মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার উত্তরভাগ চা বাগান কর্তৃক টিলাবেষ্টিত কয়েক হাজার বৃক্ষ কেটে অগ্নি সংযোগসহ টিলা দখলের পর মহামান্য হাইকোর্টের “স্টেটাস-কো” না মেনে চারা রোপণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এসব ঘটনায় রাজনগর থানায় পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
সম্প্রতি রাজনগর থানায় লিখিত অভিযোগটি দায়ের করেন বড়দল গ্রামের শাহ ছবুর ইসলাম। থানায় দায়ের করা অভিযোগ থেকে জানা যায়, উপজেলার ইন্দেশ্বর পরগনা’র ও উত্তরভাগ মৌজার উত্তরভাগ টি,জি স্থিত ৪৫৬৭৪ নং তালুক মেন্দি সংক্রান্ত জে.এল নং-২৩ খতিয়ান নং-ডিপি-১৬, এসএ খতিয়ান নং-৩ এসএ দাগ ৭৬৭ এর আংশিক আরএস জরীপি খতিয়ান নং ১/২ আরএস দাগ নং ৫৬৮ এর আংশিক দাগে রাজনগর সহকারি জজ আদলতে স্বত্ব ৬২/২০০৩ ইং মোকদ্দমা দায়ের করা হলে আদালত বিগত ২০০৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী মামলটি খারিজ করেন।
পরবর্তীতে মামলার দরখাস্থকারী জেলা জজ আদালতে স্বত্ব আপিল ৬৮/২০০৮ ইং দায়ের করেন।
পরে আপিল মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য যুগ্ন জেলা জজ দ্বিতীয় আদলত, মৌলভীজারে বদলি হলে দু তরফা সূত্রে আপিল মামলাটি নামঞ্জুর হয়। পরবর্তীতে দরখাস্থকারীর পক্ষে মহামান্য হাইকোর্ট সিভিল রিভিশন ৪২৪/২৩ নং মোকদ্দমা দায়ের করেন। পরে মাহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশন চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারী তারিখের আদেশে রেসপনডেন্টগণের বিরোদ্ধে রুল ইস্যু করেন। উক্ত তপশীল বর্ণিত ভূমিতে দরখাস্থকারীর পক্ষে দখল ও অবস্থান সম্পর্কে মামলা নিষ্পত্তি পর্যন্ত স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ প্রদান করেন। থানায় অভিযোগে আরো বলা হয়, অত্র ভূমিতে হাইকোর্টের স্থিতাবস্থা থাকা স্বত্ত্বেও উত্তরভাগ চা বাগান কর্তৃপক্ষ অন্যায়ভাবে জবরদখল করার পর নতুন করে আবার চায়ের চারা রোপণ করছে। অত্র ভূমিতে কেউ কোন ধরণের জবরদস্থি করতে না পরে তদমর্মে আইনানুগ ব্যবস্থার দাবী জানানো হয়। এদিকে উত্তরভাগ চা বাগান বেষ্টিত বড়দল এলাকায় সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, দুটি টিলার প্রায় ২ হাজার মূল্যবান বৃক্ষ কেটে কেটে ফেলা হয়েছে। এসব বৃক্ষ কেটে নেবার ব্যপারে স্থানীয়দের সাথে কথা বললে তারা বলেন, এসব বৃক্ষের এক-একটির দাম ৩ হাজার টাকা।
২ হাজার বৃক্ষের দাম পড়ে প্রায় ৬০ লাখ টাকার মত। বড়দল গ্রামের জয়নাল মিয়া,ছবুর মিয়া, শাহ সলমান আলী, শাহ মজাহিদ আলী ও আতহার আলী বলেন, ১ সপ্তাহ ধরে বাগান কর্তৃপক্ষ জোর জবরদস্থি করে টিলার প্রায় ২ হাজার বৃক্ষ কর্তন করে তাদের জিম্মায় নিয়ে গেছে। তারা জানান, প্রায় ১শ বছর ধরে ওই টিলা বড়দলবাসী দখল করে খাচ্ছে। এখন উচ্চ আদালতে উভয় পক্ষের মামলা চলছে। যার পক্ষে রায় হবে তারা পাবেন। তবে বৃক্ষ কেটে নেয়ায় পরিবেশের ব্যাপক বিপর্যয় ঘটবে।
এদিকে মৌলভীবাজার জেলা পরিবেশ সাংবাদিক ফোরাম নেতা সৈয়দ মহসীন পারভেজ বলেন, বন ও পরিবেশ বিভাগের অনুমতি না নিয়ে হাজার হাজার বৃক্ষ কেটে নেয়া আইনপরিপন্থি। উত্তরভাগ ও ইন্দানগর চা বাগান ব্যবস্থাপক লোকমান চৌধুরী বলেন, আমাদের অধিনে থাকা জমিতে কাজে শ্রমিকদের বাধা দেয়ায় সম্প্রতি রাজনগর থানায় শাহ সবুর ইসলামসহ গ্রামের অনেকের বিরোদ্ধে জিডি করেছি। তিনি বলেন,বড়দল গ্রামের বহু মানুষ ভূয়া কাগজ-পত্র তৈরি করে বাগানের সাথে মামলা করেছে। তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, মাহামন্যা হাইকোর্ট ৬ একর ভূমিতে স্টেটাস-কো দিয়েছেন। আমরা ওই ৬ একর ভূমিতে চারা রোপণ করিনি। যে জায়গায় চারা রোপণ করেছি সেটি স্টেটাস-কো’র বাহিরে। রাজনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিনয় ভূষন রায় এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, যারা থানায় অভিযোগ করেছে তাদের ও বাগান কর্তৃপক্ষের মধ্যে একটা মিমাংশা হয়েছে। পুলিশকে ওখানে যেতে হয়নি।