যথাযোগ্য মর্যাদায় মৌলভীবাজারে মহান বিজয় দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে শনিবার সকাল ৬টা থেকে প্রশাসন, রাজনৈতিক সংঠন, সামাজিক, এনজিও ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিনিধিরা শহরের সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। সকাল থেকে জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ সুপার, আ’লীগ, জেলা সিভিল সার্জন, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, কমিউনিস্ট পার্টি, জাসদ, বাসদসহ প্রায় শতাধিক সংঠনের ব্যনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
সকালে জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাবেক পৌরসভা মেয়র ফয়জুল করীম ময়ুন’র নেতৃত্বে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বিএনপি।
পরে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এম সাইফুর রহমান স্টেডিয়ামে (জেলা স্টেডিয়াম) মহান বিজয়ের ইতিকথা তুলে ধরতে নেচে গেয়ে নৃত্য পরিবেশন করে অর্ধ্ব শত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এসময় উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য নেছার আহমদ, মৌলভীবাজার- হবিগঞ্জ সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দা জোহরা আলাউদ্দিন, জেলা প্রশাসক ড উর্মি বিনতে সালাম, জেলা পুলিশ সুপার মোঃ মনজুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ আব্দুল হক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( সার্বিক) প্রভাংশু সোম মহান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) বর্ণালী পাল, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদর্শন কুমার রায়, পৌর মেয়র ফজলুর রহমান, আ’লীগ নেতা আজমল হোসেন, সৈয়দ সলমান আলী, যুবলীগ জেলা সভাপতি রেজাউর রহমান সুমন, ছাত্রলীগের সাবেক জেলা সভাপতি মোঃ জাকারিয়াসহ অনেকে।
পরে পৃথকভাবে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, উন্নত মানের খাবার ও বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
বাঙালি জাতির শৃঙ্খল ভাঙার দিন, গৌরবোজ্জল মহাঅর্জনের দিন আজ। মহান বিজয়ের ৫৩ বছর। দীর্ঘ ৯ মাস সংগ্রাম করে বহু প্রাণ আর রক্তের বিনিময়ে এদিনে বাঙালি ছিনিয়ে আনে বিজয়ের লাল সূর্য।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এ দেশের মুক্তিকামী মানুষের ওপর অত্যাচার -নির্যাতনের পর এদিনে আত্মসমর্পণ করে মুক্তিকামী মানুষের কাছে। আজ পরম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় পুরো জাতি স্বরণ করে মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী লাখো শহীদকে। যাদের জীবন উৎসর্গে আমরা পেয়েছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে নবীগজ্ঞ উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদের নানা আয়োজনে যথাযথ মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস পালিত হয়েছে। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান নবীগজ্ঞ উপজেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, পুলিশ প্রশাসন, পৌর পরিষদ, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্টান। পরে সরকারি এবং বেসরকারী ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।
সকাল ৯ টায় নবীগজ্ঞ জে,কে উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও স্কাউটসদের সালাম গ্রহণ করেন উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। পরে বাংলাদেশ পুলিশ, আনসার ভিডিপি, স্কাউটস ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্টানের ছাত্র-ছাত্রীদের সমন্বয়ে আনন্দ-বিনোদন ও শরীরচর্চা প্রদর্শন করা হয়। সকাল ১০ টায় স্কুলের মাঠে পুরষ্কার বিতরণ অনুষ্টিত হয়। বেলা সারে ১১ টায় উপজেলা পরিষদের মিলতায়নে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুপম দাস অনুপের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম সহ উপস্থিত অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
সন্ধ্যা ৭ টা থেকে উপজেলা পরিষদ মাঠে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উক্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নবীগজ্ঞ আনন্দ নিকেতনের শিল্পীরা গান ও নৃত্য পরিবেশন করে।
নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ৫২ তম মহান বিজয় দিবস উদযাপন করা হয়। শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) ভোর ৬টায় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে কমলগঞ্জ উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড, উপজেলা আওয়ামীলীগসহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, ক্রীড়া সংগঠন পুষ্পার্পণ করে দিবসের কর্মসূচির শুরু হয়। ভোর ৭টায় কমলগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মো. রফিকুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন, ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা সাইফুল আলম ও সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল মুনিম তরফদার এর নেতৃত্বে ধলই চা বাগানে বীর শ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধে, কামুদপুর মুক্তিযোদ্ধা কবরস্থান, দেওড়াছড়া চা বাগান বধ্যভূমি ও শমশেরনগর বধ্যভূমিতে পুষ্পার্পণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
সকাল ৯টায় তিলকপুর মাঠে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, পুলিশ সদস্য, ফায়ার ব্রিগেড সদস্য, স্কাউট, বিএনসিসি সদস্যদের অংশগ্রহনে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর অনুষ্ঠিত হয় খেলাধূলা। দুপুর ২টায় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা এবং “জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, চেতনা ধারণ ও ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার শীর্ষক আলোচনা সভা এবং বিজয় দিবসের তাৎপর্য শীর্ষক” আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মো. রফিকুর রহমান।
বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আছলম ইকবাল মিলন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বিলকিস বেগম, কমলগঞ্জ থানার ওসি সাইফুল আলম, উপজেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল মুনিম তরফদার প্রমুখ। সন্ধ্যায় জেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
এছাড়াও কমলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে রাজনৈতিক, সামাজিক ও ক্রীড়া সংগঠনে নানা আয়োজনের মাধ্যমে দিবসটি পালন করা হয়।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর ইসলামিক মিশন এর আয়োজনে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়। শনিবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচী পালিত হয়।
ইসলামিক মিশন শমশেরনগরের জেষ্ঠ্য চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মো. মোহবুবুল হক এর সভাপতিত্বে ও মক্তব শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষক মাও: কামাল উদ্দিন হাবিবের পরিচালনায় আলোচনা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামিক মিশন শমশেরনগর এর কর্মসূচিকর্তা মো. মুমিনুল হক, সাংবাদিক সমিতি কমলগঞ্জ ইউনিটের সভাপতি নূরুল মোহাইমীন, ইসলামিক মিশন ইবতেদায়ী মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. মতিউর রহমান মিনহাজ প্রমুখ।
আলোচনা সভা শেষে ইসলামিক মিশন পরিচালিত বিভিন্ন মক্তব শিক্ষার্থী, এবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষার্থী এবং মিশন এলাকা শিশুদের নিয়ে খেলাধূলা ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগীতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরুস্কার প্রদান করা হয়। পরে দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে দিনটিতে কোন ধরণের টিকেট ফি ছাড়াই শতাধিক রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ঔষধপত্র প্রদান করা হয়।