হারুনূর রশীদ।। ইন্দোনেশিয়ার জাভা অঞ্চলের গভীর জঙ্গলে অবাক করা এক গীর্জা ঘর। এ যেনো যাদুর পরশকাঠির ছোঁয়া লেগে গিয়ে আলাদীনের দৈত্ব্য এসে বানিয়ে দিয়ে গেছে। নিজের চোখে দেখে পুলকিত হবেন না এমন কেউ নেই। মানুষের কাছে ‘গেরেজা আয়াম’ বা ‘মোরগ গির্জা’ বলে সুপরিচিত। সুদীর্ঘকাল ধরে মধ্যজাভার ‘মেইজলাঙ্গ’ পাহাড়ের গভীরে রেমা টিলায় পরিত্যাক্ত হয়ে পড়ে আছে অদ্ভুত আকারের এই ঘরটি। প্রতি বছর শত শত দর্শকের সন্দিৎসু মনের নজর কাড়ে। দেখতে এক বিশাল দৈত্যাকার মোরগের চেহারায় নির্মিত। মানুষ যা-ই বলে না কেনো, আসলে ঘরটি কোন গীর্জাও নয় কোন মোরগও নয়। স্বভাব আর খামখেয়ালি মনের ডানিয়েল আলমসজা এটি বানিয়েছিলেন। তার চিন্তায় হয়তো ছিল, যেহেতু তাদের ওই এলাকায় কোন ধর্মেরই উপসনালয় নেই সুতরাং একটি উপাসনালয় নির্মাণ খুবই প্রয়োজন। তাই তিনি সরাসরি গীর্জা না মানিয়ে বানিয়েছিলেন এই প্রার্থনালয়। যেহেতু তিনি খৃষ্ঠধর্মাবলম্বী তাই পরিচিত সকলেই মনে করেছিল যে তিনি গীর্জাই গড়ে তুলছেন। মূলতঃ তিনি বানিয়েছেন মোরগও নয়, গীর্জাও নয় আসলে সকল ধর্মের মানুষের প্রার্থনার জন্য একটি দৃষ্টি নন্দন প্রার্থনালয়।
অদ্ভুত আর খামখেয়ালি স্বভাবের মানুষ ‘ডানিয়েল আলমসজা’। ধর্মে খৃষ্ঠান, কাজ করেন জাকার্তা থেকে ৩৪২ মাইল দূরে। হঠাৎ একদিন স্বপ্নযোগে খোদায়ি নির্দেশ পেলেন বনকপোতের আদলে একটি প্রার্থনাগার নির্মাণের। সেই থেকে এক হাহুতাসন মনে ঘুরতে থাকলেন জায়গার খোঁজে। একদিন তার শ্বশুরালয়ের কাছ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। চোখে পড়ল অবিকল তার স্বপ্নে দেখা সেই জায়গা। ওখানেই দাঁড়িয়ে গেলেন। সারা রাত কাটালেন ওই জমিতে প্রার্থনা করে। প্রার্থনায় প্রার্থনায় রাত যখন গভীর, তিনি কিছু একটা অনুভুত হলেন, মনে এই ভাব এলো যে এই জমিই তার সেই প্রার্থনার জমি। এখানেই তাকে আদেশপ্রাপ্ত প্রার্থনার সেই ঘর তৈরী করতে হবে।
এক বছর পর ওই এলাকারই কতিপয় জমির মালিক ওই রেমা পাহাড়ের ৩,০০০ বর্গ মিটার ভূমি তাকে দিতে রাজী হল। তিনি চার বছরে পরিশোধের বন্ধোবস্তে কিনে নিলেন। প্রার্থনাগার নির্মাণ শুরু করলেন। ২ মিলিয়ন রুপিতে (১১০ পাউন্ড) ১৯৯০ সালে ডানিয়েল সম্পন্ন করেন প্রার্থনাগার তৈরীর কাজ।
তার এই প্রার্থনাগার মাঝে বহুদিন ব্যবহার হয়েছে বিকলাঙ্গ শিশু-কিশোরদের নিরাময়াগার হিসেবে আর মাদকাসক্ত যুবকদের পূণর্বাসন কেন্দ্র হিসেবে। ২০০০ সাল থেকে পরিত্যক্ত। কেউ ব্যবহার করছে না। তবে দেশী-বিদেশী পর্যটকেরা ‘মোরগ দালান’টি দেখতে ভিড় জমান এলাকায়। অনেকেই স্ব স্ব প্রার্থনার জন্য দালানের ভেতর ব্যবহারও করেন। ইদানিং নানাবিদ অপকর্মও সংঘটিত হতে শুনা যায়।
৬৭ বছর বয়সের ডানিয়েল আলমসজা এখনও জীবিত আছেন। আরো জীবিত আছেন পাশের গ্রাম ‘দেশে গম্বঙ্গ’ এর ‘ওয়াছনো’। তিনি দালানটি স্ব-উদ্যোগে খেয়াল রাখেন আর প্রত্যেক পর্যটকের কাছ থেকে দিনপিছু ৯পেনি আদায় করেন। দালানটির বর্তমান অবস্থা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
(জাকার্তা গ্লোব ও টাইমস অবলম্বনে। সংগ্রহ ও অনুবাদ: হারুনূর রশীদ)