মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নে গরু চোরের উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন কৃষকরা। এ ইউনিয়নের নোয়াগাঁও, ছয়ছিড়ি, পাত্রখোলা, মদনমোনপুর, মাধবপুর, পুরানবাড়ী, হিরামতিসহ বিভিন্ন গ্রামে ২ মাসের ব্যবধানে ১৫ টি গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে। শেষ পুঁজিটুকু হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। তবে কেউ কেউ পুলিশের তৎপরতায় উদ্ধার হওয়া গরু ফেরত পেয়েছেন।
চুরি যাওয়া গরুর মালিকরা জানান, গত রোববার রাতে মাধবপুর চা বাগানের পারুয়াবিল এলাকা থেকে দুটি গরু চুরি হয়। যার মধ্যে একদিন আগেই একটি নতুন বাছুর জন্ম দিয়েছিল। গাভীটির মালিক পরের দিন চা বাগান এলাকায় গাভীটিকে চড়াতে দিয়ে আসলে আর মিলেনি। দু’দিন পর মোস্তফা মিয়ার ফিসারী ও খ্রিষ্টানদের গীর্জা ঘরের পাশ থেকে দুটি গরুর চামড়া উদ্ধার করে পুলিশ। নিজের শেষ পুঁজিটুক হারিয়ে এখন তারা দিশেহারা। এ ঘটনায় পারুয়াবিল গ্রামের আফজাল হোসেন(২৫) নামের এক যুবককে আটক করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ। তার দেয়া তথ্যমতে বাকীদের খুঁজছে পুলিশ।
এর মাস খানেক আগে দিন দুপুরে নোয়াগাঁও রাস্তার মুখ থেকে ফিল্মিস্টাইলে সবার চোখের সামন থেকে গরু ধরে হেটে নিয়ে যায় এক লোক। পরে ঘটনা জানাজানি হলে ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক লাগানো সিসি ফুটেজে একটি লোক গরু নিয়ে যাচ্ছে৷ হেটে চলে যাওয়া লোকটিকে সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এর কিছুদিন পর হিরামতি গ্রামের নিল কুমার সিংহ তার গরুকে মাঠে বেঁধে কাজ করছিলেন, এ সুযোগে চোর তার পেছন থেকে গরুটিকে নিয়ে চলে যায়। অনেক খোঁজাখুজি করেও আর গরুটি পাওয়া যায়নি। এলাকায় গরু চোরের উপদ্রব দেখা দেওয়ায় আতঙ্কে রয়েছেন সাধারণ গরু পালন কারী কৃষকরা। অনেকে গভীর রাত পর্যন্ত গোয়ালঘর পাহারা দিচ্ছেন তারা।
মাধবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসিদ আলী জানান, আমি চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর থেকে আট থেকে দশ টি গরু চুরি হয়েছে। আমার পূর্বে গরু চুরির সংখ্যা আরো বেশী ছিল। আমরা তৎপর হওয়ায় তাদের চুরির ধরন পাল্টিয়ে গরু কেটে বস্তায় ভরে মাংস পাচার করছে চোর চক্র। ঈদকে সামনে রেখে চুরি রোধে প্রতিটি ওয়ার্ডে মিটিং ডাকা হয়েছে।
কমলগঞ্জ থানার ওসি সঞ্জয় চক্রবর্তী জানান, গরু চুরির ঘটনায় যে কয়টি মামলা করা হয়েছে সবকটি মামলা আমরা নিয়েছি। চোরদের ধরে জেল হাজতে প্রেরণ করেছি। এছাড়া রাত্রকালীন টহল জোরদার করা হয়েছে
মৌলভীবাজারে ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় আটকে রয়েছে ৩টি মডেল মসজিদের নির্মাণকাজ। জেলার কমলগঞ্জ ও রাজনগর উপজেলায় এ প্রকল্পের কাজ চলমান থাকলেও বাকি উপজেলাগুলোতে অনেকটা থমকে আছে এর কার্যক্রম। ভূমি অধিগ্রহণসহ নানা জটিলতায় মৌলভীবাজার সদর, কুলাউড়া, জুড়ী এবং শ্রীমঙ্গলের মডেল মসজিদ নির্মাণকাজ শুরু করা যায়নি বলে জানা গেছে।
আরো জানা গেছে, সরকারের ধর্মমন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে শতভাগ নির্মাণ কাজ শেষ ও জনবল নিয়োগের পর ২০০ মডেল মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ও রাজনগর উপজেলায় এ প্রকল্পের কাজ চলমান থাকলেও বাকি উপজেলাগুলোতে অনেকটা থমকে রয়েছে এ প্রকল্পের কার্যক্রম।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়সূত্র জানায়, জেলার কমলগঞ্জ ও রাজনগর উপজেলায় মডেল মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্য কোনো কারণে বিরতি না হলে কমলগঞ্জ উপজেলায় চলতি বছরের সেপ্টেম্বর এবং রাজনগর উপজেলায় ডিসেম্বর মাসে কাজ সম্পন্ন হবার সম্ভবনা রয়েছে।
সদর উপজেলার জন্য বর্ষিজোড়া এলাকায় ভূমি অধিগ্রহণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। অধিগ্রহণ সম্পন্ন হলেই কাজ শুরু হবে। কুলাউড়া উপজেলার নবীন চন্দ্র উচ্চবিদ্যালয়ের পাশে ভূমি অধিগ্রহণ করা হলেও এখনও ভবন নির্মাণকাজ শুরু হয়নি। শ্রীমঙ্গল উপজেলায় চার দফায় ভূমি অধিগ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে।
শহরের হবিগঞ্জ সড়কে মনাই উল্লাহ উচ্চবিদ্যালয়ের পাশে ভূমিও চূড়ান্ত করা হয়। কিন্তু সেখানে স্থানীয় সমজিদ কমিটির দ্বন্ধে মডেল মসজিদ করা যায়নি। পরে একাধিক স্থানে ভূমি দেখার পর নানাবিদ কারণে হয়নি প্রকল্পের কাজ। সর্বশেষ শহরের হবিগঞ্জ সড়কে ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
জুড়ী উপজেলার জন্য ভূমি নির্ধারণ করে অধিগ্রহণের অনুমতি চেয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে। এখনও ভূমি অধিগ্রহণের ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আর বড়লেখায় উপজেলা কমপ্লেক্সের ভূমিতে মডেল মসজিদের প্রথম তলার কাজ সম্পন্ন হবার পর বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ উপজেলায় পুনরায় কাজ শুরু করা হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আনোয়ারুল কাদির এ প্রতিনিধিকে জানান, সরকারের মডেল মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নকশা অনুযায়ী মহানগর ও জেলা পর্যায়ে ৪ তলা, উপজেলা পর্যায়ে ৩ তলা মসজিদ হবে।
মৌলভীবাজারের ৭ উপজেলার মধ্যে কমলগঞ্জ উপজেলায় মডেল মসজিদ নির্মাণকাজ অনেকদূর এগিয়েছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর এবং ডিসেম্বর মাসে রাজনগরের মডেল মসজিদের নির্মাণকাজ শেষ হবার সম্ভাবনা রয়েছে। বাকিগুলোর মধ্যে বড়লেখা উপজেলার মসজিদ আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে শেষ হতে পারে।
এ ব্যাপারে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম জানান, ভূমি অধিগ্রহণসহ নানা জটিলতায় মৌলভীবাজার সদর, কুলাউড়া, জুড়ী এবং শ্রীমঙ্গলের মডেল মসজিদ নির্মাণকাজ শুরু করা যাচ্ছে না। আশাকরি শীঘ্রই এর সমাধান হবে।
এদিকে, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের সাথে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, দেশের ৮টি জেলায় সৌদি রাজকীয় সরকারের অর্থায়নে ৪ তলা বিশিষ্ট জেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কাজ দ্রুতই শুরু হচ্ছে।
এ ৮টি জেলার মধ্যে একটি হলো মৌলভীবাজার। যার জন্য মৌলভীবাজারের জগন্নাথপুর এলাকায় ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। মৌলভীবাজার জেলা সদরের বর্ষিজোড়ায় হবে সরকারের মডেল মসজিদ এবং জগন্নাথপুরে হবে জেলা মডেল মসজিদ।