হারুনূর রশীদ।।
আমাদের এতোদাঞ্চলে হত্যার রাজনীতির শুরু অতীতের পাকিস্তানী আমল থেকে। তারও আগে ছিল কিন্তু আমাদের প্রজন্ম প্রত্যক্ষ করেছি প্রকাশ্যে যখন পাকিস্তানী আমলের পুলিশ বিনা উসকানিতে গুলি করে ছাত্র হত্যা করে। প্রকাশ্যে সেই আমাদের হত্যাকাণ্ড দেখার শুরু। এর পর কত কত ঘটলো আর আমরা দেখলাম। ছোট হোক বা বড় হোক সব ঘটনার পেছনেই কারণ থাকে। একই সাথে আরেকটি বিষয় সকল ঘটনার সাথে থাকবেই থাকবে আর তা’হলো ঘটনার পেছনের অদৃশ্য হাত। এ দু’টো বিষয় ছাড়া কোন ঘটনাই ঘটতে পারে না।
সে দিক থেকে প্রগতিশীল সাহিত্যিক শিক্ষক জাফর ইকবাল সাহেবকে হত্যা প্রচেষ্টার পেছনে কারণ রয়েছে এবং পেছনে অবশ্যই কালো হাত রয়েছে। কারণ আমরা সকলেই জানি। তাকে হুমকি-ধামকি এমনকি হত্যার প্রচেষ্টা নতুন কিছু নয়। এর আগেও হয়েছে, গতকালও হয়েছিলএবং আবারো হবে। দেশের সার্বিক অবস্থায় এটাই সত্য।
বিষয়টি সকল মহলের কাছে খুবই সুস্পষ্ট যে জাফর ইকবালকে হত্যা প্রচেষ্টার পেছনে দেশের মৌলবাদী শক্তিই একমাত্র ঘাতকীশক্তি।
প্রকাশ্যে জাফর ইকবালের সভায় তারই পেছনে দাড়িয়েছিল ঘাতক সেই ছেলেটি। ছেলেটির পরিচয় লুকিয়ে রাখার সুযোগ কারো নেই। গণমাধ্যম থেকে জানা গেছে তার বাড়ী সুনামগঞ্জে এবং তার বাবা একটি মাদ্রাসার একজন শিক্ষক। মাদ্রাসার এই শিক্ষক পিতার সার্বিক পরিচয় খুঁজলেই ছেলের হত্যা প্রচেষ্টার মতলব এবং এই কুমতলবের পেছনে কাদের সরাসরি হাত রয়েছে সুস্পষ্টভাবেই জানা যাবে। এখানে কোন প্রশ্নের অবকাশ নেই। আর এই জানার বিষয়ে দায়ীত্ব কাদের(?) তা বলে দেয়ার কোন প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।
বাহির থেকে দেখে এটুকু বলার অপেক্ষাই রাখে না যে এই হত্যা প্রচেষ্টা মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটি প্রচেষ্টা। বেশ কিছুদিন ধরে মৌলবাদীদের এরূপ হ্ত্যা প্রচেষ্টা একটু স্থিমিত হয়ে এসেছিল। হঠাৎ করে কি এমন ঘটনা ঘটলো যে অধ্যাপক জাফর ইকবালকে হত্যা করে ফেলার প্রয়োজন দেখা দিল?
তবে কি বেগম খালেদা জিয়াকে শাস্তি দেয়ার প্রতিশোধমূলক কোন হুশিয়ারী এটি! না-কি দেশে বছরের শেষের দিকে নির্বাচন আসছে, তাই নির্বাচনী হাওয়াকে একটু গরম আর ঘোলা করে তুলে ঘোলাজলে মাছ শিকারের লক্ষ্যে কোন বিশেষ শক্তির খেলা? কেউ কেউ বলেছেন রোহিঙ্গা খণ্ডের পালা নিস্তেজ হয়ে গেছে সুতরাং দেশের রাজনীতিকে অস্থির করে রাখতে হলে এরূপ কিছু ঘটনার প্রয়োজন, তাই!
ঘটনা যা-ই হয় না কেনো, দেশের শান্তিময় অবস্থাকে অস্তির করে তুলতে চায় কারা? এটিও একটি ভেবে দেখার বিষয়। আর মৌলবাদী শক্তি যে দেশ থেকে নিঃশেষ হয়ে যায়নি এই জঘণ্য হত্যা প্রচেষ্টা তারই জ্বলন্ত প্রমান। আর একটি বিষয় মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে আমরা যতই ঢেলে সাজাইনা কেনো, দ্বিজাতি তত্ত্বের বিষময় প্রতিক্রিয়া এই মাদ্রাসাকে ঘিরে গড়ে উঠেছিল আর এখন এই মাদ্রাসাকে কেন্দ্র করে বেঁচে আছে এবং মাদ্রাসা যতদিন আরবীয়দের ভাষায় তাদের দেশের নমুনায় টিকে থাকবে ততদিন মুক্তিযুদ্ধের লড়াই শেষ হবে না। আর সুযোগ সন্ধানীরা এর সুযোগ সবসময়ই নেবে।
লণ্ডন, রোববার, ৪ঠা মার্চ ২০১৮