স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বীর মুক্তিযোদ্ধা এ.কে.এম সুজাউল করিম-এর স্মরণ সভায় বক্তারা বলেন, ১৯৬০ এর দশকে তৎকালীণ মৌলভীবাজার মহকুমা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সুজাভাই-এর নেতৃত্বে মৌলভীবাজারে ছাত্রলীগ শক্তিশালী হয়েছিল। সুজা ভাই ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়াহাব ভাই, পরবর্তী সময়ে প্রয়াত আজিজুর রহমানের কারনে ৬০ ও ৭০ এর দশকে মৌলভীবাজারে রাজনৈতিক জাগরণ সৃষ্টি হয়েছিল। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সাম্যবাদি সুজা ভাই মহান মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য সাম্যবাদ ও বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সুজা ভাই আমাদেরকে সাংগঠনিক কাজের দ্বায়িত্ব বন্টন করে দিলেও তিনি স্বয়ং আমাদের সঙ্গে কাজে ঝাপিয়ে পড়তেন।
মৌলভীবাজারে আজিজ বেগ সাহেবের বাড়ি ছিল আওয়ামিলীগের ঘাটি। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আজিজ বেগ ও সুজা ভাইয়ের নেতৃত্বে আমরা আন্দোলন-সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়েছিলাম। তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থায় মুসলমানদের সন্তানরা সাংস্কৃতিক সংগঠক হওয়ার দুঃসাহস খুব কম দেখালেও সুজা ভাই ছিলেন মৌলভীবাজারের সফল সাংস্কৃতিক সংগঠক। বর্তমান ঘুষ- দূর্ণীতির যুগে সুজাউল করিমরা পরিচ্ছন্ন রাজনীতির উদাহরণ। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সাম্যবাদি সুজা ভাই মহান মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য শোষণ-বঞ্চনামুক্ত সমাজ প্রতিষ্টার স্বপ্ন নিয়ে, সাম্যবাদ ও বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সুজা ভাই প্রবাসে থাকলেও মৌলভীবাজারের রাজনীতি ও সামাজিক কর্মকান্ডে সক্রিয় ছিলেন। সুজা ভাই সম্পর্কে প্রিন্ট মাধ্যমে ভালো করে লেখালেখি হলে নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানবে।
গত শনিবার সন্ধ্যায় বিগত ৭০দশকের ছাত্রনেতা ফয়সল চৌধুরী ও সাবেক প্রগতিশীল ছাত্রনেতা নাট্যকার রুহেল চৌধুরী’র সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হয়ে বক্তব্য রাখেন, মৌলভীবাজার ও রাজনগর আসনের সংসদ সদস্য নেছার আহমদ, বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জামাল উদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা – আইনজীবী সুনীল কুমার দাশ, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী রাজনীতিবিদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মছব্বির, আইনজীবী অপূর্ব কান্তি ধর, জেলা বীমা সংগঠক আ স ম সালেহ সোহেল, আইনজীবী মাহবুব আলম রুহেল, রাজনীতিবিদ ময়নুর রহমান মগনু, নাট্যকার ভিপি আব্দুল মতিন, সাংস্কৃতিক সংগঠক খালেদ চৌধুরী, প্রবাসী তৌহিদ চৌধুরী, আয়কর আইনজীবী বদরুল হোসেন, সাবেক অধ্যক্ষ ফজলুল আলী, সাবেক ছাত্র নেতা মুহিবুর রহমান, ব্যাংক কর্মকর্তা মোস্তাক আহমদ(মম)।
স্মরণসভা অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আইনজীবী মাহমুদুর রহমান বলেন, সুজা ১৯৬৬ থেকে ‘৭১ পর্যন্ত মৌলভীবাজারে ছাত্রলীগের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। স্বাধীন দেশে ৭২ সালে সুজা সহ আমরা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের জন্য লড়েছিলাম। আমাদের এই অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধকালীন নেতা ছিলেন, সিলেটের আকতার আহমদ’সহ অন্য নেতারা। আমরা জনমতের সমর্থন আদায় করে লড়াই করেছিলাম। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে যখন মওলানা ভাসানী, কমরেড মনি সিং, মোজাফফর আহমদ’রা মুজিব নগর সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দ্বায়িত্ব নিলেন, তখনই যুদ্ধের গতি বৃদ্ধি পেয়েছিল। তৎ সময়ে সমাজতান্ত্রিক রাশিয়া আমাদের সমর্থনে এগিয়ে এসেছিল। মুক্তিযুদ্ধে সুজার শক্তিশালী ভূমিকা ছিল।