মৌলভীবাজার-৩(সদর-রাজনগর) আসনে নির্বাচনী সকল হিসেব নিকেষকে ধাধাঁয় ফেলে হঠাৎ করেই দূর্দান্ত গতিতে এসে নৌকার হাল ধরলেন অলীলা গ্রুপের এমডি শিল্পপতি জিল্লুর রহমান। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে দলীয় প্রাথীর তালিকায় আলোচনার প্রথম সারিতে ছিলেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আ’লীগ সভাপতি নেছার আহমদ, জেলা মহিলা আ’লীগের সভাপতি ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ সৈয়দা জোহরা আলাউদ্দিন, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ কামাল হোসেন। তাদের সাথে মুঠামুটি আলোচনায় ছিলেন রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের জিল্লুর রহমান। জেলার ৪টি আসনের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ আসনটি নিয়ে “টক অফ দ্যা টাউন” এখন মৌলভীবাজার। এদিকে রাজনগর উপজেলার সন্তান জিল্লুর নৌকা পাওয়ায় উপজেলা আ’লীগ ও অঙ্গ সংগঠনসহ সাধারণ মানুষ ভিষণ খুশি। ওই উপজেলায় এখন বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলাবাসীর মতে, ওই আসনে যুগের পর যুগ আমরা সমানতালে ভোট দিয়ে চাহিদার আলোকে কিছুই পাইনি। সব পেয়েছে মৌলভীবাজার সদর উপজেলা। জিল্লুর এমপি হলে উন্নয়নের একটা সমতা ফিরে আসবে।
এদিকে নৌকার মাঝির নাম পূনরুদ্ধার করতে খোদ রাজধানীতে অনেক নেতা-কর্মীরা তদবির করছেন বলে জানা গেছে সর্বমহল থেকে। রাজনগরের জিল্লুর নৌকা পেয়েছেন এমন ঘোষণা আসার পর থেকে মৌলভীবাজার শহরের আ’লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে মতপ্রার্থক্য দেখা দিয়েছে। বিশ্বস্তভাবে জানা গেছে, জিল্লুর স্থানীয়ভাবে আওয়ামী পদ পদবীপ্রাপ্ত কেউ নন। তিনি আওয়ামী লীগ স্থানীয় রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন না। ফলে তাঁর মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
দলের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, শহুরে আ’লীগ এর যারা মনোনয়ন চেয়েছেন তাঁদের মধ্য থেকে যদি কাউকে মনোনয়ন দেয়া হতো তাতেও কোন সমস্যা ছিলোনা। কিন্তু যে ব্যক্তি কোনদিন স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগ এর রাজনীতি করেনি তাঁকে তো মেনে নেয়া যায় না।
এদিকে এই ঘোষনার পর জেলা আওয়ামী লীগ এক জরুরী বৈঠক ডেকেছে এমন খবর পাওয়া গেছে। সেখান থেকে একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগসহ দুই ডজন নেতা-কর্মী ঢাকায় অবস্থান করছেন।
এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন মৌলভীবাজার-৩ আসনে থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মৌলভীবাজার সদর উপজেলা আওয়ামীলগের সাধারণ সম্পদক ও মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি আব্দুল মালিক তরফদার(ভিপি) সোয়েব নির্বাচন করবেন এমন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
মৌলভীবাজার-৩ আসনের নৌকার মনোয়ন প্রাপ্ত প্রার্থী জিল্লুর রহমান মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ৩টায় সিলেট থেকে মুঠোফোনে খোশ মেজাজে বলেন, আমি ভালো আছি ভাই। প্রেসক্লাবে বসে আমি আপনাদের সাথে বিস্তারিত কথা বলবো।
এদিকে জেলা আ’লীগ সভাপতি ও সংসদ সদস্য নেছার আহমদ’র সাথে মঙ্গলবার মুঠোফোনে আলাপচারিতা হয় এ প্রতিবেদকের। “জিল্লুরকে দলীয় টিকিট দেয়ায় জেলা শহরের নেতা-কর্মীরা মেনে না নেয়া ও তাকে বাদ দিয়ে শহর থেকে দলীয় প্রার্থী পুনরুদ্ধারের চেষ্ঠা করা হচ্ছে কিনা” প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা আ’লীগ সভাপতি বলেন, “ আমি এ ব্যাপারে কিছু বলতে চাচ্ছিনা। অন্য কাউকে জিজ্ঞেস করেন”।
সোমবার বিকেলে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাইবাছাই শেষে এ ঘোষণা দেন ওই জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা।
এসময় জেলা রিটার্নিং বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য মৌলভীবাজার-৩ আসনে মনোনয়ন জমা দেন ১১ জন প্রার্থী। এর মধ্যে ৬ জনের প্রার্থীতা বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। নানা ধরনের ত্রুটি থাকার কারণে এ আসনের ৫ জনের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে।
মৌলভীবাজার-৩ আসনে মনোনয়ন বাতিল হওয়া প্রার্থীরা হলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আব্দুল রহিম শহিদ, বাংলাদেশ ইসলামি ঐক্যফ্রন্টের মো. আব্দুর রউফ, জাকের পার্টির মো. আব্দুল কাইয়ুম, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের ফাহাদ আলম এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী সাদিকুর রহমান।
মৌলভীবাজার-৩ আসনে মনোনয়ন বৈধ ঘোষিত প্রার্থীরা হলেন, আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান, জাসদ নেতা আব্দুল মোসাব্বির, ওয়ার্কাস পার্টি তাপস কুমার ঘোষ, জাতীয় পার্টির দুই নেতা রুহুল আমিন, আলতাফুর রহমান এবং এনপিপির মো. আবু বকর।
প্রার্থীতা বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে কী না এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, আগামী ৫ ডিসেম্বর থেকে ৯ ডিসেম্বর প্রার্থীরা এই ঘোষণার বিপরীতে আপিল করতে পারবেন। আপিলের রায় ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে জানা হবে।