উপজেলা ভোট শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু কেমন ছিল নির্বাচনী অবস্থা মৌলভীবাজারে তারই এক সচিত্র খবর পাঠিয়েছিলেন আমাদেরই এক সুহৃদ সাংবাদিক। সঠিক সময়ে আমরা তা প্রস্তুত করে প্রকাশ করতে পারিনি। ভোট শেষ হয়ে গেলেও তার রেশ এখনও আছে। অনেকেই জানতে চান ভোটের দিন কেমন অবস্থা ছিল সকল সময়ের শান্তজেলা মৌলভীবাজারে। তাই ভোটের মৌলভীবাজার নিয়ে সকল মহলের জানার আগ্রহে কিছুটা প্রশান্তি এনে দিতে পুরাতন খবরটি আমরা প্রকাশ করলাম।
-সম্পাদক
-সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মছব্বির
লিখেছেন মৌলভীবাজার থেকে আব্দুল ওয়াদুদ।। চায়ের রাজধানী ও পর্যটন জেলা হিসেবে মৌলভীবাজারের খ্যাতি ও পরিচিত রয়েছে সারা দেশব্যাপী। সকলেই জানে এ জেলা খু্বই শান্তিপ্রিয় এলাকা। এ জেলার বেশীর ভাগ মানুষ কোন কালেই সহিংস ছিল না, এখনও নয়। এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন কোন ধরনের সহিংস বা বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা ছাড়াই ভোটারদের কম উপস্থিতিতে শান্তিপূর্ণ ভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ভোটের দিন সোমবার সদর উপজেলাসহ অন্যান্য উপজেলায় ভোটারদের মাঠ ছিল একেবারে নিরুত্তাপ! সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সদর উপজেলায় একমাত্র প্রার্থী কামাল হোসেন, একক প্রার্থী থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগেই নির্বাচিত হয়েছেন। এই কারণে এ উপজেলায় শুধু ভাইস চেয়ারম্যানরা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকায় ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আসার আগ্রহ কমে যায়। এছাড়াও বিরোধী দল বিএনপি ও তার শরীক দল ভোটে অংশগ্রহন না করাতে উপস্থিতি আরো কমে গিয়েছিল। একমাত্র সরকারী দলের একজন চেয়ারম্যানের নির্বাচন বর্জনের ঘটনা ছাড়া অন্য কোন অপ্রিয় ঘটনা ঘটেনি।
মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে দুপুরে গিয়ে জানা গিয়েছিল, সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এ কেন্দ্রে ৩ হাজার ৮শ ৭৬ ভোটের মধ্যে মাত্র ১৫২টি ভোট পড়ে। এখানকার প্রিজাইডিং অফিসার জিতেন্দ্র সরকার বলেছিলেন, ১০টি বুথে এই সময়ে প্রায় ৬ শতাংশ ভোটার ভোট প্রয়োগ করেন। সদর উপজেলার উলুয়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে জানা যায়, ১হাজার ৬শ ৭৬ ভোটের মধ্যে দুপুর ২টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে মাত্র ২০ শতাংশ।
অন্য কোন রাজনৈতিক কারণ ছিল না শুধুমাত্র উপজেলায় বিকল্প কোন চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করাতে উপস্থিতি কম ছিল। বেশীর ভাগ সাধারণ ভোটারের এই ছিল অভিমত। ভোটকেন্দ্রগুলোতে ঘুরতে গিয়ে পেয়ে যাই সারা জেলায় সুপরিচিত বর্ষিয়ান রাজনীতিক ও মুক্তিযোদ্ধা সাবেক মৌলভীবাজার সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল মছব্বির মহোদয়কে। তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম ভোটের দিন যেখানে মানুষজনকে উল্লসিত দেখার কথা সেখানে মানুষজনই কম। উত্তরে তিনি হেসে দিয়ে বলেছিলেন, “এখন যে নির্বাচন চলের(চলছে) ইটাতো নির্বাচন নায়। ইটা একটা সিলেকশন। বিভিন্ন রাজনৈতিক কারণে মানুষর মন তাকি ভোটর আনন্দ আলি গেছে।”
এছাড়াও রাজনগর উপজেলার উত্তরভাগ ইউনিয়নের সুনামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে সকাল ১০টা পর্যন্ত ২ হাজার ২শ ১৪ ভোটের মধ্যে ১০ শতাংশ ভোট পড়েছিল। বলেছিলেন প্রিজাইডিং অফিসার আব্দুল খালিক। উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের তুলাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২ হাজার ৪শ ২৬ ভোটের মধ্যে সোয়া এগারোটা পর্যন্ত ভোট পড়ে ৩৬০টি। উপজেলার জাহিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২ হাজার ৫শ ৩৫ ভোটের মধ্যে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভোট পড়ে ৪৪০টি। শাহাপুর গ্রামের ভোটার আব্দুল হান্নান বলেছিলেন, তিনি সকাল সাড়ে ৮টায় ভোট দিয়েছেন। এ কেন্দ্রে ১৫-১৬শ ভোট কাষ্ট হতে পারে।
এমন সুন সান নীরব অবস্থার মধ্যে হঠাৎ করেই রাজনগর উপজেলার সরকার দলীয় প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আছকির খান(নৌকা) উপজেলা নির্বাচন বর্জন করে বসেন। বিকেল ৩টায় সাংবাদিকদের সামনে এ ঘোষণা দেন তিনি। আছকির খানের প্রধান নির্বাচনি এজেন্ট মিলন বখত এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছিলেন, ব্যাপক কারচুপি, প্রকাশ্যে সীল দেওয়া এবং জাল ভোটের কারনে তারা বাধ্য হয়ে নির্বাচন বর্জন করেছেন। তিনি আরো বলেছিলেন, প্রতিপক্ষ প্রার্থী শাহজাহান খানের(কাপ-পিরিচ) সমর্থকরা নৌকার সমর্থকদের অনেক জায়গায় মেরে আহত করেছে। পুলিশের সহযোগীতায় এই ঘটনা ঘটছে বলে তিনি উল্লেখ করেছিলেন। তিনি আরো জানান, শাহাজাহান খানের লোকেরা জাল ভোট মেরেছে যার প্রমাণ হিসেবে কয়েকটি কেন্দ্রের বাইরে ব্যালটের বইয়ের মোড়া পাওয়া গেছে। রাজনগরের এই ঘটনা ছাড়া সারা জেলায়ই ভোট ছিল নিরুত্তাপ, ভোটার ছিলেন অতিঅল্প আর নিরানন্দ!