সংবাদ মাধ্যমের সর্বশেষ খবরে জানা গেছে ব্রিটিশ লেখক সালমান রুশদির শারীরিক অবস্থা ভালো নেই। হামলার শিকার হওয়ার পর বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বিবিসি লিখেছে, বর্তমানে তিনি জীবনবাঁচানো ব্যবস্থায় (লাইফ সাপোর্ট, ভেন্টিলেটর) রয়েছেন এবং কথা বলতে পারছেন না। মৃত্যু হুমকি নিয়ে বেঁচে থাকা লেখক সালমান রুশদিকে গলায় ও পেটে ছুরি দিয়ে মারাত্মক আঘাত করা হয়েছে, তিনি তখন নিউইয়র্কের একটি অনুষ্ঠানে কথা বলছিলেন। দুঃখজনক ঘটনাটির পরপরই ভারতীয় বংশোদ্ভুত বৃটিশ এই লেখককে জরুরী ভ্রাম্যমান বিমান সেবার মাধ্যমে হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে তিনি এখনও চিকিৎসাধীন আছেন। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনসহ বিভিন্ন ব্রিটিশ নেতা ও বেশ কয়েকজন দেশি-বিদেশি সাহিত্যিক রুশদির ওপর হামলার নিন্দা করেছেন। মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেন এক টুইটে নিন্দা করে বলেছে, এ ধরনের সহিংসতা অনুচিত। |
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
সালমান রুশদির এজেন্ট এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, লেখকের এক চোখের দৃষ্টি চলে যেতে পারে। এ ছাড়া তার হৃৎপিণ্ডে ছুরির আঘাত লেগেছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘটনার সময়ে বুকার পুরস্কার বিজয়ী এই লেখক চাওটাওকুয়া ইনস্টিটিউটে এক অনুষ্ঠানে কথা বলছিলেন। এক পুরুষকে দৌড়ে মঞ্চে উঠে রুশদিকে ঘুষি কিংবা ছুরিকাঘাত করতে দেখেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানিয়েছেন, হামলাকারী ছুরি দিয়ে রুশদির ঘাড় এবং শরীরের অন্যান্য অংশে বেশ কয়েকবার আঘাত করেছিল। এরপর অস্ত্রোপচার করা হয়েছে তার। সন্দেহভাজন হামলাকারীকে আটক করেছে পুলিশ। সিএনএন জানিয়েছে, ২৪ বছর বয়সী ‘হাদি মাতার’ নিউ জার্সির ফেয়ারভিউ এলাকার বাসিন্দা। নিউ ইয়র্ক স্টেট পুলিশ বলেছে, সন্দেহভাজন হামলাকারী দৌড়ে মঞ্চে উঠে রুশদির ওপর হামলা চালায়। বুকার পুরস্কার বিজয়ী ৭৫ বছর বয়সী রুশদি পশ্চিম নিউ ইয়র্কের একটি শিল্প-সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিষ্ঠানে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়েছিলেন। ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক সালমান রুশদি ১৯৮১ সালে ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’ দিয়ে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। সাহিত্য সমালোচকরা তাকে ইংরেজি ভাষার কৃতী লেখকদের একজন মনে করেন। তবে চতুর্থ বই ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত স্যাটানিক ভার্সেস দিয়ে তিনি বিতর্কিত হয়ে ওঠেন। অনেক দেশে পরাবাস্তববাদী, উত্তর-আধুনিক এই বইটি নিষিদ্ধ করা হয়। |
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বিতর্কিত স্যাটানিক ভার্সেস উপন্যাস লেখার পর থেকে সালমান রুশদি অনেক দিন ধরে হুমকির মুখে রয়েছেন। বইটির বিষয়বস্তু অনেক মুসলিমকে আহত করেছিল। ইসলামের প্রতি অবমাননাকর আখ্যা দিয়ে ইরানের প্রয়াত ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনি রুশদিকে হত্যার ফতোয়া দিয়েছিলেন। বইটি ১৯৮৮ সালে ইরানে নিষিদ্ধ হয়। এর এক বছর পর ইরানের প্রয়াত নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি রুশদিকে হত্যার ফতোয়া দেন। তার মাথার মূল্য ৩০ লাখ ডলার নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। অবশ্য বর্তমান ইরাণ খোমেনির এ ফতোয়া বিষয়ে খুবই সতর্কতার সাথে চলার চেষ্টা করছে। ভারতীয় বংশোদ্ভূত লেখক সালমান রুশদির যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য উভয় দেশের নাগরিকত্ব রয়েছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে সোচ্চার এই লেখক বেশ কয়েকবারই নিজের কাজের পক্ষে অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। সূত্র: বিবিসি, স্কাই নিউজ ও অন্যান্য |