মুক্তকথা নিবন্ধ।। সুন্দরবনের ডোরাকাটা বাঘ যা “রয়েল বেঙ্গল টাইগার” নামেই বেশী খ্যাত। নিশ্চিন্ন হয়ে যাওয়া থেকে উদ্ধার পাচ্ছে ধীরে ধীরে। শিকারী ব্যাধদের চোরাগুপ্তা হত্যার বিরুদ্ধে একটু কঠোর ব্যবস্থা নেয়ায় রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে আবার দেখা যাচ্ছে।
বাঘের চামড়ার ব্যবসার লোভে এসব চোরাগুপ্তা শিকারী ও জলদস্যুরা রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে একেবারে নিশ্চিন্নের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল। বিগত ১৫ বছরের মাঝে এই প্রথম বারের মত বিড়াল জাতীয় এই প্রানীটির আবার দেখা মিলছে।
পূর্ব ও পশ্চিম উভয় বাংলা মিলে প্রায় ৪,০০০ বর্গমাইল এলাকা নিয়ে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠা গড়ান গাছের এই বনভূমি বিশ্বের আর কোথায়ও নেই। আর রয়েল বেঙ্গল টাইগারই হলো এই গড়ান বনভূমির একমাত্র প্রাণী। দেখতে অনেকটা গোলক ধাঁধাঁর মতো। পানির মাঝে জঙ্গল! শুনতেই কেমন অবাক লাগে। পানিতে আবার জঙ্গল হয় কি করে! হ্যাঁ হয়। আর সেটিই হলো ভাসান পানির উপর গড়ানগাছের বনভূমি সুন্দরবন। সুন্দর বনে সুন্দরী কাঠও পাওয়া যায় বলেই এর নামকরণ হয়েছে সুন্দরবন।
জলদস্যু, ভুমিদস্যু আর বাঘের চামড়ার চোরাব্যবসায়ী ছাড়া অন্যকোন সাধারণ মানুষ কোনভাবেই এ জঙ্গলে প্রবেশ করতে পারবে না। পানি নেমে গেলেও গড়ান গাছের শেকড় ধারালো ছুলফির ফলার মত হয়ে উঠে। ভেতরে প্রবেশ তো দূরের কথা কাছাকাছি গিয়ে দেখতে গেলেও গাঁ চমচম করে উঠবে। তার উপর সাপের বাসতো আছেই। সাপের চেয়েও ভয়ঙ্কর সুন্দরবনের মৌমাছি। আগে আগে চুরি করে মৌ খেতে গিয়ে মৌমাছির আক্রমনে বাঘ পলায়ন করতো।
সুন্দরবনের ভেতরের রূপ খুবই চিত্তাকর্ষক। ঈষৎ লোনাপানির ঘেরাও দেয়া চৌকোনাকৃতির দ্বীপ গুলি মুক্তোর মালার মত একে অপরের সাথে সংযুক্ত থেকে বাঘ ও ইরাওয়াদ্দি ডলফিনের মত বিরল প্রজাতির প্রানীকূলের অভয়ারণ্য হয়ে কাজ করে। বাঘের চামড়া চোরাই ব্যবসায়ী, ভূমিদস্যু আর জলদস্যুরা যেদিন থেকে সুন্দরবনে ঢোকার পথ খুঁজে পেয়েছে সেদিন থেকেই বিরল সেই প্রানীকূলের দূর্দিনের শুরু। ২০০৪সালে এক গণনায় দেখাগিয়েছিল সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ৪৪০টি। সেই সংখ্যা কমতে কমতে ২০১৫ সালে এসে দাড়ায় মাত্র ১০৬টিতে। ২০০৪ সালের গণনায় পাওয়া সংখ্যার মাত্র ৪ভাগের একভাগের চেয়েও কম।
আশার বিষয় হলো, ২০১৮সালের এক গণনায় দেখা গেছে বাঘের পরিমানের সেই সংখ্যা কিছুটা হলেও ভাল হয়েছে এবং বর্তমানে বাঘের সংখ্যা ১১৪টি। বাঘের বর্তমান সংখ্যা নির্ণয়ের জন্য গবেষকগন ৬৪০ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে কৌশলগত ৫৩৬টি এলাকায় ক্যামেরা লাগিয়ে ৬৩টি বয়স্ক বাঘ, ৪টি তরুণ বাঘ এবং ৫টি শিশু বাঘ দেখতে পান। এ থেকে গবেষকদের ধারণা বর্তমানে বাঘের সংখ্যা অনুমানিক ১১৪টি হবে।
অবশ্য অবস্থার এমন পরিবর্তন এমনিতেই হয়নি। বিগত দিনে বাঘের সংখ্যা হ্রাস হয়ে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশ সুন্দরবনে বিশেষ পাহাড়ার ব্যবস্থা করে। বাঘের অভয়ারণ্য রক্ষায় বিশেষ পাহাড়া বসানো হয়। ফলে অবশেষে এ পরিবর্তন গড়ে উঠে। কিন্তু সুন্দরবনের দুর্দশা যেনো শেষ হবার নয়। দেশী-বিদেশী সংবাদপত্র থেকে জানা যায়, সুন্দরবনের ৭০ভাগ ভূমি সমুদ্র পৃষ্ট থেকে মাত্র কয়েক ফুট উঁচুতে আছে। এতে করে আগামী ৫০ বছরের মধ্যে সুন্দর বনের বাঘ একেবারেই অদৃশ্য হয়ে যাবে। স্বাভাবিক প্রশ্ন, সুন্দরবন রক্ষায় তা’হলে ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে? তথ্য সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস, এটলাস অব্সকোরা ও অন্যান্য গণমাধ্যম। বাঘের ছবি: সৌম্যজিৎ