বাঙালি জাতির ইতিহাসে ‘এক ক্ষণজন্মা মহিয়সী নারী’। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের – মৃত্যুবার্ষিকীতে নির্মূল কমিটি নিউইয়র্ক এলাকার আলোচনা সভায় বক্তারা।
স্বাধীন বাংলাদেশে স্বাধীনতা বিরোধীদের দ্বারা এক চরম বিভ্রান্তির সময় শহীদ জননী জাহানারা ইমাম আলোর দিশারির ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি তাঁর জীবদ্দশায় যে জাগরণ সৃষ্টি করে গেছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে মৌলবাদ মুক্ত ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে শহীদ জননীর সেই জাগরণের চেতনাকে ধরে রাখতে হবে।
২৬শে জুন শহীদ জননী জাহানারা ইমামের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ২৭শে জুন সোমবার ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, নিউইয়র্ক চ্যাপ্টারের আয়োজনে আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত লেখক ডঃ নুরুন নবী শহীদ জননীর সাথে বিভিন্ন স্মৃতি বিশেষ করে শহীদ জননীর মৃত্যু সজ্জায় থাকা অবস্থায় স্মৃতির কথা নিয়ে নিজের লেখা বই ‘জাহানারা ইমামের শেষ দিনগুলি’ থেকে তিনি পাঠ করে শুনান এবং বলেন- জাহানারা খালাম্মাকে যখন শেষ বারের মত মিশিগানের এক হাসপাতালে দেখতে যাই, তিনি কাগজে লিখে দেশের কথা জিজ্ঞেস করলেন, আন্দোলনের কথা জানতে চাইলেন। মৃত্যুর পরে তার অবর্তমানে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবির আন্দোলন দেশবাসীর উপর অর্পণ করার কথা জানিয়েছিলেন শহীদ জননী। ডঃ নুরুন নবী বলেন আমার দৃষ্টিতে বঙ্গবন্ধুর পরে শহীদ জননীর মতো দেশপ্রেমিক আর কেউ ছিলেন না। তিনি আরও বলেন, শহীদ জননীর যে আদর্শ, উনার যে অবদান ও কর্ম ক্ষমতা সেগুলো প্রকাশ করতে হবে এবং বঙ্গবন্ধু ও শহীদ জননীর জীবনী পাঠ করলেই নতুন প্রজন্ম দেশপ্রেমিক হতে পারবে।
|
প্রবীণ সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতা বিরোধীদের নিয়ে, দেশের ইতিহাসকে যখন বিকৃত করা হচ্ছিল, নতুন প্রজন্মকে যখন শেখানো হচ্ছিল মুক্তিযুদ্ধের ভুল তথ্য, সংবিধানকে যখন করা হয়েছিল খণ্ড বিখন্ড, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী যুবসমাজ যখন দিশেহারা ঠিক তখনি আলোর পথের দিশারী হয়ে এসেছিলেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। তিনি দেশের জনগণকে আবার স্বপ্ন দেখার সাহস যুগিয়েছেন, যুদ্ধাপরাধী মুক্ত এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে একযোগে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। জাহানারা ইমাম বাঙালি জাতীয় রাজনীতির ‘ইতিহাসে এক বিশেষ ব্যক্তি’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন।
শহীদ সন্তান ও লেখক তৌহীদ রেজা নুর বলেন, শহীদ জননী জাহানারা ইমামের সাথে কাজ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে, তিনি অসুস্থ শরীর নিয়ে অনেক ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে একটি বৈরী পরিবেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনি বলেন ১৯৮৭ সালে ‘একাত্তরের ঘাতক ও দালালেরা কে কোথায়’ বইটি যখন প্রকাশিত হয়, তখনই মূলত আমরা বুঝতে পারি সমাজ, প্রশাসন, মন্ত্রণালয়সহ সব জায়গায়তেই কিভাবে স্বাধীনতা বিরোধীরা প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে। তিনি আরও বলেন, আমরা যারা যুদ্ধাপরাধের প্রত্যক্ষ স্বীকার হয়েছি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিটা আমরা অনুভব করতে পারতাম এবং প্রতিটি সভায় যেন শহীদের সন্তানদের বক্তব্য থাকে সেটা শহীদ জননী উল্লেখ করে দিতেন।
অনলাইনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, নিউইয়র্ক এলাকার সভাপতি ফাহিম রেজা নূর। সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক স্বীকৃতি বড়ুয়া।
সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন যুক্তরাজ্য থেকে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ওয়েলস এর সভাপতি ও ইউকে বিডি টিভির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মকিস মনসুর, ক্যালিফোর্নিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার রানা মাহমুদ, যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহ সভাপতি রাফায়েত চৌধুরী, নির্মূল কমিটি নিউইয়র্ক চ্যাপ্টারের সহ সাধারণ সম্পাদক শুভ রায় ও অধ্যাপিকা হোসনে আরা। সভায় আরও সংযুক্ত ছিলেন সংগঠনের উপদেষ্টা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সউদ চৌধুরী, সহসভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মনির হোসেন, অধ্যাপক সাহদাত হাসান প্রমুখ।
সভায় সম্প্রতি বাংলাদেশের নড়াইলে ধর্মান্ধ কর্তৃক পুলিশের উপস্থিতিতে শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাস -এর লাঞ্ছিত করার তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয় এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলেও ধর্মান্ধদের দৌরাত্ম্য তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন বক্তারা। |