হারুনূর রশীদ।।
শহীদ খুদিরাম বসুর নাম জানেনা এমন বাঙ্গালী কমই আছে। সে শতবর্ষ আগের কথা। ১৯০৮ সাল। ১৮ বছর বয়সের খুদিরাম বসুকে তৎকালীন বৃটিশ শাসকবর্গ ৩জন ইংরাজকে আক্রমণ ও হত্যার দায়ে মৃত্যুদন্ড দেয়। কিন্তু শতবর্ষ পর আজও একজন নিষ্ঠাবান খাঁটি দেশপ্রেমিক যিনি হাসতে হাসতে স্বাধীনতার জন্য ফাঁসীর মঞ্চে নিজের প্রান দিয়ে গেলেন তার বিষয়ে যতটুকু ইতিহাসে থাকার কথা ততটুকু আমরা পাইনা। উভয় বঙ্গে, বিশেষকরে পশ্চিমবঙ্গে যখন খুদিরামের আত্মত্যাগের কাহিনী কিংবদন্তি হয়ে আছে তখন বঙ্গের বাইরে বিশেষকরে বাংলাদেশে, তার শুধু নামটাই আমরা জানি, তাও সকলে নয়, এর বাইরে খুদিরামের বিষয়ে আমাদের জানা খুবই সীমিত। উভয় বঙ্গের বাহিরে তো জানাজানি আরো কম। বই পুস্তকেও তেমন বিষদ কিছু দেখা যায় না। এই আরো দশজনের মত শুধু নামটাই আমরা জানি। কিন্তু খুদিরামের বিষয়েতো তা হবার কথা ছিলনা। বৃহৎ ভারতীয় স্বাধীনতার ইতিহাসে বড় পরিসরে তার আত্মদান গাঁথা উজ্জ্বল হয়ে থাকার কথা।
ভারতীয় স্বাধীনতার প্রবাদ পুরুষ যাকে ঋষি বলে সম্ভোধন করা হয় সেই ঋষি অরবিন্দ ঘোষের মতাদর্শের অনুসারী বা ভাবশিষ্য শুধু নয় রীতিমত অনুপ্রাণীত হয়ে জীবন দিয়ে গেছেন খুদিরাম।
যতদূর জানা যায়, মিদনাপুর কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র মাত্র ১৬ বছর বয়সের খুদিরাম সেই সময় ওই এলাকার বিভিন্ন বিপ্লবী দলের গোপন সংবাদবাহক হিসাবে স্বাধীনতা বিপ্লবের সাথে জড়িত হয়ে যান। ১৯০৮ সালে খুদিরাম বসু ও প্রফুল্লচাকিকে বিপ্লবীদের পক্ষ থেকে মুজাফ্ফরপুরের তৎকালীন জেলা মেজিষ্ট্রেট কিংসফর্ডকে হত্যার গোপন দায়ীত্ব দেয়া হয়। তারা দু’জন মুজাফ্ফরপুর এসে কিংসফর্ডকে অনুসরণ করে ৩০শে এপ্রিল ইউরোপীয়ান ক্লাবের নিকট একটি গাড়ীর উপর খুদিরাম বোমা ছুঁড়ে মারেন। কিন্তু কিংসফর্ড সেই গাড়ীতে ছিলেন না।
গাড়ীতে বসা ছিলেন মুজাফ্ফরপুরের ওই সময়ের প্রসিদ্ধ উকীল বেরিস্টার প্রিঙ্গল কেনেডি’র স্ত্রী ও কন্যা। ঘটনার সাথে সাথেই বিপ্লবীদের খুঁজ পাবার জন্য ১ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। খুদিরাম গ্রেপ্তার এড়াতে রাতের আঁধারে প্রায় ২৫মাইল পথ হেটে ভাইনি রেলষ্টেশনে পৌঁছান। কিন্তু সময় খারাপ, ওখানেই তিনি গ্রেপ্তার হন। প্রফুল্ল চাকি জেল-গ্রেপ্তার এড়াতে ঘটনাস্থলেই নিজের মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেন। খুদিরাম জানতে পারেননি চাকি নেই।
মা-বাবা হারানো এতিম খুদিরামকে দেখাশুনা করতেন তার দিদি।
বিচারের সময় আদালত জানতে চান তার অন্য সঙ্গি-সাথী কারা। বীর খুদিরাম ঘটনার সকল দায় ও দায়ীত্ব তার নিজের বলে আদালতে বলেছিলেন। ১৯০৮ সালের এই ১১ই আগষ্ট এই বীর বাঙ্গালীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়।
দেশের জন্য খুদিরামের এই আত্মত্যাগকে সাধারণ মানুষের মুখে মুখে পৌঁছিয়ে দিতে অমর একখান গান রচনা করেছিলেন কবি পিতাম্বর দাস। অমর সে গান আজও যে কোন দুঃখে মানুষের মুখে সুর উঠতে শুনা যায়-“একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি…”।
লন্ডন, বৃহস্পতিবার
১১ই আগষ্ট ২০১৬