মুক্তকথা ভাষ্য।। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রমোদীর মধ্যে গত শনিবার ৫ই অক্টোবর দিল্লীর হায়দরাবাদ হাউসে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হয়েছে। সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা গেছে আনুষ্ঠানিক দ্বিপাক্ষিক আলোচনার আগে উভয় প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে কিছু সময় একান্তে আলোচনাও হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এবারের ভারত সফরে দুই দেশের মধ্যে ৭টি সমঝোতা স্মারকে দস্তখত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৪দিনের এই দিল্লী সফর থেকে বাংলাদেশ কি পেয়েছে এমন এক প্রশ্ন এনে বিবিসি’র দিল্লী প্রতিনিধি বিবিসি ডট কম’এর বাংলা পাতায় খুব গুরুত্ব দিয়ে রসিয়ে লিখেছেন। তার মতে বাংলাদেশ কিছুই পায়নি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের মনের কথা বলে উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন যে এ দফায় তিস্তা নিয়ে আলাদা কোন সমঝোতা বা চুক্তি সই হয়নি।
তিস্তা নিয়ে কোন চুক্তি হয়নি ঠিকই কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছেন যে ২০১১সালে উভয় দেশের সরকার যে অন্তর্বর্তী চুক্তি কাঠামোয় একমত হয়েছিল তার বাস্তবায়ন দেখতে বাংলাদেশের মানুষ অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে। উত্তরে মোদীও বলেছেন যে, তিস্তায় সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সাথে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে তার সরকার যাতে যত দ্রুত সম্ভব একটি তিস্তা চুক্তি সম্পাদন করা যায়। আর বিবিসি প্রতিনিধি তিনি নিজেই তার রিপোর্টে একথার উল্লেখ করেছেন এবং এগুলো কোন নতুন কথা নয় বলে তিনি মন্তব্যও করেছেন।
তার ওই রিপোর্ট থেকে আরো যা জানা গেছে তা’হলো, তিস্তা ছাড়াও মনু, মুহুরি, খোয়াই, গোমতী, ধরলা, দুধকুমার এ ৬টি অভিন্ন নদীর পানি বন্টনের বিষয়ে স্বল্প সময়ে একটি খসড়া কাঠামো প্রস্তুত করতে উভয় নেতা যৌথ নদী কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়াও ফেনী নদীর পানি ভাগাভাগি নিয়ে অন্তর্বর্তী চুক্তির কাঠামো তৈরী করতেও নদী কমিশনকে বলা হয়েছে। এ কথা লিখতে গিয়ে বিবিসি’র দিল্লী প্রতিনিধি অনেকটা চুপি চুপি বলার মত করে লিখেছেন-“এই ফেনী নদী থেকেই ১.৮২ কিউসেক পানি নিয়ে ত্রিপুরার সাব্রুম শহরে পানীয় জল সরবরাহেও বাংলাদেশ রাজি হয়েছে।” এখানেও তিনি মন্তব্য আকারে লিখেছেন-“তিস্তা চুক্তির প্রশ্নে এই সফরে আদৌ যদি কোনও অগ্রগতি হয়ে থাকে, তা এটুকুই।”
অনেকটা একই সুরে বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক পক্ষ গতকালই সাংবাদিক ডেকে দেশের মানুষকে হুবহু তথ্য দিয়ে রাজনৈতিক মাঠ তাদের পক্ষে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করেছেন।
উভয় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া যৌথ বিবৃতিতে রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার না করায় বিবিসি’র ওই প্রতিনিধি তেমন খুশী নন বলে মনে হয়েছে। তিনি লিখেছেন যে এই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরৎ পাঠানোর কাজে ভারত আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করুক, মিয়ানমারের উপর আরও বেশি করে তাদের প্রভাব কাজে লাগাক যা বাংলাদেশ বহুদিন ধরে জানিয়ে আসছে উল্লেখ করে এর পরই তিনি খবর দিয়েছেন যে রোহিঙ্গাদের দ্রুত ও নিরাপদ প্রত্যাবাসনের পথ প্রশস্ত করতে যে অধিকতর প্রয়াস দরকার, তারা সে বিষয়ে একমত হয়েছেন।
বুঝা যায় তিনি খুশী নন এজন্য যে, রোহিঙ্গা শব্দ ব্যবহার না করে উভয় নেতা বিবৃতিতে বলেছেন-“মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে আশ্রয়চ্যুত মানুষজন” বলে লিখায়। এতে করে মিয়ানমারের উপর থেকে আগুন দিয়ে মানুষসহ বাড়ী-ঘর পুড়ানো ও গণহত্যার দায় মুছে ফেলা হয়। এ ছাড়াও রোহিঙ্গা বিষয়ে মিয়ানমারকে অধিকতর চাপ দিতে বাংলাদেশ চেয়ে আসছে উল্লেখ করে তিনি বলেছেন-“…আরও বলিষ্ঠ ভূমিকা বাংলাদেশ আশা করছিল, তা তেমন পূর্ণ হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না।”
এদিকে রোহিঙ্গাদের জন্য এ পর্যন্ত ভারত, বাংলাদেশে যে ত্রাণ পাঠিয়েছে সে জন্য বাংলাদেশ ভারতকে ধন্যবাদ জানিয়েছে।
তিনি বেশ নাখোশ হয়েই আরো লিখেছেন- “ভারত ও বাংলাদেশ এদিন যে যৌথ বিবৃতিটি জারি করেছে, সেই সুদীর্ঘ বয়ানের কোথাও এনআরসি শব্দটির উল্লেখ পর্যন্ত নেই।” “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চেয়েছিলেন এনআরসি নিয়ে বাংলাদেশের দুশ্চিন্তার কিছু নেই – এই আশ্বাসটা সরাসরি প্রধানমন্ত্রী মোদীর মুখ থেকে আসুক।” তার ভাষায় এটাই ছিল বাংলাদেশের প্রত্যাশা। ফলে যৌথ বিবৃতিতে বিষয়টি না আশায় বাংলাদেশের অস্বস্তি থেকেই গেল, এমনই ভাব প্রকাশ করেছেন তিনি। |