মালদ্বীভে যখন জরুরী অবস্থা চলছে ঠিক তখনই চীনাদের ১১খানা যুদ্ধজাহাজ পূর্বভারত সাগরে দিকে রওয়ানা হয়েছিল। খবরটি গত ২০শে ফেব্রুয়ারীর। পুরো একটি ফ্লিট ডেস্ট্রয়ার, কমপক্ষে একটি ফ্রিগেট, একটি ৩০ হাজার টনের যানবাহন ডক এবং ৩টি সহযোগী টেঙ্কারস ওই সময় ভারত সাগরে প্রবেশ করেছিল। নিউজ পর্টাল সিনা.কম.সিএন এর নামে খবরটি প্রকাশ করেছিল দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট। অবশ্য ওই নিউজ পোর্টাল, এই যুদ্ধ জাহাজের সাগরে বেরিয়া পড়ার কারণ মালদ্বীভের জরুরী অবস্থা এমন কিছু লিখেনি কিংবা অন্য কোন কারণও দেখায়নি।
ভারত এবং চীনারা এই দ্বীপদেশের আভ্যন্তরীন সমস্যার সময় নিজেদের আধিপত্য অক্ষুন্ন রাখতে রীতিমত প্রতিযোগীতা করে চলেছে। কারণ মালদ্বীভ কিন্তু কৌশলগত কারণে বেশ গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। মালদ্বীভের প্রেসিডেন্ট গত ৫ ফেব্রুয়ারী জরুরী অবস্থার ঘোষণা দিয়েছেন। ৯জন বিরুধী পক্ষীয় নেতৃবৃন্দের সাজা মওকুপ করে সেদেশের সর্বোচ্চ আদালত। আদালত তাদের মুক্তির আদেশ দেয়। আদালতের সেই রায়কে বাতিল করার উদ্দেশ্যেই প্রেসিডেন্ট এই জরুরী অবস্থার ঘোষণা দেন।
ইয়ামিন সরকারের প্রশাসন জরুরী অবস্থা ঘোষণার পর পরই সে দেশের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মামুন আব্দুল গাইয়ুমসহ একজন সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক ও প্রধান বিচারপতিকে আটক করেছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল যে তারা সরকার উৎখাতের ষঢ়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন। আরো একমাস জরুরী অবস্থা বাড়ানোর জন্য তিনি সংসদে অনুমোদন চেয়েছিলেন। সংসদ তা অনুমোদন করেছে কি-না আমাদের জানার সুযোগ হয়নি।
ভারতের নৌশক্তি ও চীনাদের নৌবাহিনীর অবস্থানের দুরত্ব খুবই কাছাকাছি। মালদ্বীভে কার প্রভাব চলবে সেই সুবিধা অর্জনের লক্ষ্যে ভারতের সাথে চীনাদের পুরনো শত্রুতা নবরূপে সামনে যাতে না আসে সে লক্ষ্যেই মনে হয় মোদী সরকার কিছুটা চুপ রয়েছেন। তবে তলে তলে উভয়ই যে সেখানে তাদের রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক প্রভাবের পুরোদমে স্থিতি স্থাপনে কাজ করে যাচ্ছেন তা দুনিয়ার কারো অজানা নয়। নতুন করে তাদের পুরনো এ বিবাদ সামনে এসেছে তখনই যখন আব্দুল্লাহ ইয়ামিন সরকার বেইজিংএর এশিয়া ও তার বাহিরে ব্যবসার যোগাযোগ তৈরীর “বেইজিং বেল্ট এন্ড রোড ইনিসিয়েটিভ” এ স্বাক্ষর করেন।
মালদ্বীভের সাথে ভারতের অতি প্রাচীন কাল থেকেই একটি সুন্দর বন্ধুসুলভ সম্পর্ক চলে আসছে। বিশেষ করে রাজনীতি ও নিরাপত্ত্বার প্রশ্নে সে সম্পর্ক ন্যায্যতঃই গভীর। ভারতের মাত্র ২৫০ মাইল দূরে এই দ্বীপদেশটির অবস্থান। ভিন্ন পক্ষে চীন সে অনুপাতে বহু বহু দূরের দেশ। এছাড়াও মালদ্বীভের ৪লাখ জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই মুসলমান। এ অবস্থার মাঝে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মিঃ গায়ূমসহ মালদ্বীভের বিরুধী নেতৃবৃন্দ দিল্লীকে হস্তক্ষেপের জন্য দাবী জানিয়েছিলেন। আর এই দাবী জানানোই চীনের কাছে উদ্বেগের বিষয়। কারণ চীনের বিশাল ভ্রমণ বাণিজ্যের বিরাট একটি কেন্দ্র হলো এই মালদ্বীভ। এছাড়াও বিপুল সংখ্যক চীনা ভ্রমণের জন্য মালদ্বীভে আসেন।
চীন ইতিমধ্যেই তার নাগরীকদের বলেছে অবস্থার উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত মালদ্বীপ ঘুরতে না যাওয়ার জন্য। এমতাবস্থায় চীনাদের সামরিক উপস্থিতি কোনভাবেই ভারতের জন্য আশীর্বাদ নয় বরং এক কঠিন প্রতিযোগীতার আভাস দেয়! ইন্ডিপেন্ডেন্ট অবলম্বনে
হারুনূর রশীদ।।
লণ্ডন, ২৫শে ফেব্রুয়ারী, ২০১৮সাল