দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণ করা হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বুধবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ঘোষণা করা আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে এ তথ্য জানানো হয়।
ইশতেহারে বলা হয়েছে, নাগরিককেন্দ্রিক, স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক, কল্যাণমুখী, উপাত্তনির্ভর এবং সমন্বিত দক্ষ-স্মার্ট প্রশাসন গড়ার মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আওয়ামী লীগ অঙ্গীকারবদ্ধ। মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের মাধ্যমে দক্ষ, উদ্যোগী, তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে দীর্ঘসূত্রতা পরিহার করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে অধিকতর তৎপরতা বাড়িয়ে দুর্নীতি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতাসহ সব ধরনের হয়রানি বন্ধে কাজ চলবে।
ইশতেহারে বলা হয়, প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, পদায়ন ও পদোন্নতিতে মেধা, সততা, যোগ্যতা, কর্মনিষ্ঠা, দক্ষতা, ন্যায়পরায়ণতা, শৃঙ্খলাবোধ প্রভৃতি বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। বৈশ্বিক সংকটের সঙ্গে বৃদ্ধি পাওয়া জীবনযাত্রার মান সমন্বয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিশেষ প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। গৃহঋণ বাবদ সরল সুদে ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ও দুর্নীতি নির্মূল করার, একটি সর্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং স্বাস্থ্য বীমা চালু করার প্রতিশ্রুতি দেয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ভোটারদের কাছে তাদের অতীতের ভুল ক্ষমা করার জন্য, ‘ক্ষমাশীল চোখে’ দেখার জন্যও একটি আবেগপূর্ণ আবেদন জানান। তিনি বলেন, ‘বিগত ১৫ বছরের সরকার পরিচালনার পথ-পরিক্রমায় যা কিছু ভুলত্রুটি তার দায়ভার আমাদের। সাফল্যের কৃতিত্ব আপনাদের। আমাদের ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমরা কথা নিচ্ছি, অতীতের ভূলভ্রান্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে আপনাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী ভবিষ্যৎ কর্মকান্ড পরিচালনা করবো।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি রাজনীতিতে এসেছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত কাজ শেষ করে এদেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে। এ কাজ করতে গিয়ে আমাকে মৃতুর মুখোমুখি হতে হয়েছে বার বার। কিন্তু আমার বাবা আর দেশের মানুষের কথা ভেবে আমি পিছ-পা হইনি। যতদিন আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখেন, সুস্থ রাখেন, ততদিন যা কর্তব্য হিসেবে আমি গ্রহণ করেছি, সেখান থেকে সরে আসবো না। আপনাদের সেবক হিসেবে কাজ করার মধ্য দিয়েই আমি আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই।
তিনি বলেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশ এক ক্রান্তিকালে দাঁড়িয়ে। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে সামিল হতে যাচ্ছে দেশ। এই উত্তরণ যেমন একদিকে সম্মানের, অন্যদিকে বিশাল চ্যালেঞ্জেরও।
তিনি বলেন, ‘আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারকে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার সক্ষমতা থাকতে হবে। একমাত্র আওয়ামী লীগই পারবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে।
সরকার প্রধান স্মরণ করিয়ে দেন, মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার আদায়, মাতৃভূমির স্বাধীনতা থেকে শুরু করে এ দেশের যা কিছু মহৎ অর্জন, তা এসেছে আওয়ামী লীগের হাত ধরে।
তিনি বলেন, দ্বাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা আবারও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। অতীতের ধারাবাহিকতায় এবারও আমরা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে একটি বাস্তবায়নযোগ্য নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করেছি। ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮- এর নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষিত দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনাগুলোর ধারাবাহিকতা দ্বাদশ নির্বাচনী ইশতেহারেও রক্ষিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের ইশতেহারে যে ১১টি বিষয়ে বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে-
১. দ্রব্যমূল্য সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। ২. কর্মোপযোগী শিক্ষা ও যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা। ৩. আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। ৪. লাভজনক কৃষির লক্ষ্যে সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থা, যান্ত্রিকীকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে বিনিয়োগ বৃদ্ধি। ৫. দৃশ্যমান অবকাঠামোর সুবিধা নিয়ে এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে শিল্পের প্রসার ঘটানো। ৬. বরংকসহ আর্থিক খাতে দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। ৭. নিম্ন আয়ের মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা সুলভ করা। ৮. সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় সবাইকে যুক্ত করা। ৯. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহি- নীর কার্যকারিতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা। ১০. সাম্প্রদায়িকতা এবং সব ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ রোধ করা। ১১, সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুরক্ষা ও চর্চার প্রসার ঘটানো।