সৈয়দ বয়তুল আলী।। মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় লোকালয়ে বাঁদরামি করে শিশু, শিক্ষার্থী সহ ৩০ জনকে আহতকারী সেই বন্যবানরকে অবশেষে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে ঘুমের ওষুধ মিশানো ভাত খাইয়ে দিনব্যাপি ধাওয়া করে বিকেলে হতভাগা বানরকে ধরার পর উত্তেজিত জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে বানরটিকে মেরেফেলে। অভিযোগ রয়েছে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তাদের অত্র অঞ্চলের ইউপি চেয়ারম্যান বানরের হামলার বিষয়টি জানানোর পরও রেঞ্জ কর্মকর্তা গুরুত্ব দেননি।
জানা গেছে, বড়লেখা উপজেলার পাথারিয়া পাহাড়ের দলছুট একটি বন্যবানর প্রায় এক মাস আগে উপজেলার কাঠালতলী এলাকায় লোকালয়ে প্রবেশ করে। বানরটি কাঠালতলী, রুকনপুর, বড়খলা, দক্ষিণ মুছেগুল, উত্তরভাগসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে দাপিয়ে বেড়াতে গিয়ে মানুষের মনে ভয়ানক ভয়ের সৃষ্টি করে। সুযোগ বুঝে সে নিরীহ পথচারীসহ শিশু শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালাতে থাকে। ওই বন্য বানরের হামলায় শিকার হন বড়খলা গ্রামের এক শিশু, শিক্ষার্থী, মহিলাসহ অন্তত ৩০ব্যক্তি। বানরের হামলায় শিকার হওয়া সকলকেই সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।এখনো কয়েকজন গুরুতর আহত অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বানরের উপদ্রপে অতিষ্ট লোকজন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের শরনাপন্ন হলে তিনি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তাদের খবর দেন। ১০ দিন পূর্বে রেঞ্জ কর্মকর্তা ঘটনাস্থলগুলো পরিদর্শন করে বনাঞ্চলে প্রত্যাবর্তনের কোন ব্যবস্থা না নেয়াতে বন্যবানরের আক্রমনে অতিষ্ট হয়ে উঠে গ্রামবাসী। তখন থেকেই হতভাগা বানরটিকে মেরে ফেলার জন্য ৬-৭ গ্রামের বাসিন্দারা ধাওয়া শুরু করেন। অবশেষে গত মঙ্গলবার সকালে ভাতের সাথে অতিমাত্রায় ঘুমের ওষুধ খাইয়ে নেশাগ্রস্তকরে তাকে বাগে আনেন। উত্তেজিত জনতা বিকেল ৩টার দিকে একটি ধান ক্ষেতের চুতুর্দিক ঘেরাও দিয়ে লাটিসোটার আঘাতে অর্ধমৃত অবস্থায় আটক করে পরবর্তীতে উত্তেজিত জনতা বন্যবানরটিকে মেরেফেলে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এনাম উদ্দিন বলেন, প্রায় একমাস ধরে ৬-৭ গ্রামের লোকজন ওই বন্যবানরের আক্রমনে আতংকিত ছিলেন। এর হামলায় এক শিশু সহ আহত হয়েছেন আরো ৩০ জন। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগে খবর দিলে রেঞ্জ কর্মকর্তাগন কয়েকদিন আগে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। কিন্তু লোকালয় থেকে তাড়ানোর তেমন কোন উদ্যোগ নেননি। এনাম উদ্দিন আরো বলেন, বানরটির আক্রমনের বিষয়টি তিনি উপজেলার আইন শৃঙ্খলা সভায়ও উত্তাপন করেন কিন্তু বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগ থেকে তেমন গুরুত্ব দেয়া হয়নি।
বন্যপ্রাণী সংরক্ষন বিভাগের গাপলাতির কারণেই এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি জানান। বানরের আক্রমনে অতিষ্ট হয়ে ৬-৭ গ্রামের লোকজন এক হয়ে বানরটিকে মেরে ফেলে ।
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা জুলহাজ উদ্দীন জানান, বানরের উপদ্রবের খবর পেয়েছি। বন্যবানরটির প্রত্যাবর্তনের কোন উদ্যোগ নিয়েছিলেন কি এমন প্রশ্নে উনি নিরব থাকেন।