কমলগঞ্জ প্রতিনিধি।।
দেশের গ্রাম অ লের অধিকাংশ হাট-বাজার সংকীর্ণ স্থানে থাকার ফলে হাট-বাজারে অবস্থানরত ক্রেতা বিক্রেতাদের মধ্যে করোনা ভাইরাস সংক্রমনের ঝুঁকি থেকে যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় গ্রামীন হাট বাজারগুলোতে ক্রেতা বিক্রেতাগনের সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে ক্রয় বিক্রয় করা প্রয়োজন।
করোনা ভাইরাস হ্রাসকল্পে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে ক্রয়-বিক্রয় নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ পৌরসভার ভানুগাছ বাজারের সবজি ও মাছের বাজার মঙ্গলবার (১৪ এপ্রিল) থেকে ভানুগাছ রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় স্থানান্তর করা হচ্ছে। সোমবার (১৩এপ্রিল) কমলগঞ্জের ভানুগাছ রেলওয়ে স্টেশন মাঠ পরিদর্শন করেন কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. রফিকুর রহমান, কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আরিফুর রহমান, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আছলম ইকবাল মিলন, সাধারন সম্পাদক এড. এএসএম আজাদুর রহমান, জেলা পরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ মো. হেলাল উদ্দিন, পৌর কাউন্সিলর মোঃ আনোয়ার হোসেন, ভানুগাছ পৌর বাজার বণিক সমিতির সাধারন সম্পাদক এড. মো. সানোয়ার হোসেনসহ ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধকালে সরকারি নির্দেশনা না মেনে বাড়ির বাহিরে বের হওয়াসহ নানা অপরাধের জন্য বিশেষ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ পৌরসভার ভানুগাছ বাজারে ১০টি মামলা হয়েছে। ১০টি মামলায় জরিমানা আদায় করা হয়েছে ১০ হাজার ৯০০ টাকা। শনিবার, ১১ এপ্রিল সকালে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হকের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী সদস্য ও পুলিশের সহায়তায় এ অভিযান পরিচালিত হয়।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার সকাল ১১টায় ভানুগাছ বাজারে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে ১৫টি মামলা করা হয়েছে। এর মাঝে মোটরযান ১৯৮৩ আইন লঙ্গণের ৩টি মামলায় ৫শত টাকা করে ১৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। সংক্রামক রোগে প্রতিরোধ ও নির্মল আইন ২০১৮-তে ১টি মামলায় ৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়াও বর্তমান সরকারি আইন অমান্য করার দায়ে দন্ডবিধি ১৮৬০ ধারায় ১১টি মামলায় ৬৪০০ টাকা জরিমানা করা হয়। মোট ১৫টি মামলায় ১০ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা করে তা আদায় করা হয়েছে। কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ১৫টি মামলা ও নগদ ১০ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা আদায়ের সত্যতা নিশ্চিত করেন।
তিনি আরও বলেন, এত কিছুর পরও কেন বিনা কারণে ছেলেরা মোটরসাইকেল নিয়ে বের হয়, বিনা কারণে মানুষজন বের হচ্ছে তা বুঝতে পারছেন না। তিনি আরও বলেন, কমলগঞ্জ উপজেলায় আগের চেয়ে মানুষজন কম বের হচ্ছে। এই মহামারি থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে মানুষজনকে ঘরে থেকে নিয়ম কানুন মেনে চলতে হবে । অন্যতায় বড় বিপদ ডেকে আনবে।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের শমশেরনগরে সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী হাকিম নাসরিন চৌধুরীর নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যদের যৌথ উপস্থিতিতে বিশেষ অভিযানে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে একটি আইসক্রীম কারখানা ও একই এলাকায় একটি করাতকল (স’মিল) চালানোর দায়ে কারাখানা ও করাতকল মালিকের নগদ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সোমবার বেলা ২টায় শমশেরনগর বিমানবন্দর সড়কে এ অভিযান চলে।
কমলগঞ্জ উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী হাকিম নাসরিন চৌধুরী ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে জরিমানা করে তা আদায়ের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ সময়ে কোনভাবে আইসক্রীম কারখানা ও করাতকল চালু রাখা ঠিক নয়। তাছাড়া আইসক্রীম কারখানাও করাতকল একই সীমানা প্রাচীরের মধ্যে রয়েছে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারি নির্দেশনায় সারাদেশে লোক সমাগম বন্ধ, গণ-পরিবহন বন্ধ বিভিন্ন এলাকা লকডাউন হলে দুর্ভোগের মাঝে পড়েন খেটে খাওয়া মানুষজন। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগরের যুক্তরাজ্য প্রবাসী এক ব্যক্তি ও নবধারা শমশেরনগরের উদ্যোগে এবার ৫০টি পরিবারে মাসে দুই কিস্তিতে টানা ৩ মাসেসর খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। সোমবার বিকাল সাড়ে ৩টায় শমশেরনগর ডাকবোংলোয় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন শমমেরনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জুয়েল আহমদ ও পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক (তদন্ত) অরুপ কুমার চৌধুরী।
নবধারা শমশেরনগর সূত্রে জানা যায়, যুক্তরাজ্য প্রবাসী শমশেরনগরের সন্তান মো. আমিনুল ইসলাম নগদ ২ লাখ ১০ হাজার টাকা সহায়তা দিলে সংগঠনের (নবধারা শমশেরনগর) আরও আর্থিক সহায়তা মিলিয়ে অতি দরিদ্র অসহায় ৫০ পরিবার বাছাই করা হয়। বাছাইকৃত এসব পরিবারে প্রতি ১৫ দিন অন্তর ১১ কেজি চাল, ১ কেজি ডাল, ২ কেজি পেঁয়াজ ১ লিটার ভোজ্য তেল, ৪ কেজি আলু, ১টি সাবান,১টি মাস্ক, কেজি লবনসহ অন্যান্য সামগ্রী প্রদান করা হবে। টানা ৩ মাসে তারা ৬ কিস্তিতে এসব খাদ্য সামগ্রী পাবে। মূল অর্থ সহায়তাকারী প্রবাসী মো. আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন পরবর্তীতে আরও কিছু দরিদ্র অসহায়দেরও এভাবে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে।
নবধারা শমশেরনগরের সমন্বয়ক প্রভাষক আবু সাদাত মো. সায়েম জানান, তাদের সংগঠনের কোন সভাপতি সম্পাদক নেই। প্রতি তিন মাস অন্তর একজন সমন্বয়ক হয়ে থাকেন। তারা সম্মিলিতভাবে স্থানীয় সমাজ উন্নয়ন মূলকসহ আর্থ মানবতার সেবায় স্বেচ্ছা শ্রমে কাজ করেন। আজকের টানা তিন মাসের খাদ্য সহায়তার সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন সংগঠনের সদস্য শামছুল হক (মিন্টু) আব্দুস সামাদ (সামাইল), মাহমুদুর রহমান (আলতা), আব্দুল কাদির (সাজু), মোকরামিন চৌধুরী (মুকুল), সৈয়দ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, শফিউল আলম (উজ্জল) মিজানুল হক ও ইজাজ নিশার (মুন) প্রমুখ।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের মুন্সিবাজার ইউনিয়নের ধীতেশ্বরপুর, সরিষাকান্দি ও মির্জানগর গ্রামের অসহায়, হতদরিদ্র ও কর্মহীন ৮৫টি পরিবারের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছে বাংলাদেশ মেডিকেল শিক্ষার্থী কমিউনিটি। গত রোববার (১২এপ্রিল) দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে বাড়ি বাড়ি গিয়ে এসব খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়। বাংলাদেশ মেডিকেল শিক্ষার্থী কমিউনিটির সদস্যদের নিজ অর্থায়নে প্রত্যেক পরিবারকে ৫কেজি চাল, ১কেজি ডাল, ১লিটার তেল, আধা কেজি পিয়াজ, ১কেজি লবন, ১কেজি আলু, সাবান ১টা, ১কেজি আটা সমন্বিত প্যাকেটজাত করে এসব খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়।
এসময় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ছাত্র সৈকত রায়, সিলেট রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজের ছাত্র ডা: মৃনাল কান্তি দেব, রংপুর মেডিকেল কলেজের ছাত্র দিলীপ কুমার নাথ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ছাত্র পলাশ সরকার, মিঠুন চক্রবর্তীসহ কমিউনিটির অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।