হিসেব দেখে শিউরে চমকে উঠার মতই। বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর ৫ ট্রিলিয়ন প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার করা হয় অর্থাৎ ৫ লাখ কোটি প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার হয়। যে সংখ্যা প্রতি সেকেন্ডে ১ লাখ ৬০ হাজার। সাধারণ গণক বা গণনা যন্ত্রে এতো বড় অংক লেখার ঘরই থাকে না।
‘আর্থ পলিসি ইনস্টিটিউট’-এর হিসাবে বিশ্বজুড়ে প্রতি মিনিটে প্রায় ২ মিলিয়ন প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার করা হয়। যার প্রায় ১ শতাংশেরও কম পুনর্ব্যবহারের ব্যবস্থা(রিসাইকেল) করা হয়। অর্থাৎ ৯৯ শতাংশের বেশি প্লাস্টিকের ব্যাগ পরিবেশে মারাত্মক ভাবে প্রতিনিয়ত ছড়িয়ে পড়ছে। বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর উৎপাদিত প্লাস্টিকের ১০ শতাংশ সমুদ্রে এসে পড়ে। এর প্রায় ৭০% সমুদ্রের তলদেশে জমা হয়। যার ফলে বার্ষিক ১০ কোটি সামুদ্রিক প্রাণী মারা যাচ্ছে। প্রায় ১ মিলিয়ন সামুদ্রিক পাখিরও মৃত্যুর কারণ এই প্লাস্টিক।
বাংলাদেশে প্রতিবছর ১০.৯৫ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী শুধুমাত্র ঢাকায় প্রতিদিন প্রায় ২.৫ কোটি পিস পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার হচ্ছে এসব ব্যাগের মাধ্যমে পরিবেশে প্লাস্টিক দূষণ ঘটছে। এসব প্লাস্টিক বর্জ্যের মাইক্রো ও ন্যানো কণা পরিবেশ ও মানবদেহে ভয়ংকর প্রভাব ফেলছে।
জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হওয়ায় ২০০২ সালে বাংলাদেশই প্রথম দেশ হিসেবে আইন করে পলিথিন শপিং ব্যাগের উৎপাদন, ব্যবহার, বিপণন ও বাজারজাতকরণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। কিন্তু তা এখনও কার্যকর হয়নি। তাই জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষার্থে কাগজের ব্যাগ, কাপড়ের ব্যাগ এবং সম্পূর্ণরূপে পচনশীল ও পরিবেশবান্ধব পাটের ব্যাগ হোক প্লাস্টিক ব্যাগের বিকল্প।
পলিথিন পরিবেশ এর জন্য হুমকি কেন, এর জন্য প্রথমেই জানা প্রয়োজন যে পলিথিন আসলে কী।
পলিথিন : পলিথিন হচ্ছে ইথিলিন এর পলিমার, অসংখ্য ইথিলিন অনু পলিমারাইজেশন প্রক্রিয়ায় পরস্পরের সাথে সংযুক্ত হয়ে পলিথিন গঠন করে।
আরো ভাল করে বললে বলতে হবে- অনেকগুলো ক্ষুদ্র অণু পরস্পর যুক্ত হয়ে বৃহৎ অণু গঠন করে তাকে পলিমার বলে। (পলিথিন এর রাসায়নিক সংকেত (C2H4)n)।
পলিথিন পরিবেশ এর জন্য কেন মারাত্মক হুমকি, তার কারন গুলো আসুন দেখে নিই।
পলিথিন
একটি অপঁচনশীল বস্তু হলো পলিথিন। পলিথিন ব্যবহারের পরে যেখানে সেখানে আমরা পলিথিন ফেলে দেয়ায় তা পরিবেশে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে এবং করছে। এ ছাড়াও আরো বহু সমস্যা সৃষ্টি করে থাকে।
মাটিতে ফেলার ফলে, মাটির নিচে থেকেও পঁচে না বরং মাটির গুনাগুন নষ্ট করে ফলে মাটির উর্বরতা ধীরে ধীরে হ্রাস পায়। পলিথিনে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে গাছের পুষ্টি উপাদান ঠিকমতো প্রবাহিত হয় না, গাছের শিকড় বা মূলও বহু দূরে বিস্তৃত হতে পারে না।
পানিতে ফেললে, জলের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয় এবং হচ্ছে। বিভিন্ন প্যাকেটের গায়ে অতি ক্ষুদ্র প্লাস্টিকের উপাদান লেগে থাকে, যা মাছের জন্য অখাদ্য। মাছ সেই অখাদ্যকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে এবং করছে আর মানুষ সে মাছ খেলে ক্যান্সার সহ নানাবিধ চর্মরোগ এবং অন্যান্য জটিল সমস্যা দেখা দেয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে।
রাস্তা -ঘাটে যেখানে সেখানে পলিথিন ফেলার কারনে, পানি ঠিকমতো প্রবাহিত হয় না, জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় এবং হচ্ছে। এছাড়াও পয়োনিষ্কাশন এর জটিলতা বৃদ্ধি পায় এবং পাচ্ছে।
আমরা যে, একবার ব্যবহার করে ফেলে দেয়া নিয়মের(ওয়ানটাইম ইউজ) পলিথিন এর প্যাকেট বা গ্লাস এ খাবার বা পানীয় পান করি, এতেও শারীরিক অনেক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
ব্যবহার করা পলিথিন পুড়িয়ে নতুন পলিথিন তৈরি করা হয়, এতে পলিথিন পুড়ে পলিভিনাইল ক্লোরাইড এবং কার্বন মনো-অক্সাইড বাতাসে মিশে গিয়ে, বায়ু দূষণ হচ্ছে। আমরা যে শ্বাস গ্রহণ করছি তার সাথে ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান থাকে, এর ফলে বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, ফুসফুসের সমস্যা এবং শ্বাসকষ্ট সহ নানাবিধ সমস্যা দেখা যায়।
একমাত্র আমাদের দ্বারা তৈরী জনসচেতনতা-ই পারে পলিথিন সংশ্লিষ্ট পরিবেশগত হুমকি থেকে বাঁচাতে।
সূত্র: উইকিপিডিয়া ও সংবাদ মাধ্যম থেকে সংগৃহীত