মুক্তকথা সংবাদকক্ষ।। ৭ বছর বয়সী ইয়েমেনের আমাল হোসেইন। ছিলেন ইয়েমেনের রাজধানী সানা থেকে উত্তর-পশ্চিমে প্রায় ৯০মাইল দূরে অবস্থিত আসলাম নামের একটি গ্রামের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। বিশ্বে সাড়া জাগিয়েছিলেন তার হাড্ডিসার চেহারা দিয়ে। দুনিয়াকে জানান দিয়েছিলেন ইয়েমেনের উপর সৌদি আরবের অন্যায় যুদ্ধের করুন ইতিহাসের। তার কঙ্কালসার দেহই ছিল মানবতার প্রতি শক্তিমানদের নির্মম পৈশাচিক অত্যাচারের এক নীরব প্রতিবাদ।
সাড়া জাগানো কঙ্কালসার দেহের সেই শিশুকন্যা আমাল আর নেই। গতকাল বৃহস্পতিবার তার পরিবার থেকে তার মৃত্যুর খবর জানানো হয়। ইয়েমেনের একটি শ্মরণার্থী শিবিরের মলিন বিছানায় চিরদিনের জন্য ঘুমিয়ে গেছেন তিনি। আমালের সে ঘুম আর কোনদিন ভাঙ্গবে না। আমাল সেই শিশু যার উপবাসী পুষ্টিহীন জীর্ণশরীর সারা বিশ্বকে জানান দিয়েছিল ইয়েমেনের উপর সৌদিরাজের অনৈতিক, অরাজক পৈশাচিক যুদ্ধের। নিউইয়র্ক টাইমস তার সেই কঙ্কালসার দেহের ছবিও ছাপিয়েছিল।
তার মা মারিয়াম আলী নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, “আমার মন ও হৃদয় ভেঙ্গে গেছে।” ফোনে আলাপের সময় তিনি কাঁদছিলেন। তিনি বলছিলেন-“মেয়েটি আমার পুষ্টিহীন নিদারুণ জীর্ণশরীরে থেকেও সবসময় হাসতো। আমি তার কষ্টমিশ্রিত সেই হাসিকে কি করে ভুলতে পারবো? আমার নারীছেঁড়া ধনের অব্যক্ত সেই বেদনাকে বহন করেই আমাকে আমৃত্যু চলতে হবে।
ইয়েমেনের উপর সৌদি পরিচালিত ভয়ঙ্কর অমানবিক যুদ্ধ, সূচনায় বিশ্বময় শিরোনাম হয়েছিল। অতিসম্প্রতি জাতিসংঘ ও সৌদি আরবের ঘনিষ্টতম বন্ধু যুদ্ধাস্ত্রদাতা রাষ্ট্র যুক্তরাজ্যবৃটেন ইয়েমেনে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। তাদের একজন কর্তা বলেছেন এটি কার্যকরী হতে মাসখানেকের মত সময় লাগবে।
পুষ্টিহীন ভয়ঙ্কর বেদনাদায়ক চেহারার আমাল হোসেইন, যে কিনা ইয়েমেনের ১৮লাখ ভয়ঙ্কর পুষ্টিহীন শিশু-কিশোরীর একজন ছিল, তার সেই পুষ্টিহীন অমানবিক মলিন চেহারা ও মৃত্যু, ইয়েমেনে মানুষের তৈরী ভয়াবহ দূর্ভিক্ষের ইতিহাস বলে। আসন্ন মাসগুলিতে এ দূর্ভিক্ষ সারা ইয়েমেনকে গ্রাস করারও জানান দেয়। গত সপ্তাহে আসলামের হাসপাতাল থেকে আমাল হোসেইনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল নতুন রোগীর জায়গা করে দেয়ার জন্য। গত ২৬শে অক্টোবর হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়ার ৩দিন পর ডায়রিয়ায় সে মারা যায়। সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস