মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে দেশীয় উচ্চফলনশীল দুই জাতের বেগুন চাষে বাম্পার ফলন পেয়েছে চাষীরা। দেখতে আপেলের মতো জাতের নাম আপেল বেগুন। ডাবের মতো দেখতে অন্য একটি জাতের নাম দেয়া হয়েছে ডাব বেগুন। ফসলের মাঠে এখন গাছে গাছে ঝুলছে ডাব এবং আপেল জাতের বেগুন।
এবারই প্রথম এই দুটি জাতের বেগুন চাষ করেছেন শ্রীমঙ্গল উপজেলার কৃষকরা। উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্যোগে চলতি খরিফ-১ মৌসুমে বেগুনের এই নতুন দুটি জাত কৃষকদের দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করানো হয়। মোট ১২ জন কৃষক ২০ শতক করে প্রায় ১ হেক্টর জমিতে আপেল ও ডাব বেগুন চাষ করেছেন। প্রথমবার চাষেই হয়েছে বাম্পার ফলন। কৃষি অফিস এই জাতের বীজ সংগ্রহ করেছে নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার এক কৃষকের কাছ থেকে।
উপজেলা কৃষি অফিস থেকে জানায়, এই জাতের বেগুন গাছে পোকা মাকড় বা রোগ বালাই কম হয়। গাছে একটানা চার মাস ফসল ধরে। ফলের রং লালছে বেগুনি। এসব জাতের বেগুন গায়ে খুবই নরম। একেকটি বেগুন ওজনে ৭০০ থেকে ১০০০ গ্রাম পর্যন্ত। এই জাতের বীজ রোপণ করতে হয় কার্তিক মাসে। ৬০ দিন পর পৌষ মাসে গাছে ফুল ও ফল আসতে শুরু করে। আর মাঘ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে ফল বিক্রয় উপযোগী হয়।
উপজেলার খলিলপুর গ্রামের বেগুন ক্ষেতে দেখা যায়, এক থেকে দেড় ফুট লম্বা প্রায় সব গাছেই বেগুন ঝুলে রয়েছে। কোন গাছের বেগুন ডাব আকৃতির, কোন গাছে আপেল আকৃতির। ফলনও ভাল হয়েছে। কৃষকরাও খুব খুশি। রাসায়নিক সার ছাড়াই বেগুন চাষ করা হয়েছে। প্রয়োজনে শুধু জৈব সার ও জৈব বালাইনাশক দেয়া হয়েছে।
কৃষক মুহিবুর রহমান জানান, কৃষি অফিসের পরামর্শে এবারই প্রথম নতুন দুই জাতের বেগুন চাষ করেছেন। আগে অন্য জাত বেগুন চাষ করেছেন। আপেল ও ডাব বেগুন চাষ করে তিনি মহাখুশি। কারণ অন্য জাতের চেয়ে এই নতুন জাত চাষ করে তিনি অধিক ফলন পেয়েছেন। ফসলে মাঠে পোকাও ধরেনি। কোন রোগবালাইয়েও আক্রমণ করেনি। তিনি মাঘ মাসের প্রথম থেকে বেগুন বিক্রি করে এ পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে প্রায় ২ হাজার কেজি। প্রতি কেজি দাম পেয়েছেন গড়ে ৩৫ টাকা করে। আরও ২ হাজার কেজির মতো বিক্রি করতে পাবেন। খরচ হয়েছিল প্রায় ১৪ হাজার টাকা। খরচ বাদ দিয়ে তার লাভ হবে আনুমানিক ৫০ হাজার টাকা। একই গ্রামের ফারুক মিয়াও এমন ফলন দেখে খুবই আগ্রহী হয়েছেন এই জাতের বেগুন চাষে। তিনি আগামীতে এই দুই জাতের বেগুন চাষ করবেন বলে জানান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি বলেন, এই জাতগুলো দেশীয় উচ্চফলনশীল। তবে হাইব্রিড নয়। কৃষক নিজেরাই বীজ সংরক্ষণ করতে পারবে। ১২টি প্রদর্শনী প্লট থেকেই কৃষকদের বীজ সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। যেহেতু এই জাতের বেগুন চাষ করে কৃষকরা লাভবান হবেন, তাই উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের কৃষকদের মঝে এই জাত ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে কৃষি বিভাগের।