মৌলভীবাজারে বিজয় দিবসে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে ষাঁড়ের লড়াই অনুষ্ঠিত
এম এ হামিদ, মৌলভীবাজার
ষাড়ের লড়াই প্রতিযোগিতা মুলতঃ প্রাচীণ বাংলার গ্রামীন সংস্কৃতির এক উৎসব। প্রাচীন বাংলার হারিয়ে যাওয়া বিনোদনগুলোর মধ্যে ষাঁড়ের লড়াইও একটি। সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় একে বলা হয় “ডেখার মাইর” বা “বিছাল মাইর”। অনেকটা ঐতিহ্যবাহী এক খেলাও বটে। আগেকার দিনে অনেক ঘটা করে এর আয়োজন করা হতো। কালের বিবর্তনে বহুলাংশে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামীণ এই বিনোদনী সংস্কৃতি। এবারের মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে মৌলভীবাজার পৌরসভার হাজারো মানুষের উচ্ছ্বাসে এই ষাড়ের লড়াই অনুষ্ঠিত হয় শহরে। যা দেখতে সমবেত হন সিলেট বিভাগের বিভিন্ন এলাকার মানুষ। আয়োজকরা বলছেন হারিয়ে যেতে বসা গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই সংস্কৃতি ধরে রাখাই তাদের লক্ষ্য। আর এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখার নিরন্তর চেষ্টা করে চলেছেন মৌলভীবাজারের কমিশনার মাসুদ আহমদ।
মহান বিজয় দিবসে আমন ধান কাটার পর ক্ষেতের জমিতে চারিদিকে হাজারো মানুষের অপেক্ষা। মাঝখানে বাহারী নামের ষাড়ের উপস্থিতি। অনেকটা হারিয়ে যাওয়া এই গ্রামীণ প্রাচীন সংস্কৃতি অর্থাৎ ‘ষাঢ়ের লড়াই’ অনুষ্ঠান বা বলা যায় প্রতিযোগীতায় যোগ দিতে মৌলভীবাজারসহ আশপাশের জেলা সুনামগনজ, সিলেট, হবিগঞ্জ থেকে ষাড় নিয়ে আসেন মালিকরা। সব মিলিয়ে ২০টি ষাড় অংশ গ্রহন করে এবারের এই প্রতিযোগিতায়। গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া এই সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে এমন আয়োজন জানালেন আয়োজকরা।
আয়োজক কমিশনার মাসুদ আহমদ বলেন, প্রথম বার কাউন্সিলর নির্বাচিত হবার পর দেশ-বিদেশের সকল যখন বলেন, ষাঁড়ের লড়াইটি চালু করতে সে থেকেই তিনি প্রতিবছর বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবসে ষাঁড়ের লড়াইয়ের আয়োজন করে থাকেন। মূলত গ্রামবাংলার ঐতিহ্যকে ধরে রাখতেই তিনি এ আয়োজন করে থাকেন, এটা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি। তিনি আরও বলেন এবছর তার ৬টি ষাঁড় লড়াইয়ে অংশ গ্রহন করেছে। এ থেকে একটি চ্যাম্পিয়ন, একটি ৩য় ও একটি জয়লাভ করেছে। তিনি বলেন এক সপ্তাহ আগে থেকেই এলাকার ঘরে ঘরে পিঠা ও মাংস খাবার মাধ্যমে শুরু হয় ষাঁড় লড়াইয়ের প্রস্তুতি।
এলাকাবাসী ও আয়োজক কমিটির সদস্য জমসেদ মিয়া বলেন, প্রতি বছর হাজার হাজার দর্শক ষাঁড়ের লড়াই দেখতে আসেন। এলাকায় এসময় উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। বিজয় দিবসের সাথে এমন আনন্দে শরিক হতে পেরে এলাকাবাসীও খুশি।
মহান বিজয় দিবসের এমন আকর্ষণীয় এই খেলা উপভোগ করেন নানা বয়সী মানুষ।
ঐতিহ্যবাহী ষাঁড়ের এই লড়াই দেখতে ভীড় করেন ১৫ হাজারের বেশী দর্শক। দিনব্যাপী এই ষাড়ের লড়াই শেষে বিজয়ী ষাড়ের মালিকদের মোটর সাইকেল ও টিভি পুরস্কার তোলে দেয়া হয়। এবছরের লড়াইয়ে প্রথম ও তৃতীয় স্থান অর্জন করে মাসুদ কমিশনারের ‘কাটাতাঁর’ ও ‘ভয়ংকর মুদি’। তারা হারায় ‘কালরুপ’-ওসমানিনগর ও ‘স্টিল ফোর বিশ্বনাথ’কে। অপরদিকে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে মৌলভীবাজারের কমরু মিয়ার ষাঁড় ‘দেশ পাগলা’, সে ওসমানি নগরের ‘পাগলা ভাই’কে হারায়। এছাড়াও হবিগঞ্জ জেলার নবিগঞ্জের ‘নিউকালী’, মাসুদ কশিনারের ‘রেব-২’, ওসমানি নগরের ‘সোনার ময়না’ ও ‘পবন’ জয়লাভ করে।
|