মুক্তকথা সংবাদকক্ষ।। জাসদ সভাপতি, তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি বলেছেন, বর্তমান জাতীয় ও বিশ্ব পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে সেখান থেকে আরেক ধাপ অগ্রগতি ও জাতীয় উলম্ফনের জন্য নয়টি বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ জাতীয় প্রচেষ্টা জরুরি।
শনিবার বিকাল ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জাসদের সহযোগী সংগঠন জাতীয় যুব জোটের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
১. গতানুগতিক রাজনীতির বাইরে গিয়ে দেশের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন ঘটিয়ে জাতীয় উলম্ফনের জন্য দুর্নীতি-ক্ষমতার অপব্যবহার-লুটপাটের দুষ্টচক্র ধ্বংস করে সুশাসন ও আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতিবাজ-ক্ষমতার অপব্যবহারকারী-লুটেরারা ধরা ছোয়ার বাইরে না এটা প্রমাণ করতেই হবে।
২. দেশে রাজনৈতিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য মুক্তিযুদ্ধসহ অতীতের সকল ঐতিহাসিক গণআন্দোলনে মীমাংসিত বিষয়সমূহকে অমীমাংসিত করা সকল অপচেষ্টা বন্ধ করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ইতিহাস নিয়ে বিতর্কের অবসান করতে হবে। পাকিস্তানীপন্থার রাজনীতি তথা সাম্প্রদায়িক-মৌলবাদী-জঙ্গিবাদী-সন্ত্রাসবাদী রাজনীতি ও তাদের পৃষ্ঠপোষক জামাত-বিএনপিকে রাজনীতির মাঠ থেকে চিরতরে বিদায় করতে হবে। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের দোহাই দিয়ে দেশ বিরোধী এই শক্তিগুলোর প্রতি নমনীয়তা ও ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নাই। এ কথা রাজনৈতিক বিদ্বেষ না, রাজনৈতিক বাস্তবতা। ইতিহাস ও তথ্য প্রমাণ করে জামাত-বিএনপি সুযোগ পেলেই গণতন্ত্রের পিঠে ছোবল হানে। বিএনপি-জামাত সাম্প্রদায়িক-জঙ্গিবাদ-মৌলবাদ উৎপাদন পুনরুৎপাদনের কারখানা।
দুর্নীতি-ক্ষমতার অপব্যবহার-লুটপাটের দুষ্টচক্র ধ্বংস করে সুশাসন ও আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে। |
৩. সংবিধান পর্যালোচনা করে সংবিধান থেকে অসংগতি ও গোজামিল দূর করতে হবে। শাসন-প্রশাসনে গুণগত পরিবর্তন আনতে, রাজনীতিতে ভারসাম্য তৈরি করতে, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করতে, আরো গণতন্ত্র, অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র, জনগণের ক্ষমতায়ন করতে জাতীয় সংসদে উচ্চ কক্ষ গঠন করে দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদীয় ব্যবস্থা চালু, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন চালু, জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন পরিষদকে স্বাধীন সংস্থা হিসাবে গড়ে তুলে কার্যকর স্থানীয় শাসন চালু করতে হবে।
৪. বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী মুক্তবাজার অর্থনীতি শ্রমিক-কৃষক-নারী-যুবক-ছাত্রদের স্বীকৃত অধিকার অস্বীকার করেছে। মুক্তবাজার অর্থনীতি, বৈষম্য-দারিদ্র বৃদ্ধি ছাড়া আর কিছুই দিতে পারছেনা। পরিবেশ ও প্রকৃতি ধ্বংস করেছে। শীতল যুদ্ধের অবসানের পর শান্তি প্রতিষ্ঠার কথা বলা হলেও মুক্তবাজার অর্থনীতির স্বর্গরাজ্য পশ্চিমা দুনিয়ার দেশগুলো নিজেদের দেশেই তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত হয়ে যুদ্ধ উন্মাদনা তৈরি করে, যুদ্ধ রফতানি করে, যুদ্ধ ব্যবসা করে বাঁচার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য মুক্তবাজার অর্থনীতির উপর ছেড়ে দেয়া যায় না। নিত্যপণ্যের বাজার ব্যবস্থাপনায় পরিকল্পনাহীনতার সুযোগ নিয়ে বাজার সিন্ডিকেট যেন আর কারসাজির সুযোগ না পায়, কৃষকদের ফসলের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় আর যেন কাঁদতে না হয়, শ্রমিকদের ন্যূনতম জাতীয় মজুরি না পাওয়ায় আর যেন হাহাকার করতে না হয় তার জন্য মুক্তবাজার অর্থনীতির ভ্রান্ত ও ব্যর্থ ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে সংবিধান নির্দেশিত সমাজতন্ত্র লক্ষ্যাভিমূখী অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
জাতীয় সংসদে উচ্চ কক্ষ গঠন করে দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদীয় ব্যবস্থা চালু, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন চালু, জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন পরিষদকে স্বাধীন সংস্থা হিসাবে গড়ে তুলে কার্যকর স্থানীয় শাসন চালু করতে হবে। |
৫. দেশে বিদ্যমান শিক্ষা ব্যবস্থায় নৈরাজ্য-বিশৃংখলা-মানের নিম্মগামীতা রুখতেই হবে। শিক্ষা প্রশাসনকে দুর্নীতি ও দলবাজী মুক্ত করতে হবে। দেশপ্রেমিক নাগরিক ও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। একজন শিক্ষিত যুবকও যেন বেকার না থাকে সেই লক্ষ্যে দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র সম্প্রসারণ করতে হবে। লুটপাট-অপচয় বন্ধ করে সেই টাকায় বেকারদের বেকারভাতা দিতে হবে।
৬. ডিজিটাইজেশন বা তথ্য প্রযুক্তির সর্ব ব্যাপক উত্থান গোটা দুনিয়ার যে নতুন বাস্তবতা তৈরি করেছে সেই ডিজিটাল ও সাইবার জগতের সাথে খাপ খাইয়ে, তা আয়ত্বে এনে এগিয়ে চলার জন্য জাতীয় ডিজিটাল ও সাইবার ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে।
৭. বিশ্ব জলবায়ূ পরিবর্তনে সব চাইতে বেশি ঝুঁকিগ্রস্ত দেশগুলির অন্যতম বাংলাদেশ। জলবায়ূ পরিবর্তন ঝুঁকি মোকাবেলায় জাতীয় সক্ষমতা অর্জনে সমন্বিত নীতি ও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
মুক্তবাজার অর্থনীতি, বৈষম্য-দারিদ্র বৃদ্ধি ছাড়া আর কিছুই দিতে পারছেনা। মুক্তবাজার অর্থনীতির স্বর্গরাজ্য পশ্চিমা দুনিয়ার দেশগুলো নিজেদের দেশেই তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত হয়ে যুদ্ধ উন্মাদনা তৈরি করে, যুদ্ধ রফতানি করে, যুদ্ধ ব্যবসা করে বাঁচার চেষ্টা করছে। মুক্তবাজার অর্থনীতির ভ্রান্ত ও ব্যর্থ ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে সংবিধান নির্দেশিত সমাজতন্ত্র লক্ষ্যাভিমূখী অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। |
৮. বাংলাদেশ জনসংখ্যা বিস্ফোরণের ঝুঁকির দিকে এগুচ্ছে। মাথা পিছু জমি, চাষযোগ্য জমি, বন, নদী, খাল, বিল, জলাশয় ভরাট ও দখল হয়ে আশংকাজনকভাবে কমে যাচ্ছে। জনসংখ্যা বিস্ফোরণে ঝুঁকি ও চাপ মোকাবেলায় জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনায় সমন্বিত নীতি ও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৯.বিশ্বায়ন, আঞ্চলিকায়ন, বাণিজ্যায়ন ও যোগাযোগায়নে দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে দেশের স্বার্থ সমুন্বত রাখতে বহুমাত্রিক কৌশলের ভিত্তিতে জোড়ালো কূটনৈতিক নীতি প্রণয়ন করতে হবে।
ইনু বলেন, যুব সমাজ পরিবর্তনের চালিকা শক্তি। দেশের রাজনীতি-অর্থনীতিতে গুনগত পরিবর্তন ও জাতীয় উলম্ফনের লক্ষ্যে জাতীয় মতামত তৈরি করতে যুব সমাজকেই অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে।
জাতীয় যুব জোটের সভাপতি রোকনুজ্জামান রোকনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি, কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট রবিউল আলম এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও জাসদ স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সম্মেলন প্রস্তুতি পরিষদের আহ্বায়ক মির্জা মোঃ আনোয়ারুল হক। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন জাতীয় যুব জোটের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শরিফুল কবির স্বপন। সূত্র: প্রেসবিজ্ঞপ্তি