-দীপংকর বর
একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিনবদলের সনদ রূপকল্প- ২০২১ বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন। সময়োপযোগী এ রূপকল্পে তিনি তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত সোনার বাংলা বিনির্মাণের অঙ্গীকার করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর অনন্য ভিশনের রূপরেখায় একবিংশ শতাব্দীর উপযোগী দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন, নাগরিকদের সাথে কার্যকর যোগাযোগ স্থাপন, ই-গভর্মেন্টের মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় সরকারি সেবা পৌঁছে দেওয়া এবং ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে বেসরকারি সেক্টরকে আরও উৎপাদনশীল ও প্রতিযোগিতামূলক করে তোলার কথা উল্লেখ করেন।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন পূরণের দায়িত্ব অর্পিত হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রোগ্রামের ওপর। এটুআই প্রোগ্রামের সহযোগিতায় কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পসহ প্রতিটি সেক্টরের সরকারি সেবা জনগণের হাতের মুঠোয় তুলে দেওয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। এলক্ষ্যে ইউনিয়ন পরিষদসহ স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে ৭ হাজার ৬০০টি ডিজিটাল সেন্টার স্থাপিত হয়। এ সকল ডিজিটাল সেন্টার হতে প্রায় ৩শত ধরনের নাগরিক সেবা প্রদান করা হচ্ছে। স্বচ্ছ, দক্ষ, জবাবদিহিমূলক, উদ্ভাবনী ও জনমুখী প্রশাসন প্রতিষ্ঠা; সরকার ও নাগরিকের মধ্যকার দূরত্ব কমানো এবং সকল সরকারি সেবা একটি প্লাটফর্মে আনতে জাতীয় তথ্য বাতায়ন নির্মাণ করা হয়েছে। তথ্য বাতায়নে সরকারি দপ্তরের প্রায় ৫১ হাজার ৫০০ সরকারি ওয়েবসাইটকে একত্রে সংযুক্ত করে নাগরিকের প্রয়োজনীয় তথ্য ও এ পর্যন্ত প্রায় ৬৫৭ ধরনের সেবা সন্নিবেশিত করা হয়েছে।
সরকারি সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া গতিশীল করতে ৮ হাজার অফিসের প্রায় ১১ লাখ সরকারি কর্মচারীকে ই-নথির আওতায় আনা হয়েছে। সকল নাগরিককে জরুরি পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদান করতে ৯৯৯ ইমার্জেন্সি সার্ভিস চালু করা হয়েছে। ঘরে বসেই ৩৩৩ হেল্পলাইনে ফোন করে দেশের জনগণ তথ্য বাতায়নের সকল তথ্য সেবা পাচ্ছে। এ হেল্পলাইনের মাধ্যমে নাগরিকগণ জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ মাঠ পর্যায়ের সকল কর্মকর্তার নিকট বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার সমাধান ও নাগরিক সেবা প্রাপ্তির অনুরোধ করতে পারছেন। ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ৩৭ লক্ষের অধিক গরীব ও অসহায় মানুষের কাছে সরকারি সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। করোনা মহামারীকালীন তালিকার বাইরের কেউ অসহায় হয়ে পড়লে ৩৩৩ হেল্পলাইনে ফোন করেও সরকারি সহায়তা পাচ্ছে। এসময় হেল্পলাইনে ফোন করে প্রায় ৪ হাজার ডাক্তারের নিকট হতে ৪ লক্ষের অধিক মানুষ টেলিমেডিসেনের সহায়তা নিয়েছেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য দিক নির্দেশনায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলা, বনজ সম্পদ উন্নয়ন ও সমুদ্র সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ জনগোষ্ঠীর বাস উপযোগী টেকসই পরিবেশ নিশ্চিতকরণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়ন তথা জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালা ২০০৯ অনুসরণে বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে উন্নীত করতে সকল ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের ওপর সরকার গুরুত্বারোপ করেছে। এর অংশ হিসেবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ও এর অধীন অধিদপ্তর/সংস্থার প্রধান প্রধান সেবা প্রদানে গতিশীলতা আনয়ন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠায় ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে সেবা সহজিকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ এর ১২ ধারায় শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন বা প্রকল্প গ্রহণের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর হতে পরিবেশগত ছাড়পত্র গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ প্রেক্ষিতে নতুন বা বিদ্যমান শিল্প কারখানা/প্রকল্পের আবেদনের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পরিদর্শন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা পূর্বক পরিবেশগত ছাড়পত্র প্রদান করা হয়ে থাকে। পরিবেশ অধিদপ্তর এটুআই প্রকল্পের সহায়তায় ৪ অক্টোবর
২০১৩ থেকে ছাড়পত্র অটোমেশন প্রকল্প গ্রহণ করে। সারাদেশে ১ জুন ২০১৫ তারিখ হতে অনলাইনে আবেদন বাধ্যতামূলক করা হয়। ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখ থেকে অধিদপ্তরের সকল দপ্তর হতে পরিবেশগত ছাড়পত্র/নবায়নের ই-সার্টিফিকেট প্রদান শুরু হয়। ফলে, উদ্যোক্তাগণ ঘরে বসে আবেদন এবং পরিবেশগত ছাড়পত্রের ই-সার্টিফিকেট গ্রহণ করছেন।(-চলবে)
(পিআইডি-এটুআই ফিচার)
লেখক : সিনিয়র তথ্য অফিসার, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। |