রাজধানীর বাড্ডার ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লিংগ কাটাতে গিয়ে শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করে সাত দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
দেশের সব সরকার অনুমোদিত ও অননুমোদিত হাসপাতাল ক্লিনিকের তালিকা এক মাসের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। সোমবার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম জনস্বার্থে রিটটি করেন। রিটে শিশু আয়ানের চিকিৎসায় থাকা চিকিৎসকদের দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে তাদের ডাক্তারি সনদ বাতিল ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়।
গত ৩১ ডিসেম্বর সাঁতারকুলের ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ধর্ম মানার দায়ে লিংগের পরদা কাটানোর জন্য আনা হয় আয়ানকে। সেদিন বেলা ৯টায় খৎনা করার জন্য তাকে অজ্ঞান করা হয়। তবে লিংগের পরদা কাটার পর ১১টায়ও জ্ঞান না ফিরলে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে এনে লাইফসাপোর্টে রাখা হয় আয়ানকে। রোববার রাতে তার লাইফ সাপোর্ট খুলে নিয়ে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
গত রোববার এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক(হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসানের সই করা এক আদেশে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি কোনো প্রকার আইনানুগ নিবন্ধন অথবা লাইসেন্স ছাড়াই নির্মাণাধীন ভবনে চিকিৎসা সেবা পরিচালনা করে আসছে, যা সরকারের প্রচলিত আইনের পরিপন্থী। তাই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সুপারিশক্রমে এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশে এ আদেশ জারি করা হয়েছে।
আদেশে বলা হয়, সম্প্রতি ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু আয়ান আহমেদের(৫) মৃত্যুতে তার বাবার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অধিদপ্তরের পরিচালকের(হাসপাতাল ও ক্লিনিক) নেতৃত্বে ১০ জানুয়ারি হাসপাতালটি পরিদর্শন করা হয়। এ সময় ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লাইসেন্স দেখাতে ব্যর্থ হয়। এছাড়া দপ্তরের অনলাইন ডাটাবেজ পর্যালোচনা এবং পরিদর্শনকালে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে দেখা যায়, ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নামে কোনো প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে নিবন্ধন বা লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য কখনোই অনলাইন আবেদন করেনি।
উল্লেখ্য, গত ৩১ ডিসেম্বর ধর্ম মানার দায়ে লিংগের পরদা কটানোর জন্য আয়ানকে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান তার অভিভাবক। সকাল ৯টার দিকে শিশুটিকে অ্যানেসথেসিয়া দেয়া হয়। তবে অনুমতি ছাড়াই ‘ফুল অ্যানেসথেসিয়া’(জেনারেল) দিয়ে চিকিৎসক আয়ানের খতনা করান বলে অভিযোগ করা হয়েছে। পরে ৭ জানুয়ারি মধ্যরাতে শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
এ ঘটনায় গত ৯ জানুয়ারি রাজধানীর বাড্ডা থানায় আয়ানের বাবা শামীম আহমেদ বাদী হয়ে ইউনাইটেড হাসপাতাল ও ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুই চিকিৎসক, অজ্ঞাতনামা কর্মকর্তা-কর্মচারী ও এক পরিচালককে আসামি করে মামলা করেন।