবকের। বুনাগাতি গ্রামের ওই যুবক মনে মনে চিন্তা করতে থাকেন কি উপায়ে এ সমস্যার খানিকটা হলেও সমাধান করা সম্ভব। এক সময় সফলতা আসে যুবক হুমায়ুন কবিরের। ২০১৩ সালের দিকে তৈরী করেন কাঠ দিয়ে রুটি বানানোর যন্ত্র। যন্ত্রটি বানানোর সাথে সাথেই মাগুরা জেলার সর্বত্র তিনি আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেন। ফলে যন্ত্রটির একটি নামও তিনি রাখেন- লাইবা রুটি মেকার। সে সময়েই বহু গণমাধ্যমে তার নব উদ্ভাবনার কথা প্রকাশ হয়। পরিবেশবান্ধব যন্ত্র হিসেবে দেশের পরিবেশ অধিদপ্তরের সম্মাননাও পেয়ে যান ওই ২০১৩ সালেই।
তার লাইবা রুটি মেকার দিয়ে খুব সহজেই মিনিটে ১২ থেকে ১৫টি রুটি তৈরি করা যায়। আকারে বড় ও কাগজের মত পাতলা রুটিও বানানো যায়। এযন্ত্রে যেকোনো আকারের আটাই দেয়া হোক না কেন রুটি হবে গোলাকার। হুমায়ুন কবিরের মতে কাঠের এ যন্ত্র দিয়ে বানানো রুটির স্বাদ বা পুষ্টিগুনে কোন হেরফের হবেনা। একেবারে আদি ও অকৃত্তিম রুটি প্রস্ত্তত হয়।
কাঠের তৈরী দেশীয় এ রুটি যন্ত্রের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে, রুটি তৈরি সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকলেও মেশিনটি দিয়ে রুটি তৈরি করা সম্ভব। এটা চালাতে বিদ্যুতের কোনো প্রয়োজন হয় না। অল্প জায়গায় সুবিধামত ভাবে বসিয়ে ব্যবহার করা যায় এবং যে কেউ অনায়াসে এই রুটি তৈরির যন্ত্র চালাতে পারে।
জানা যায় ইতিমধ্যেই হুমায়ুন কবির বিশ্বের ২৫টিরও বেশি দেশে কাঠের তৈরী তার এ রুটি তৈরী যন্ত্র বিক্রি করেছেন।
হুমায়ুনের এই উদ্ভাবনকে সকলের মাঝে পৌঁছে দিতে এই নামে www.rutimaker.com রয়েছে তার ওয়েবসাইট। তার ফেসবুক পাতাও আছে https://www.facebook.com/laaibahrutimaker. গুগলে গিয়ে খুঁজ নিলে যেকোনজন ‘লাইবা রুটি মেকার’এর রুটি তৈরির পদ্ধতি দেখতে পারবেন। ইউটিউবেও রয়েছে হুমায়ুনকন্যা ছোট্ট লাইবার রুটি বানানোর ভিডিও ফুটেজ।