চা শ্রমিকের লাশের ময়না তদন্ত,
ঘাতক চালক গ্রেফতার ও
এক কনের চাচাতোবোন আটক
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর চা বাগানের নতুন টিলায় এক গৃহবধুর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে স্থানীয়ভাবে চলছে নানা গুঞ্জন। এটি পরিকল্পিত হত্যা না আত্মহত্যা এ নিয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে নিহতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকলেও ময়না তদন্ত রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত পুলিশ নিশ্চিত হতে পারছে না। গত বুধবার (২৭ মার্চ) রাত ৮টায় শমশেরনগর চা বাগানের নতুন টিলার নিজ ঘরে লাশ ঝুলে থাকতে দেখে উদ্ধার করে স্থানীয় ক্যামেলিয়া হাসপাতালে নিয়ে যায় চা শ্রমিক স্বামী।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার ফাগুয়া উৎসবে শমশেরনগর চা বাগানের নতুন টিলার বাসিন্দা মাধুরী আকুড়া (৩২) ও তার স্বামী সাধন আকুড়া মাথাল হয়ে উঠে। এরপর তাদের মধ্যে মনোমালিন্যের ঘটনাও ঘটে। এরপর রাতে ঘরে লাশ ঝুলে থাকতে দেখে স্বামী উদ্ধার করে স্থানীয় ক্যামেলিয়া হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তবে মাধুরী আকুড়ার পরকীয়ার বিষয়টি নিয়েও স্বামীর সাথে মনোমালিন্য হতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে। ঘটনার পর বৃহস্পতিবার দুপুরে পারিবারিক উদ্যোগে মাধুরী আকুড়ার লাশ সৎকার করাতে চাইলে পুলিশ সেখান থেকে ময়না তদন্তের জন্য লাশ উদ্ধার করে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে।
শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির দায়ীত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা(তদন্ত) শামীম আকনজী বলেন, ধারনা করা যাচ্ছে এটি একটি আত্মহত্যা। ময়না তদন্তের রিপোর্ট আসার পর তা নিশ্চিত হওয়া যাবে এটি হত্যা না আত্মহত্যা।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার কানিহাটি চা বাগানে কাজ শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে দ্রুতগামী প্রাইভেট কার চাপায় কুঞ্জ বালা মৃধা(৫০) নামে এক নারী চা শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনার ৮দিন পর মামলার মূল আসামী ঘাতক চালক লুৎফুর রহমান(৪২)কে গত শনিবার রাতে রাজনগর এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে শমশেরনগর ফাঁড়ির পুলিশ। জব্দ করা হয়েছে প্রাইভেট কার। গ্রেফতারকৃত লুৎফুর রহমান রাজনগর উপজেলার কাটাজুড়ি গ্রামের বাসিন্দা।
গত ১৫ মার্চ শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে কানিহাটি চা বাগানের নিয়মিত শ্রমিক কুঞ্জ বালা মৃধা সেকশনে কাজ শেষে বাড়ি ফেরার সময় উপজেলার শমশেরনগর-চাতলাপুর সড়কের ক্যামেলিয়া হাসপাতালের সামনের পাকা রাস্তা পারাপারের সময় দ্রুতগামী একটি প্রাইভেট কার তাকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে অন্যান্য শ্রমিকরা তাকে উদ্ধার করে বাগানের ক্যামেলিয়া হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত কুঞ্জ বালা বাগানের অফিস লাইনের বাসিন্দা বলে জানা গেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে কানিহাটি চা বাগানে সাধারণ চা শ্রমিকরা শমশেরনগর-চাতলাপুর সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছিল বিক্ষুব্ধ নারী পুরুষ চা শ্রমিকরা। পরে কমলগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো: রফিকুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার জয়নাল আবেদীন, কমলগঞ্জ থানার ওসি সাইফুল ইসলামসহ পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে আসামী গ্রেফতার ও নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার আশ্বাসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
কমলগঞ্জ থানার দায়ীত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সাইফুল ইসলাম জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় এক নারী শ্রমিক নিহতের ঘটনায় কমলগঞ্জ থানায় মামলা হলে এই মামলার মূল আসামী লুৎফুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে ঘাতক প্রাইভেট কার। গ্রেফতারকৃত আসামীকে রোববার সকালে মৌলভীবাজার আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
গায়ে হলুদের কনের গলায় ছুরির আঘাত
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর চা বাগানের রেলিটিলায় গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে কনের গলায় ছুরির আঘাতে গুরুতর আহত করার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় চাচাতো বোনকে আটক করেছে পুলিশ।
গত শনিবার রাতে শমশেরনগর ইউপি সদস্য ইয়াকুব আলীর সহযোগিতায় শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক জাকির হোসেনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ উপজেলার সুনছড়া চা বাগান থেকে নিচু রেলি ওরপে বৃষ্টি (২৫)কে আটক করেছে।
জানা যায়, শমশেরনগর চা বাগানের রেলিটিলার সুরনারায়নের কনে সীমা রেলি(২১) এর বিয়ের দিন ধার্য্য ছিল গত ৬ মার্চ বুধবার। গত মঙ্গলবার রাতে সীমার গায়ে হলুদের আসর বসে। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষে ঘরে আসার পর পার্শ্ববর্তী ঘরের নেচু রেলি ওরপে বৃষ্টি(২৫) পিছনের দরজা দিয়ে কনে সীমা রেলিকে চুমু দিতে ডাক দেয়। এ সময়ে দরজা খুলে বের হলে নেচু রেলির হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কনে সীমা রেলির গলায় আছড় দিলে সীমা গুরুতর রক্তাক্ত হয়। ঘটনা ঘটিয়ে নিচু রেলি ওরপে বৃষ্টি দ্রুত পালিয়ে যায়।
শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির দায়ীত্বপ্রাপ্ত পরিদর্শক(তদন্ত) জাকির হোসেন জানান নেচু রেলী ওরপে বৃষ্টিকে আটক করা হয়েছে। রোববার সকালে তাকে মৌলভীবাজার আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।