লন্ডন, ১০ই আগস্ট: মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিন যত এগিয়ে আসছে, ততই যেন সমস্যা বাড়ছে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের। এবার বিরোধিতা এল খুদ রিপাবলিকান দলের মধ্য থেকেই। রিপাবলিকানদের জাতীয় নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞের ৫০ জনের একটি দল এক বিবৃতিতে সোমবার দাবি করেছেন, ট্রাম্প দেশের প্রেসিডেন্ট হলে আমেরিকার পক্ষে তা ভয়ংকর ব্যাপার হবে। দেশের নিরাপত্তা প্রশ্নচিহ্নের মুখে পড়ে যাবে। ট্রাম্পও পালটা খোঁচা দিতে ছাড়েননি। বিশ্বের বর্তমান বেহাল পরিস্থিতির জন্য এই ‘ওয়াশিংটন এলিট’-দের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে তোলা সব অভিযোগকে মিথ্যা বলে দাবি করেছেন তিনি।
আমেরিকার এই তাবড় তাবড় নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে (নভেম্বরে) তাঁরা কোনওমতেই ট্রাম্পকে ভোট দেবেন না। এর পিছনে একাধিক যুক্তিও খাড়া করেছেন তাঁরা। যেমন, ট্রাম্পের বিদেশনীতি খুবই দুর্বল এবং আমেরিকার পক্ষে অত্যন্ত হানিকর। এরকম ত্রুটিপূর্ণ বিদেশনীতি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসা এবং পদাধিকার বলে সেনাবাহিনীর প্রধান হওয়ার ফল মারাত্মক হবে। আরও বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের যে মূল্যবোধ, অভিজ্ঞতা এবং চারিত্রিক গুণাবলী থাকা উচিত, তা ৭০ বছরের এই ধনকুবেরের মধ্যে নেই। মার্কিন সংবিধান, মার্কিন আইন, মার্কিন প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান এবং বিশ্বাস তাঁর নেই। আমেরিকার জাতীয় স্বার্থ সম্পর্কেও ডোনাল্ড ট্রাম্পের জ্ঞান অত্যন্ত সীমিত। সত্যির সঙ্গে মিথ্যার ফারাক করার বিষয়ে তাঁর প্রবল অনীহা। সবচেয়ে বড় অভিযোগ উঠেছে, ট্রাম্পের নিজের উপর কোনও নিয়ন্ত্রণ না থাকা নিয়ে। তিনি একবারেই নিজের সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না। তাঁর আচরণ আমেরিকার মিত্রদের মনেও সংশয়ের উদ্রেক করেছে। এমন ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট হলে আমেরিকার পক্ষে তা খুবই ভয়ংকর ব্যাপার হবে।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রচারিত এই বিবৃতিতে যাঁরা স্বাক্ষর করেছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সিআইএ-র প্রাক্তন ডিরেক্টর মাইকেল হেডেন, প্রাক্তন মার্কিন ট্রেড রিপ্রেজেনটেটিভ কারলা এ হিলস, ভারতে আমেরিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত রবার্ট ব্ল্যাকউইল, জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের (হোয়াইট হাউজ) প্রাক্তন অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর রিচার্ড ফনটেইন প্রমুখ। এর আগে গত শুক্রবার সিআইএ-র প্রাক্তন ডিরেক্টর মাইকেল মরেল অভিযোগ করেছেন, ট্রাম্প ‘বকলমে’ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ‘চর’।
সোমবারই ট্রাম্প তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগকে ঝেড়ে ফেলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘যাঁরা এগিয়ে এসেছেন, প্রকাশ্যে নিজেদের মতবাদ জানিয়েছেন, তাঁদের ধন্যবাদ জানাই। কারণ এতে দেশের মানুষের পক্ষে বোঝা সহজ হল যে, বিশ্বকে ভয়ংকর পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্য দায় কার। আমেরিকার বর্তমান অবস্থার জন্য ওয়াশিংটনের কয়েকজন তথাকথিত বিশিষ্টরাই যে দায়ী, তা দেশবাসীর সামনে স্পষ্ট হয়ে গেল।’ ইরাকে অভিযান চালানোর মতো ত্রুটিপূর্ণ সিদ্ধান্ত, বেনজাঘিকে মার্কিনিদের মৃত্যু এবং আইসিসের বাড়াবাড়ির জন্য দায়ী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন এবং এই স্বাক্ষরকারীরা।
ডেমোক্র্যাটরা অবশ্য ট্রাম্পের প্রতি আক্রমণ অব্যাহত রেখেছেন। মার্কিন কংগ্রেসের প্রাক্তন ডেমোক্র্যাট সদস্য ট্রাম্প সম্পর্কে যা বলেছেন, তা সরলীকরণ করলে দাঁড়ায়- ট্রাম্পকে উন্মাদ বললে মানসিক ভারসাম্যহীনদের অপমান করা হবে।
ট্রাম্প বিরোধী লড়াইকে জমিয়ে দিতে রিপাবলিকানদের একাংশের সমর্থনে এক প্রার্থীকে দাঁড় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রিপাবলিকান দলের এই বিদ্রোহী সদস্য সিআইএর জঙ্গিদমন শাখার প্রাক্তন পদাধিকারী। তাঁর নাম ম্যাকমুলিন (৪০)। তাঁর দাবি, ডোনাল্ড ট্রাম্প বা হিলারি ক্লিনটনের প্রতি আমেরিকার কোনও আস্থা নেই। মার্কিন মুলুকে সুদিন ফেরাতে তাই পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে তাঁকেই দায়িত্ব দেওয়া হোক। যদিও, তাঁর ঝুলিতে নামমাত্র ভোটই রয়েছে বলেই ধারণা ওয়াকিবহাল মহলের।(পিটিআই এর খবর বর্তমান থেকে)