1. muktokotha@gmail.com : Harunur Rashid : Harunur Rashid
  2. isaque@hotmail.co.uk : Harun :
  3. harunurrashid@hotmail.com : Muktokotha :
দিল্লী আন্তর্জাতিক সন্মেলনে হাসানুল হক ইনু - মুক্তকথা
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২৪ অপরাহ্ন

দিল্লী আন্তর্জাতিক সন্মেলনে হাসানুল হক ইনু

হারুনূর রশীদ দ্বারা অনুবাদ॥
  • প্রকাশকাল : রবিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২১
  • ১১৪৬ পড়া হয়েছে


আমূল সংস্কারবাদীতা- বৈশ্বিক সুপ্রতিষ্টার স্থাপত্যশিল্পের প্রতি হুমকি

(International Conference on Radicalisation: Threats to the Architecture of Global Stability)

বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি : মৈত্রী দিবস উপলক্ষ্যে ৬ ডিসেম্বর ২০২১ বিকেলে দিল্লীতে ‘ইণ্ডিয়ান কাউন্সিল অব ওয়ার্ল্ড এফেয়ার্স’ আয়োজিত আলোচনা সভায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু যে বক্তব্য রাখেন তা নিম্নে বাংলায় অনুবাদ করে দেয়া হলো-



আপনাদের অশেষ ধন্যবাদ আমাকে আলোচনার এ পর্বে অংশ নিতে এবং কিছু বলতে আমন্ত্রণ করার জন্য।
সকলকে সালাম ও নমস্কার!
আজ আমাদের সাথে আছেন রাষ্ট্রদূত রাজিত মিত্র, যাকে আমি চিনি বাংলাদেশে তার যাওয়া অবদি। তিনি এবং আমরা আরো ভাল মৈত্রী গড়ে তুলতে মিলিতভাবে কাজ করেছি। 
এখানে আরো আছেন সব্যচারী দত্ত আর দিপঞ্জন রায় চৌধুরী, যাদেরকে আমরা সকলেই চিনি। আমার সাথে আরো আছেন আমার সংসদ সতীর্থ শারমিন আহমদ রিমি, যিনি যুদ্ধকালীন প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত তাজ উদ্দীন আহমদের কন্যা হন। ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবকে হত্যার পর তাজ উদ্দীন আহমদকেও হত্যা করা হয়।



সুশীল সমাজের মানুষজন এবং ভদ্রমহোদয় মহিলাবৃন্দ,
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আপনাদের শুভেচ্ছা। শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে। কথার শুরুতে আমি স্মরণ করতে চাই ১৯৭১এর আমাদের সেই যুদ্ধকে। কারণ সেই যুদ্ধে আমিও একজন শরিক ছিলাম। শুধুই যে যুদ্ধ দেখেছি তা অবশ্যই নয়। সে যুদ্ধে আমি একজন সরাসরি সক্রিয় যুদ্ধা ছিলাম। এখানে আমি অনেক সাদা চুলের সুশীল মানুষ দেখতে পাচ্ছি। দেখেই মনে হচ্ছে তারাও সম্ভবতঃ সেদিনের সেই যুদ্ধের শরিক থাকা কিছু মানুষ। 
আজকের এ সুযোগে এ মূহুর্তে আমি সে যুদ্ধে আত্মাহুতিদানকারী মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। শ্রদ্ধা জানাচ্ছি বাংলাদেশের জন্য যুদ্ধে প্রানবলিদানকারী অগণিত শহীদদের উদ্দেশ্যে এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর সৈনিকদের উদ্দেশ্যে যারা বাংলাদেশের জন্য যুদ্ধে প্রান দিয়েছেন।
একই সাথে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি ভারতের মহান জনগনের প্রতি। আমি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি সে সময়ের ভারতীয় সরকারকে এবং তাদের সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত মহান ইন্দিরা গাঁধির প্রতি। আমি স্মরণকরি সে দিনের ভারতীয় জনগন ও সারাদেশের বুদ্ধিশালী সম্প্রদায়ের সমর্থনের কথা। আমি বিশেষকরে উল্লেখ করতে চাই(আন্ডারস্কোর করি) ‘দি রুল অব বর্ডারিং স্টেটস অব বাংলাদেশ’ বিশেষ করে ওয়েষ্ট বেঙ্গল, ত্রিপুরা, আসাম, মেঘালয়। তবে সারা ভারতই আমাদের সাথে মুক্তিযুদ্ধে পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল তাই আমি তাদের সকলের প্রতিই আমার শ্রদ্ধা ও ভালবাসা জানাচ্ছি।


আমার একটি পরিচয় এখানে দেয়া হয়েছে। এর পরেও আমি বলতে চাই ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আমার অবস্থান ছিল, আমি ছিলাম দেরাদুনের অদূরে অবস্থিত তাণ্ডুয়ায় সবচেয়ে বড় গেরিলা ট্রেনিং সেন্টারের একজন ‘ক্যাম্প কমাণ্ডার’। এটি ছিল বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স তথা মুজিব বাহিনীর সবচেয়ে বৃহত্তর প্রশিক্ষন কেন্দ্র। এ সময় আমার কমাণ্ডের আওতায় কমপক্ষে ১০ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে আমি প্রশিক্ষিত করেছিলাম। আমি ওই কেন্দ্রের একজন ‘ইন্সট্রাক্টর’ও ছিলাম।
আমি দেখেছি কিভাবে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তাদের সমর্থনের হাত বাড়িয়েছিলেন। ভারতীয় পক্ষে প্রয়াত জেনারেল উবান ছিলেন মুজিব বাহিনীর কার্যক্রম সমন্বয়কের ভূমিকায়। তার পুত্র অপর মেজর জেনারেল উভান যিনি নয়া দিল্লীতে থাকেন এবং একজন ‘কারগিল হিরো’ হিসেবে সুখ্যাতি লাভ করেছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাকে চিনি। তাদের সকলকে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
আজ আমরা উদযাপন করছি ভারত-বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০বছর যদিও এই ভাতৃত্ব ও বন্ধুত্বের আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছিল ১৯৭১সালের ৬ ডিসেম্বর থেকে। সম্পর্ক ও বন্ধুত্বের এই বীজ রুপন করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১এর ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা থেকে।
পক্ষান্তরে ১৯৭০সালের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফলকে অস্বীকৃতি জানিয়ে পাক-সামরিক জান্তা ১৯৭১এর ২৫ মার্চ রাতের আঁধারে নিরীহ সাধারণ মানুষের উপর আক্রমণ চালায় এবং গণহত্যা শুরু করে। যার ফলে প্রায় ১কোটী মানুষ দেশত্যাগী হয় এবং নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ভারতে চলে যায় যা আপনাদের ভালকরেই জানা আছে। ভারত এই দেশত্যাগীদের আশ্রয় দেয় এবং বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়ায়। এর পর থেকেই একটি অভূতপূর্ব বন্ধুত্বের বীজ অংকুরীত হয়ে বাড়তে থাকে এবং মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় সৈনিকদের রক্তের স্রোতে শক্তি সঞ্চয় হতে থাকে।



ভদ্রমহোদয় ও মহিলাগন,
এমনোবস্থায় ভারত বিরোধটিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরতে সক্ষম হয়। প্রথমদিকে ভারত কূটনৈতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের হয়ে লড়াই শুরু করে এবং পরে সসৈন্যে যুদ্ধের ময়দানে শরিক হয়(ইনভলবিং ট্রেক ১এবং ২ ডিফ্লমেসি)। ভারতীয় সৈনিকেরা বাংলাদেশী মুক্তিযোদ্ধাদের কাধে কাধ মিলিয়ে যুদ্ধে অংশ নেয়।
১৯৭১ এ যৌথভাবে কাজ করার ফলে সেই গড়ে উঠা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আজ ৫০বছর পরেও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মাইল ফলক হিসেবে কাজ করছে(রিমেইন্স দি কর্নারষ্টোন অব বাইলেটারেল টাইস)। মুক্তিযুদ্ধের পর এই সম্পর্কের প্রথম বর্ষে(‘দি এরিয়াজ অব ডিসকর্ড বিটুইন’) বাংলাদেশ ও ভারতের অমিল, বিরোধ বা মতভেদের স্থানগুলো চিহ্নিত করা হয়। পরে ‘ট্রিটিজ’ এবং অন্যান্য দলিল স্বাক্ষরিত হয়।
ভারত এবং ভূটান ১৯৭১সালের ৬ ডিসেম্বর প্রথম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল এবং ব্যবহার করতে(শেয়ার করেছিল) দিয়েছিল বাংলাদেশের সাথে তার ৪০৯৬ কিলোমিটার সীমান্ত। ‘ইন্সপাইট অব মেনি কম্যুনেলিটিজ’ ভারত ও বাংলাদেশ সম্পর্ক বিগত ৫০ বছরে বহু চড়াই-উৎরাই এর অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয়েছে। এটি এজন্যই, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার কারণে যা বাংলাদেশের উপর এমনকি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের উপরও ছিল এক ভয়ানক মুষ্ঠাঘাত। 
এর পরই আমরা বহুবছরের পাকিস্তানী আমলের সামরিক শাসনের নমুনায় দেশকে চলতে দেখেছি যা ছিল ‘মোর ইমিনিসেন্স অব দি’ পাকিস্তান এরা মিলিটারী রুলস। এটি মারাত্মকভাবে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। অনাস্থা, আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি, অনিরাপত্তা আমাদের যন্ত্রনাদায়ক অস্থির এক বিশৃঙ্খল অবস্থায় রেখেছে। অনাস্থা শুরু হয় আমাদের উভয় পক্ষের মধ্যে।
যাই হোক, গণতন্ত্রের পুনঃরুদ্ধার, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দু’দেশের সহযোগীতার ক্ষেত্রে এক নতুন যুগের সূচনা করে। বিগত পঞ্চাশ বছর ধরে, যদিও আমরা দুই বন্ধুদেশ তারপরও পাকিস্তানী পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে উঠা ধর্মীয় অন্ধ গোঁড়ামি, সাম্প্রদায়িকতাকে আমরা উভয়ই পরাজিত করেছি। তার পরও এখনও সেই অনাস্থার ভুত, সেই ১৯৪৭এর ক্ষয়ক্ষতি আমাদের হুশিয়ারী দিয়ে যায়। বেশ কিছু ভুলবুঝাবুঝি আর পথ অবরোধের পরও আমরা দুই প্রতিবেশীদেশ নিবীর সম্পর্ক রক্ষা করে চলেছি। বেশ কতক চুক্তি ও পরস্পর সমঝোতার মধ্যদিয়ে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।



ভ্দ্র মহোদয় ও মহিলাগন,
সীমান্ত চুক্তি দ্বিপক্ষীয় সহযোগীতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে এক মাইল ফলক, নিশ্চয়তা দেয় আঞ্চলিক নিরাপত্তার। একই সাথে আমাদের সমুদ্রসীমাও নিশ্চিত করা গেছে। উভয় দেশের মাটি ছোঁয়ে যাওয়া ৫৪টি নদীর মধ্যে গঙ্গার পানিবন্টনে ১৯৯৬সালে উভয় দেশের মতৈক্য দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়ন ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অপর একটি “মাইল স্টোন”। আমরা অবশ্য তিস্তা সহ অন্যান্য নদীবাহিত পানির ন্যায্য অংশের বিষয় নির্ধারণের কাজকেও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। যদিও তিস্তা বিষয়ে বার বার সম্মত হওয়ার পরও এখনও অমিংমাসীত রয়েছে।
ভারত-বাংলাদেশ উভয়পক্ষেরই সুযোগ সুবিধার জন্য নিরাপত্তার কিছু বিষয় আছে যা উভয় পক্ষকেই মোকাবেলা করতে হবে। এতোসবের মধ্যেও আমরা এগিয়ে গেছি ব্যবসার ক্ষেত্রে এবং ইতিমধ্যেই আপনারা হয়তো জানেন যে বর্তমানে বাংলাদেশ হলো দক্ষিন এশিয়ার মধ্যে ভারতের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ী অংশীদার। বাংলাদেশ আরো বিনিয়োগের জন্য ভারতকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে এবং ইতিমধ্যেই দু’টি ‘অর্থনৈতিক অঞ্চল’ কেবলমাত্র ভারতের বিনিয়োগের জন্য বরাদ্ধ দিয়েছে।
আমাদের যোগাযোগ সম্পর্ক ভূমিতে, জলে এবং আকাশে বৃদ্ধি পেয়েছে। সমুদ্র সম্পদ সকল মানুষের উপকারে লাগানোর জন্য সুনীল অর্থনীতির পরিকল্পনা চলমান আছে এবং এগিয়ে যাচ্ছে। উভয় দেশের এই ইতিবাচক পদক্ষেপ কাজে লাগতে শুরু করেছে যা আস্তার জায়গাকে সমৃদ্ধ করছে। এই অবস্থা ইন্দো-পেসিফিকের আশিয়ান অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলির জন্য উপযুক্ত সংযোগ তৈরী করতে সহায়ক হচ্ছে।
ভারতের স্বপ্ন বিশেষ করে মহামান্য প্রধানমন্ত্রী মিঃ মোদীর কর্মকৌশল ঢাকার সহযোগীতায় বাস্তবে রূপ নেবে যা ইতিমধ্যেই বিভিন্ন উপায়ে সাহায্যের হাত সম্প্রসারিত করেছে ঢাকা। সহায়তার এই অবস্থা বাংলাদেশ ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাংলাদেশ সংলগ্ন রাজ্যগুলি তথা উভয় প্রতিবেশীর এক ভিন্ন ভবিষ্যত আশা উন্নতি ও সাফল্যের নির্দেশ দিচ্ছে।
মহামান্য মোদীর কর্মকৌশল যে কর্মকৌশল ঢাকার সাহায্যে বাস্তবায়িত করা যায় এবং এই সহায়তার হাত ঢাকা ইতিমধ্যেই সম্প্রসারিত করে রেখেছে, যা কি-না এখনও বাংলাদেশ সংলগ্ন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলের আশা, উন্নতি ও সাফল্যের ভবিষ্যৎ। ভারতের বাংলাদেশ লাগোয়া এই উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভবিষ্যৎ বিবেচনায় এবং এই দৃষ্টিকোন থেকে বিষয়টি ভারতের খুবই জরুরী। ভারতের এই অঞ্চলের ভৌগলিক অবস্থানই বলে দেয় এর ভবিষ্যৎ ভাগ্যের কথা। এই দুই প্রতিবেশী অবিচ্ছেদ্যভাবে অর্থনীতি ও কৌশলগত অগ্রাধিকার নিয়ে মধ্যস্থ হয়ে পারস্পারিক একত্রে থাকতে হবে।
পঞ্চাশ বছর পর, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের চড়াই-উৎরাই পাড় হয়ে এখন উভয় দেশ সুদৃঢ় হয়েছে। বর্তমান ভৌগলিক অবস্থার নিরিখে ক্ষমতা ও শক্তির গভীরে গিয়ে খুঁজে দেখার এখন সময় এসেছে।
দক্ষিন এশিয়া কমপক্ষে ১.৭ বিলিয়ন মানুষ নিয়ে প্রাচীন সভ্যতার একটি অঞ্চল। এটি একটি বৈশ্বিক বাজারও বটে। সেখানে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। বিশ্বে, বাংলাদেশ দ্বিতীয় বৃহৎ শান্তিরক্ষীবাহিনীর দেশ। দক্ষিন এশিয়া, স্বীকৃত পারমানবিক ক্ষমতার অঞ্চল।
ভারতের খেলাধূলা, সংস্কৃতি, বিনোদন শিল্প; বিশ্ব অঙ্গনে এক অনবদ্য অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে। হিমালয় থেকে সুন্দরবন এবং সাগর সহ বদ্বীপের মত বাংলাদেশ, এ বিশাল বিস্তৃত এলাকা সম্পদে ভরপুর যা অনুসন্ধান করে কাজে লাগাতে হবে। আমাদের বিপুল মানবসম্পদ যদি দক্ষ ও শিক্ষিত করা যায় তা’হলে এরা শুধু দক্ষিনেই নয় সারা বিশ্বের চেহারা পাল্টে দেয়ার শক্তি হতে পারবে। দক্ষিন এশিয়াকে আমরা একটি ভোক্তা সমাজে বদলে দিতে পারি, একটি বিশ্ব অর্থনৈতিক শক্তিতে রূপান্তরীত করতে পারি। 
বাংলাদেশ মানব সম্পদে, পানি সম্পদে আশীর্বাদপুষ্ঠ এক প্রাচীন সভ্যতার দেশ। আমরা যখন দেখি কেউ আমাদের এই সৌভাগ্যকে কেড়ে নিতে চায় তখন আমাদের উচিৎ আমাদের সম্পর্ককে এমন এক উচ্চতায় মজবুত করা যাতে উপলব্দি করার ক্ষমতা সুগম্য হয়।



ভদ্র মহোদয় ও মহিলাগন,
আমাদের সম্পদ সংগ্রহের লক্ষে সহযোগীতার ক্ষেত্রগুলি খোঁজে দেখার মধ্য দিয়ে আমরা যন্ত্রণাগুলি সরিয়েছি, বন্ধুত্বের চাকায় ভরকরে বিনয়ের সাথে আহ্বান জানিয়ে আমরা বিষয়ভিত্তিক সমাধানে পৌঁছতে পেরেছি। সমান্তরালভাবে বলার মত করে একটি বিস্তৃত পরিকল্পনাও তৈরী করতে পেরেছি আমাদের সম্পদ সংগ্রহের জন্য।
এই সম্পদ সংগ্রহের বিষয়ে, ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী মোদী তার ঢাকা সফরকালে কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন আমাদের এই একত্রে চলা একটি সমৃদ্ধ যৌথ ভবিষ্যৎ। আমরা সত্যিকারভাবেই তার সেই অনুভুতিরই প্রকাশ ঘটিয়েছি। সে সময় সীমান্ত ছিল একটি যন্ত্রণার বিষয় উভয় প্রতিবেশীর জন্য। 
আমি অকপটে বলতে চাই যে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ভারত খুব সৃষ্টিশীল উপায়ে করেছে, বিশেষকরে আসপাশের অঞ্চলে কোন ধরনের অস্ত্র প্রদর্শন না করেই।
সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আমার ধারণায় মনে করি, এখনতো জলে স্থলে আমাদের সীমানা নির্ধারিত হয়ে গেছে, এখন সীমান্ত ব্যবহারে একটি সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক সহযোগীতা হতে পারে। কারণ ইতিমধ্যেই আমরা সীমান্তে অনেক দুঃখজনক ঘটনার জন্ম দিয়েছি। ২০১৫ সালে ঢাকা সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছিলেন যে “পঞ্চি পবন ওর পানি” ভাগ করার আর প্রয়োজন নেই। পানির ভাগাভাগি নিয়ে আমাদের বিবাদের প্রতি ইংগিত দিয়েই তিনি এমন কথা বলেছিলেন। ঢাকাকে আশ্বস্ত করতেই তিনি ইংগিতে বলেছিলেন যে নদীর পানি ভাগাভাগির বিষয়টিরও সুরাহা করা হবে। 
৮ এপ্রিল মোদী বলেছিলেন যে, তিস্তার পানি ভাগাভাগির বিষয়ে আমাদের সরকার ও হাসিনার সরকার শীঘ্রই একটি সমাধানে পৌঁছাতে পারবেন, আমরা তারই অপেক্ষায় আছি। এ বিষয় নিয়ে আমরা দ্বিমতে নই। সংক্ষেপে, এটি সম্পন্ন করতে হবে। 
মিঃ মোদীর এ মন্তব্যের পরে আমি বলতে চাই, রোগের ভাইরাস, কোন সীমান্ত মানে না। আমাদের প্রতি মহামারী টীকার ইতিবাচক সহায়তা প্রয়োজন। অন্যতায় আমাদের উভয়ের সহযোগীতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সে কারণে টীকা সহায়তার বিষয় আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। 
রোহিঙ্গা সমস্যার বোঝা যেমন ভারত বহন করছে তেমনি লক্ষ লক্ষ গৃহহারা উদ্বাস্তু রোহিঙ্গার বোঝা বাংলাদেশও বহন করে যাচ্ছে। এদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে হবে।



ভদ্র মহোদয় ও মহিলাগন,
অর্থনৈতিক বৈচিত্রের কারণে ভারতের প্রয়োজন রয়েছে অন্য দেশের সাথে ব্যবসায় লিপ্ত হতে। এখানেই আমরা পুনরাবৃত্তি করতে চাই, যে কোন অবস্থায়ই যেনো, একে অন্যকে খেয়াল রাখার আমাদের সেই গভীরের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি ঢাকা পড়ে না যায়। 
আমি আবারও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে বাংলাদেশ, বাংলাদেশই। পাকিস্তান নয়। ভিন্নমতাবলম্বীদের সহায়তাদানকারীদের বিশ্বাস করবেন না। তৃতীয় একটি দেশের জন্য, আমাদের বিশ্বস্ত খাঁটী বন্ধুদেশ ভারতের নিরাপত্তার হুমকি হতে, যুদ্ধের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ায় আমরা বিশ্বাস করি না। একই চেতনা ভারতকেও লালন করতে হবে। শেখ হাসিনা সরকারের নেতৃত্বে আমরা যেকোন ধরনের সন্ত্রাসী কাজের সাথে জড়িতদের বিষয়ে এমনকি সীমান্তে সন্ত্রাসী কাজে নিয়োজিত যেকোন সন্ত্রাসীদের বিষয়ে শূণ্যমাত্রার সহ্য দেখিয়ে আসছি। এ বিষয়ে আমরা মিঃ মোদীর সাথে সম্পূর্ণ একমত। ২০১৭ সালে তিনি বলেছিলেন যে, ধর্মীয় উন্মাদনায় আমূল সংস্কারবাদ ও চরম সন্ত্রাসবাদ বিস্তৃতিলাভ করছে। এমন বিষয়ে যৌথ কাজই ভাল ফল আনতে পারে।

ভদ্র মহোদয় ও মহিলাগন,
আমাদের দু’দেশের সম্পর্ককে উচ্চমাত্রায় নিয়ে যেতে হলে আমাদের প্রয়োজন দ্রুতবেগে এগিয়ে যাওয়া। আমরা জানি, ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা, আমূল সংস্কারবাদ সবচেয়ে বড় অন্তরায়। আমি বলবো আমরা দু’টি বিপজ্জনক বোমার উপর বসে আছি। সে হলো দারীদ্রতা ও সাম্প্রদায়ীকতা। এ দু’টি বোমাকে আমাদের নিষ্ক্রিয় করে দিতে হবে, যা আমরা পারছিনা। এ নিয়ে আমাদের উভয়ের বিস্তৃর্ণ পরিকল্পনা একটি অর্থনৈতিক বিষ্ফোরণ ঘটাতে পারে যা রাজনৈতিক শান্তি নিশ্চিত করতে পারে। আমাদের দারীদ্রতা দূরীকরণে আমাদের জলসম্পদসহ সকল প্রাকৃতিক সম্পদকে আমরা ব্যবহার করতে পারি। এবং এর মধ্য দিয়ে আমরা সাম্প্রদায়ীকতাকে চিরতরে দূর করতে পারি। ধর্মীয় মৌলবাদ ও সন্ত্রাসবাদকে সমূলে উৎপাটন করা আমাদের খুবই প্রয়োজন।
বাংলাদেশের নদ-নদী ও বাংলাসমূদ্র উপকূল আমাদের দুঃখ। শুধুমাত্র হিমালয় উপত্যকার পানি সম্পদ, গঙ্গা ব্রহ্মপুত্রের পানি সম্পদকে কাজে লাগিয়ে আমরা সমৃদ্ধির স্বর্ণদ্বারে পৌঁছাতে পারি। 
এ সমূহ বিষয়, ২০১১ সালের এপ্রিলে আমাদের দু’দেশের স্বাক্ষরিত চুক্তিতে রয়েছে।
(Common rivers including water sharing in a holistic basin wise management 2010-12 joint declaration articles 17 all forms of terrorism are condemned and crushed 2017 April.)

ভদ্র মহোদয় ও মহিলাগন,
সৎ প্রতিবেশী মান বাড়ায়। আমাদের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন- “ভাগাভাগি দারীদ্র নিয়ে আসে আর সমিতি নিয়ে আসে ধন।” আমি বলি তিনি ঠিকই বলেছিলেন। আমরা দু’দেশের জয় করে নেয়ার বহুকিছুই আছে। একটি শক্তিশালী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, একটি শক্তিশালী সমৃদ্ধ ভারত। উভয় দেশেই এ কাজ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ যদি ভাল থাকে অবশ্যই ভারতও ভাল থাকবে। আমাদের বন্ধুত্বের অঙ্গনকে গড়ে তোলে এমন মানে নিয়ে যেতে হবে যে সম্পর্ক হবে সমগ্র দক্ষিন এশিয়ায় দু’দেশের এক পুষ্পের সম্পর্ক। একে অন্যকে পুষ্পবৃষ্টিতে ভরিয়ে তুলবে।
জয় বাংলা
সংবাদ সূত্র: জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু প্রদত্ত বক্তব্যের বাংলা অনুবাদ। অনুবাদক: হারুনূর রশীদ

এ জাতীয় সংবাদ

তারকা বিনোদন ২ গীতাঞ্জলী মিশ্র

বাংলা দেশের পাখী

বাংগালী জীবন ও মূল ধারার সংস্কৃতি

আসছে কিছু দেখতে থাকুন

© All rights reserved © 2021 muktokotha
Customized BY KINE IT