1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
আজীবন শিক্ষাব্রতী জ্ঞানান্বেষী একজন সুলেখক‌ও ছিলেন - মুক্তকথা
বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫৪ পূর্বাহ্ন

আজীবন শিক্ষাব্রতী জ্ঞানান্বেষী একজন সুলেখক‌ও ছিলেন

সংবাদদাতা
  • প্রকাশকাল : মঙ্গলবার, ৬ অক্টোবর, ২০২০
  • ১২২১ পড়া হয়েছে

[বেশ আগে আমাদের অগ্রজতূল্য পরম শ্রদ্ধেয় আব্দুল কাদির মাহমুদ ভাই এই লেখাটি আমাকে দিয়েছিলেন। কম্পিউটারের বিবর্তনে পুরোনো অক্ষর বিন্যাস হারিয়ে যায়। বহু সাধনায় অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে তবে তা উদ্ধার করতে সমর্থ হয়েছি। তাই আজ এখানে পত্রস্ত করলাম। -সম্পাদক]

সৈয়দ শামছুল ইসলাম : আজীবন শিক্ষাব্রতী জ্ঞানান্বেষী ও লেখক

-আব্দুল কাদির মাহমুদ

জীবনে অনেক জ্ঞানী নিষ্ঠাবান দক্ষ, ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন আদর্শবান শিক্ষকের সংস্পর্শে আসার আমার সৌভাগ্য হয়েছে। তাদের মধ্যে বিভিন্ন কারনে তিনজন শিক্ষক আমার নিকট স্মরনীয় হয়ে রয়েছেন। তাঁরা হলেন আমার পাঠশালার শিক্ষক মরহুম জনাব আব্দুল হামিদ আমেরিকান ইউনির্ভাসিটির শিক্ষক এডওয়ার্ড রিচার্ড ডঃ লেম্যান ও উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মরহুম সৈয়দ শামছুল ইসলাম।
জনাব আব্দুল হামিদ আমাদের বাড়ীতে জারগীর থাকতেন। তিনি এক বছরে আমাদের পাঠশালার পড়া শেষ করিয়েছিলেন। ডঃ লেম্যান প্রায় ২৭ বছর আগে যা পড়িয়েছিলেন তাঁর চর্চা না থাকলেও তার অসাধারণ পাঠ্য নৈপূন্যে ফলে এখনও ৫০% ভাগেরও বেশী মনে আছে। সৈয়দ শামছুল ইসলাম ছিলেন আমাদের ক্লাস টিচার। তিনি ছিলেন সাধারণ জীবন যাপনের অভ্যস্ত একজন নিষ্ঠাবান শিক্ষক। অনুকরনীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী জ্ঞান অন্বেষনে ভর্তি শ্রদ্ধাভাজন এ শিক্ষক জন্ম গ্রহণ করেন এক ধার্মিক ও সম্ভ্রান্ত পরিবারে মৌলভীবাজার জেলা সদরের অদূরে বালিকান্দি গ্রামে। তার পিতা মাওলানা নজির উদ্দিন আহমদ ছিলেন একজন প্রখ্যাত আলেম, বিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামী ও প্রাদেশিক খেলাফতের সম্পাদক।
মাওলানার ছেলে শামছুল ইসলাম মাদ্রাসায় পড়বেন এটাই ছিল স্বাভাবিক। তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার হাতে খড়ি মাদ্রাসায়ই হয়েছিল। ওল্ড স্কীম মাদ্রাসায় বাংলায় ইংরেজী বর্জিত উর্দু আরবী পার্সি শিক্ষা যে ব্যাপক জ্ঞান অর্জনের সহায়ক নয় সেটা শিশু বয়সেই তিনি উপলব্ধি করেছিলেন। এ ছাড়া এটাও উপলব্ধি করেছিলেন যে, মাতৃভাষার মাধ্যম ছাড়া প্রকৃত জ্ঞান অর্জন সম্ভব নয়। ইংরেজী শিক্ষা ছাড়া বিশ্ব জ্ঞানভান্ডারে প্রবেশ করা দুঃসাধ্য। তাছাড়া ওল্ড স্কীম মাদ্রাসায় গতানুগতিক উর্দু পার্সি আরবী শিক্ষা না বুঝে মুখস্থ করা তাঁকে শিক্ষার প্রতি নিস্পৃহ করে তুলে। তাঁর সাথে অনেকেই ইংরেজী পড়তেন। গোপনে তাদের বই পড়ে ইংরেজী ভাষার প্রতি তিনি আকৃষ্ট হন তিনি নিজেই বলেছেন, স্বদেশী মাদ্রাসায় পড়া লেখা ভালো লাগেনা বলে যা আমি গোপনে কিংসপ্রাইমার পড়িয়া শেষ করিয়া ফেলিয়ছিলাম। … মাইজিকে বুঝাইয়া বলিলাম ইংরেজী বাংলা বর্জিত শিক্ষার কোন মূল্য নাই। অবশেষে মায়ের চেষ্টায় নিউ স্কীম মাদ্রাসায় পড়ার বাবার অনুমতি পাওয়া গেলে ঝিঙ্গাবাড়ী মাদ্রাসা মৌলভীবাজারে নিউ স্কীম জুনিয়র মাদ্রাসা ও সিলেট আলিয়া মাদ্রাসায় পড়া শুনা করেন। মাদ্রাসার শিক্ষা শেষ করে ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে আইএ ও বিএ পাস করেন।
তার কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৪১ খ্রিঃ হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসাবে। পরবর্তীতে শিলচর করিমগঞ্জ সুনামগঞ্জ মৌলভী বাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় সমূহে শিক্ষকতা করেন। তিনি চাকুরীতে থাকাকালীন শিলচর সেন্ট এন্ডমান্ড কলেজ থেকে বি.টি ও ডঃ জাকির হোসেন (যিনি পরবর্তীতে ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন) এর তত্ত্বাবধানে দিল্লির খ্যাত নামা প্রতিষ্ঠান জামিয়া মিলিয়া থেকে বেসিক এডুকেশন কোর্স সম্পন্ন করেন।
১৯৪৭ খ্রিঃ ভারত বিভাগের পর মৌলভী বাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। ১৯৬৩-১৯৬৪ খ্রিঃ কিছুদিন সিলেট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসাবে কর্মরত ছিলেন। পুনরায় বদলী হয়ে মৌলভী বাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। দীর্ঘ ২৫ বছর ঐ স্কুলে চাকুরী করার পর ১৯৭২ খ্রিঃ অবসর গ্রহণ করেন। অবসর গ্রহনের পর কিছু দিন মৌলভী বাজার সহকুমা আদালতে অনারারী ম্যাজিষ্ট্রেট হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
মৌলভী বাজার জেলা শহর ও শহর তলীতে মাধ্যমিক শিক্ষার সুযোগ ছিল অত্যন্ত সীমিত। দু’টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ছাড়া মানসম্মত মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিলনা বললেই চলে। সম্প্রতি ফ্লাওয়ার কেজি এন্ড হাই স্কুল এই অভাব অনেকটা পুরন করেছে। আজীবন শিক্ষাব্রতী সৈয়দ শামছুল ইসলাম সরকারি চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ করার পর অর্থকরী কোন কাজ না করে শহরের অদূরে হিলাল পুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী স্থানে হজরত শাহহেলাল (র) এর নাম অনুসারে শাহ হেলাল উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। যার কার্য্যক্রম অতিঅল্প দিনের মধ্যে শুরু হয়। সৈয়দ শামছুল ইসলাম ঐ স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। তার নিরলস প্রচেষ্টায় ও কঠোর শ্রমের ফলে স্কুলটি মৌলভী বাজার জেলার একটি খ্যাতিসম্পন্ন বিদ্যালয়ের স্থান লাভ করে। শুরুর দিকেই পর পর দু’বার শাহ্ হেলাল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মেধা তালিকায় স্থান করে নেয়। ক্রমন স্কুলের পরিবেশ ও লেখা পড়ার সুনাম চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। শিক্ষা ও অবকাঠামোর প্রকৃত উন্নয়ন সাধনের পর সৈয়দ শামছুল ইসলাম প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে অব্যাহতি নেন।
মাতৃভাষার প্রতি অনুরাগ ও লেখালেখির চর্চা সূচনা সেই মাদ্রাসা জীবন থেকেই শুরু হয়। সিলেট আলিয়া মাদ্রাসায় অধ্যয়ন কালে বিতর্ক ও আলোচনা সভা ইত্যাদিতে তিনি সহ কিছু সংখ্যক ছাত্র উর্দু ভাষার পরিবর্তে মাতৃভাষা প্রয়োগের সক্রিয় ছিলেন। এ জন্য তাঁরা অধিকাংশ ছাত্র ও শিক্ষকদের বিরাগ ভাজন হয়েছিলেন। মাদ্রাসার পাঠ্যসূচীর বাইরে বাংলা পত্র পত্রিকা ও বই পুস্তুত যা ঐ সময় দূর্লভ ছিল সেই গুলোর প্রতি গভীর আগ্রহ জন্মে যা তার জ্ঞান পিপাসারই উজ্জল নিদর্শন। তাঁর ঘনিষ্ঠতম বন্ধু সিলেট সাহিত্য সংসদে প্রতিষ্ঠাতা জনাব নূরুল হক টি,কে মাদ্রাসায় অধ্যায়নকালীন ‘অভিযান’ নামে একটি হাতের লেখা ম্যাগাজিন বের করেন। এ অভিযানই পরবর্তীকালে আল-ইসলাহতে রূপান্তরিত হয়। এই পত্রিকাটি দেখে যুগভেরী সম্পাদক জনাব মকবুল হোসেন চৌধুরী মন্তব্য করেছিলেন, “মাদ্রাসা থেকে এইরূপ কিছু বের হবে তা কল্পনা করিনি। ভবিষ্যতে এর থেকে একদল লেখক বেরিয়ে আসবেন সে আশা আমরা করতে পারি”। জনাব মকবুল হোসেনের প্রত্যাশা বিফলে যায়নি। অভিযান থেকে যে লেখকরা বেরিয়ে এসেছিলেন সৈয়দ শামছুল ইসলাম নিঃসন্দেহে তাদের অন্যতম।
মাদ্রাসার পাঠ্য পুস্তুক বহির্ভূত পরিবেশ সম্বন্দে তিনি মন্তব্য করেছেন মাদ্রাসার ক্লাস রুমে উর্দু, আরবী, ইংরেজী পেপার আসিত তাঁর অল্পই মাদ্রাসার ছাত্ররা বুঝিতে পারিতেন। লন্ডন নিউজ নামক একটি পত্রিকা আসিত যার মূল্য ছিল বাংলা যে কোন পেপারের তুলনায় ১০ গুন বেশী। ওংষধসরপ জবারব,ি গঁংষরস জবারবি আসিত তা মাদ্রাসার ছাত্ররা বুঝিবেন কি ওস্তাদের মগজেই ঢুকিত না। বাংলা কোন পত্রিকারই স্থান ছিলনা। জনাব নূরুল হকের নিকট থেকে পত্র পত্রিকা নিয়ে সে গুলো পড়ে জনাব শামছুল ইসলাম সহ অনেকের বাংলার প্রতি আগ্রহ জন্মে।
যে ক’টি বই দিয়ে জনাব নূরুল হক কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ লাইব্রেরীর গোড়া পত্তন করেছিলেন তার আটটি ছিল সৈয়দ শামছুল ইসলামের। সুতরাং আলইসলাহ ও কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংদের ভিত্তি স্থাপনে অংশ নিয়ে সৈয়দ শামছুল ইসলাম সিলেট বিভাগের সাহিত্য ও জ্ঞান চর্চায় ইতিহাসের অংশ হয়ে আছেন।
সৈয়দ শামছুল ইসলাম একজন সৃজনশীল গদ্য লেখক। তাঁর রচিত অনেক দিনের অনেক কথা (আত্মজীবনী) (প্রথম ও দ্বিতীয় খন্ড) জীবনের বাঁকে বাঁকে (আত্মজীবনী) পীরপূজা, গোরপুজা, গণতান্ত্রিক হাইস্কুল, মুসলমানের অবনতির কারন, মানব শ্রেষ্ঠ হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কবি নজরুল কোন পাপে কার অভিশাপে, হজ্জ্বেবায়তুল্লাহশিক্ষাঙ্গন, উপেক্ষিত ওসমানি, সিলেটে মাওলানা মদনী (রঃ), হারজিত, খান সাহেব আব্দুল ওয়াহেদ (জীবনী গন্থ), হাফিজ মাওলানা নজির উদ্দিন আহমদ (জীবনী গ্রন্থ) ইত্যাদি প্রায় ২৪টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
আমার যে গুলো পড়ার সুযোগ হয়েছে সেগুলোর মধ্যে অনেক দিনের অনেক কথা’ একটি অনবদ্য গন্থ বলে মনে হয়েছে। সহজ সরল হৃদয়গ্রাহী ভাষায় তিনি তার নিজ ও পারিবারিক বিষয় ছাড়া ও সে সময়ের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলি, সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা, উল্লেখযোগ্য ঘটনা ইত্যাদি তুলে ধরেছেন। একটি আত্মজীবনী তখনই সার্বজনীন আবেদন সৃষ্টি করতে পারে যখন উপরোক্ত উপাদানগুলো তাঁর অন্তর্ভূক্ত হয়। এই বিবেচনায় অনেক দিনের অনেক কথা একটি সার্থক রচনা।
অনেক বড় বড় লেখকের প্রকাশিত অনেক বই কালক্রমে হয় দুষপ্রাপ্য অথবা একেবারে বিলুপ্ত হয়ে যায়। আমরা তার ছাত্ররা তার সবগুলো রচনা একত্র করে প্রকাশ করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারিনা?
এ লেখাটি ও আরও দীর্ঘ করার অবকাশ ছিল। কিন্তু সময়ভাবে এবং শারীরিক অসুস্থতার জন্য সেটা সম্ভব হয়নি বলে বেদনা অনুভব করছি।

গ্রন্থসূত্র:
১। অনেক দিনের অনেক কথা- সৈয়দ শামছুল ইসলাম
২। জীবনের বাঁকে বাঁকে- ঐ
৩। আব্বাকে যেমন দেখেছি- সৈয়দ ফজলুল্লাহ
৪। আবহমান- মৌলভী বাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় প্রাক্তন ছাত্র মিলন মেলা
২০১৩ উপলক্ষ্যে প্রকাশিত স্মরনিকা।

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT