কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার।। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট এর নির্দেশনায় কমলগঞ্জে সর্বত্র দোকানপাট বন্ধে হঠাৎ প্রশাসন ও পুলিশি অভিযান শুরু হলে, অজানা আতঙ্কে চলে হুড়োহুড়ি। করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট এর নির্দেশনায় মৌলভীবাজার জেলার সর্বত্র ফার্মেসী, কাঁচাবাজার, হাসপাতাল জুরুরী সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্যান্য দোকানপাট, শপিংমল, রাস্তার পাশের দোকান, হোটেল রেস্তোরা বন্ধের নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এ নির্দেশনার পর কমলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে অবাদে দোকানপাঠ ও বিপনী বিতান খোলা থাকায় বুধবার দুপুরে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন অভিযান শুরু করলে সর্বত্র হুড়োহুড়ি শুরু হয়।
বুধবার সকাল থেকে কমলগঞ্জের হাটবাজারে দোকানপাট খোলা থাকছে কিনা, থাকলে ও কোন ধরণের দোকানপাট খোলা থাকছে তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে নানা প্রশ্ন দেখা দেয়। আগামীতে কি হচ্ছে বা হবে, কোন দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় কিনা তা ভেবে সকাল থেকেই ক্রেতারা বাজারে এসে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে অতিরিক্তহারে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী কিনতে দেখা যায়। বেলা ২টায় আকস্মিকভাবে উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা স্থানীয় জনপ্রতনিধিদের নিয়ে কমলগঞ্জ সদরের ভানুগাছ ও শমশেরনগরের হাট-বাজারে অভিযান চালায়। এসময় মানুষজন ফল থেকে শুরু করে কাঁচা বাজার ও মোদী সামগ্রী কেনায় ব্যস্ত ছিলেন। আকস্মিকভাবে পুলিশি অভিযানে দোকানীরা দোকানপাট বন্ধে আর ও ক্রেতারা কেনা সামগ্রী সামাল দিয়ে দৌড় শুরু করেন। এ অবস্থায় অনেক ক্রেতাকে দৌড়ে হাপিয়ে উঠতে দেখা গেছে।
আলাপকালে কয়েকজন ব্যবসায়ী ও ক্রেতা বলেন, সরকারি এ নির্দেশনা মাইকিং করে প্রচার করলে মানুষজনও বাজারে আসতেন না। তারা আজকের এ অবস্থায় সাধারণ মানুষজনের মাঝে নতুন করে আতঙ্ক বিরাজ করছে বলেও জানান।
কমলগঞ্জ থানার ওসি আরিফুর রহমান বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে হাট বাজারের জন সমাগম কমাতে মৌলভীবাজারের জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট নাজিয়া শিরিন স্বাক্ষরিত জরুরি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বুধবার হাটবাজারে এ অভিযান পরিচালিত হয়েছে। এখানে আতঙ্কের কিছু ছিল না। ইতোমধ্যেই গণ মাধ্যমে প্রচার করে সরকারিভাবে এ নির্দেশনা প্রচার করা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য সু-রক্ষায় এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতা ও সাধারণ মানুষজনের সাথে প্রশাসনিক ও পুলিশ প্রশাসন থেকে কোন প্রকার খারাপ আচরণও করা হয়নি।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এর নির্দেশনায় ফার্মেসী, খাবার, কাঁচাবাজার, হাসপাতাল ও জরুরী সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ব্যতীত বিপনী বিতান, রাস্তার ধারের চায়ের দোকান, হোটেল- রেস্তোরা বন্ধ রাখার জন্য এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান।
৪৯তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে করোনা ভাইরাস সংক্রমনের কারণে সরকারী নির্দেশে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন শুধুমাত্র আনুষ্টানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছে। ২৬ মার্চ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় সামনে আনুষ্টানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মো. রফিকুর রহমান, ইউএনও আশেকুল হক, কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আরিফুর রহমান। এসময় উপস্থিত ছিলেন কমলগঞ্জ থানার ওসি(তদন্ত) সুধীন চন্দ্র দাস। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে লোকসমাগম নিষিদ্ধ করায় কোন অতিথি বা দর্শনার্থী ছিলেন না অনুষ্টানে।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের কালেঙ্গা গ্রাম থেকে গত বুধবার রাতে একটি মায়া হরিণ উদ্ধার করে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ। উদ্ধারকৃত হরিণসহ আরও একটি লজ্জাবতী বানরসহ মোট দুটি প্রাণীকে বৃহস্পতিবার(২৬ মার্চ) সকাল ৭টায় কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে অবমুক্ত করা হয়।
বন্যপ্রানী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের লাউয়াছড়া বনরেঞ্জ সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার সন্ধ্যায় বন থেকে লোকালয়ে বের হয়ে কালেঙ্গা গ্রামের বাদশাহ মিয়ার বাড়ির সামনে একটি মায়া হরিণ মানুষের হাতে ধরা পড়ে। এ খবর পেয়ে বন্যপ্রানী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের লাউয়াছড়া বনরেঞ্জ কর্মকর্তার নেতৃত্বে বন কর্মীরা কালেঙ্গা গ্রাম থেকে ধৃত মায়া হরিণটিকে উদ্ধার করেন। পরে বৃহস্পতিবার মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে পূর্বে ধৃত আরও একটি লজ্জাবতী বানরসহ দুটি প্রাণীকে সকাল ৭টায় লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে অবমুক্ত করা হয়। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বন্যপ্রানী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারি বন সংরক্ষক আনিসুর রহমান ও লাউয়াছড়া বনবিট কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন।
লাউয়াছড়া বনরেঞ্জ কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন উদ্ধারকৃত মায়াহরিণসহ দুটি প্রাণী অবমুক্তের সত্যতা নিশ্চিত করেন।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক শাহ-আলমের নেতৃত্বে বুধবার রাতে দেওছড়া চা বাগান থেকে ২৫ লিটার দেশী মদসহ এক ব্যক্তি আটেক করেছে। তার নাম মনোরঞ্জন রবিদাস (৩৫)। শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক (তদন্ত) অরুপ কুমার চৌধুরী জানান, চা বাগানে এখন মাদক বন্ধে অভিযান চলছে। এর মাঝে একটি চক্র গোপনে দেশী মদ তৈরী করে বিক্রি করছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার রাতে শমশেরনগরের ফাঁড়ি চা বাগান দেওছড়ায় অভিযান চালিয়ে এক মনোরঞ্জন রবিদাস নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়। তার কাছ থেকে ১০ লিটার মদ ও ১৫ লিটার মদ তৈরী তরল উপকরণ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হলে আটক ব্যক্তিকে গ্রেফতার দেখিয়ে বৃহস্পতিবার মৌলভীবাজার আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের আদমপুরে নঈনারপার গ্রামে এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নিজ উদ্যোগে দিন মজুর, রিক্সাচালক, সিএনজি অটো চালক, ইজিবাইক চালক ও পথচারীদের মাঝে ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাস্ক ও ডিটারজেন্ট পাউডার বিতরণ করেন। আদমপুর ইউনিয়নের নঈনারপার বাজারের স্টাইল টেইলার্সের মালিক মতিউর রহমান তার দুই ভাই জিল্লুর রহমান ও জুয়েল মাহমুদকে নিয়ে গত বুধবার (২৫ মার্চ) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কমলগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি সাব্বির এলাহী, ওয়ার্ড ইউপি সদস্য বশির বক্স, পল্লী চিকিৎসক সমীজ মিয়া ও পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তা রহমত আলী প্রমুখ।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মতিউর রহমান বলেন, অনেক শ্রমজীবি মানুষ সচেতনতা ও সামর্থ্যরে অভাবে মাস্ক ও হাত ধোয়ার ডিটারজেন্ট পাউডার কিনতে পারছে না। তিনি নিজের দোকানে কাপড় দিয়ে মাস্ক বানিয়ে ও ডিটারজেন্ট কিনে এসব বিতরণ করেন।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে করোনো ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সিভিল প্রশাসনকে সহযোগিতার লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এক মতবিনিময় করেছেন ক্যাপ্টেন রেদোয়ান আহমদ। বৃহস্পতিবার(২৬ মার্চ) দুপুরে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মো. রফিকুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশেকুল হক, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাসরিন চৌধুরী, কমলগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) সুধীন চন্দ্র দাস, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: এম, মাহবুবুল আলম ভূঁইয়া।
মতবিনিময় সভায় করোনো ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব তৈরিতে সাধারণ মানুষকে বিনা কারণে ঘর থেকে বের হওয়া রোধ ও বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতকরণে এক যোগে কাজ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বৃহস্পতিবার থেকেই সেনাবাহিনীর ৩৫ সদস্যের একটি টিম কমলগঞ্জ উপজেলায় নিয়োজিত থাকবেন। শুক্রবার থেকে প্রতিদিন সকালে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সেনা সদস্যরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করবেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশেকুল হক জানান, কমলগঞ্জ উপজেলায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপসমূহ অধিকতর ফলপ্রসূ করতে সিভিল প্রশাসনকে সহযোগিতা করার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৫ সদস্যের একটি দল বৃহস্পতিবার তাদের কার্যক্রম শুরু করে। এর আগে তারা তাদের কর্মপরিকল্পনা ঠিক করতে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হন। তিনি আরো বলেন, অহেতুক জনগণ যেনো বাইরে না আসেন। নিজ ঘরে আবদ্ধ থেকে করোনা সংক্রমন প্রতিরোধে সরকারকে সহযোগিতা করবেন। অন্যথায় কঠোর ভাবে আইন প্রয়োগ করা হবে।