এ নমুনায় দেশকে লটকিয়ে রাখার অধিকার কারো নেই। গণতন্ত্রের অর্থও এই নয় যে দিনের পর দিন একটি দেশকে অসিদ্ধান্ততায় ভুগাবেন তার সাংসদগন বা সংসদ। মানুষ ভোটের মধ্য দিয়ে সংসদে তাদের প্রতিনিধি পাঠায় তার জীবনযাত্রাকে সহজ, নিরাপদ ও অর্থবহ বিনোদনের পথে মহিমাময় করে তোলার জন্য। কোনভাবেই গণতন্ত্রের নামে সিদ্ধান্তহীনতায় দেশকে ঠেলে দেয়ার জন্য নয়। এভাবে সিদ্ধান্তহীনতায় থাকার অর্থই হয় দেশ বা সমাজকে নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দেয়া। টেলিফোনে আমার এক ভাই সাবধান থাকার জন্য আমাকে পরামর্শ দিয়েছেন।
রক্ষণশীলদের পরিকল্পিত এক গণভোটে ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে আসার জন্য সাধারণ মানুষ ভোট দেয়। এ ভোটের আয়োজন করেছিলেন রক্ষণশীলদলীয় নেতা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরুন। তিনি জোট থেকে বেরিয়ে আসাকে ‘একটি পরিবর্তন’ আখ্যায়িত করেছিলেন। তিনি জানতেন একসাথে পথচলা থেকে সরে আসার অন্য অর্থ হলো একত্রে চলার বিনাশ সাধন। যা ক্যামেরুনরা চান। দুনিয়ার সভ্যমানুষ এক হয়ে চলতে চায় মানবসভ্যতার সেই উষালগ্ন থেকে। ইউরোপের দেশগুলো সভ্যতার উষালগ্নের সেই চেতনা থেকেই এক হয়ে চলে আসছে বিগত দুই-আড়াই যুগ ধরে। এমন এক হয়ে চলা মানবসভ্যতায় নতুন এক সংযোজন ছিল। এই চলার পরিণতিতে পৌঁছার আগেই তাকে সাঙ্গ করে দেয়া কোন অর্থেই সাধুবাদ যোগ্য নয়।
একটি পরিবারকে অনেক সময় এক রাখা যায় না। সেখানে দুই ডজনের উপর দেশ সুদীর্ঘকাল ধরে একহয়ে চলে আসছে, এটি চাট্টিখানি কথা নয়। কিন্তু সভ্যতার দূর্ভাগ্য যে রক্ষণশীলরা সবসময়ই পেছনের দিকে হাটতে চায়। তাদের স্বার্থের পক্ষে না হলে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চায় না। এটি একটি ঐতিহাসিক সত্য কথা। যুগে যুগে তাই রক্ষণশীলরা সভ্যতার অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করেছে, বলি দিয়ে এসেছে তাদের স্বার্থের যুপকাষ্ঠে। যা ঘটেছে একবিংশ শতাব্দিতে এসে বৃটেনে।
ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার মূল কারণ কি ছিল? নিন্দুকেরা বলে, সারা ইউরোপের কর্মজীবী মানুষ সকলেই বৃটেনে চলে আসতে চায়। এখানে এসে কাজ করে আবার বৃটেনের কল্যাণভাতা পকেটস্ত করে। তারপর একসময় চলে যায় নিজ দেশে। এভাবে চলতে দেয়া যায় না। এছাড়াও আরো ছোটবড় কিছু কথাও আছে। কিন্তু মূল কথা প্রথমটি। কোন সুস্থ বিবেকসম্পন্ন মানুষকি এ বিষয়কে বদনজরে দেখতে পারে। ‘ফ্রড’ বা দুরাত্মা কোথায় নেই। বাংলায় একটি কথা আছে- “মক্কায়ও চোর আছে।” অর্থাৎ দুষ্ট দুরাত্মা সবখানেই আছে। তাই বলে কি তাদের কারণে তাদেরই হাতে দেশ সমাজ ছেড়ে দিয়ে চলে যেতে হবে? মানলাম, যুগ যুগ এভাবে চলতে দেয়া যায়না। চলায় একটা পরিবর্তন অনেক সময় ভাল ফল দেয়। কিন্তু তার অর্থ কি এই হবে যে পরিবর্তন আনয়নের নামে মূল সম্পর্ককে ভেঙ্গে দেয়া, যা জোরদার করা সকল সময়ের কর্তব্য হওয়া উচিৎ।
নিরন্তন কোন চলায় অর্জন আসতে বাধ্য। ইউরোপীয়ান ইউনিয়নে থেকে সুদীর্ঘকাল চলায় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো দুনিয়ার বুকে সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে মাথাতুলে দাড়াতে পেরেছে। সবদেশের সমান উন্নয়ন হয়নি বিভিন্ন ভাবের বিশ্ব রাজনৈতিক কারণে। সকল দেশের সমানভাবে উন্নয়ন না হওয়ার কারণ তাদের ইউনিয়নভুক্ত হয়ে চলা নয়। বরং রক্ষণশীলদের সাম্রাজ্যবাদী রাজনীতিই এর জন্য এককভাবে দায়ী। ইউরোপীয়ান ইউনিয়নে থেকে যেসকল দেশ একটু উন্নতির মুখ দেখেছে সে সাফল্যতো এই ইউনিয়নে জোটভুক্ত থাকার জন্যই। তা’হলে বিশাল জনগোষ্ঠীর কোন বৃহত্তর স্বার্থে আমরা বেরিয়ে আসার পক্ষে কথা বলি? আর বেরিয়ে আসবেই যখন তখন সিদ্ধান্ত নিয়ে বেরিয়ে আসবেন। দুনিয়ার পঞ্চম শক্তিধর একটি দেশ ও তার সমাজকে কোন সিদ্ধান্ত না নিয়ে ঝুলিয়ে রাখার অধিকার গণতন্ত্র কাউকেই দেয়নি। সিদ্ধান্ত নিতে না পারাও যে একটি চরম ব্যর্থতা তা কি আমাদের সাংসদগন বোঝেও না বুঝার ভান করে চলছেন? এ সিদ্ধান্তহীনতার মাধ্যমে সাংসদগন সাধারণ মানুষকে যে ঝগড়ার পথে ঠেলে দিচ্ছেন সেকি কখনও ভেবে দেখেছেন? আর রক্ষণশীলরা যুগে যুগে এটাই চেয়ে আসছে। রক্ষণশীল ইতিহাস তাই বলে।
সবচেয়ে বড় জিজ্ঞাসা, প্রধানমন্ত্রী কোন গণতান্ত্রিক অধিকারে একই প্রস্তাবনা তৃতীয় দফা সংসদে পেশ করার অগণতান্ত্রিক প্রস্তাব করেন? কেউ জবাব দেবেনকি??