বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে লোকালয়ে বেরিয়ে আসা একটি মায়া হরিণ ধরে বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেছেন স্থানীয় কয়েকজন তরুণ। শনিবার(৯ মার্চ) দুপুরে উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের কালীপুর এলাকার একটি ধানী জমিতে মায়া হরিণটি ধরা পড়ে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নিয়াজ মোর্শেদ রাজু।
আলীনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিয়াজ মোর্শেদ রাজু জানান, শনিবার দুপুরে কালীপুর গ্রামে লোকালয়ে বেরিয়ে আসা একটি মায়া হরিণ ধানীজমি থেকে ধরেন কিছু তরুণ। পরে বিষয়টি তাঁকে জানালে তিনি কমলগঞ্জ রাজকান্দি বন রেঞ্জ ও স্থানীয় গণমাধ্যমকে অবগত করেন। পরে স্থানীয়দের সহযোগীতায় মায়া হরিণকে রাজকান্দি রেঞ্জ বনে নিয়ে আসেন। সেখান থেকে মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষন বিভাগ হরিনটিকে নিয়ে যায়।
রাজকান্দি বন রেঞ্জ কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এর মাধ্যমে খবর পেয়ে মায়া হরিণটি উদ্ধার করে রেঞ্জ অফিসে নিয়ে আসি। পরে মৌলভীবাবাজর প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগের কাছে মায়া হরিণটি হস্তান্তর করা হয়।
লাউয়াছড়া বন রেঞ্জ কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘উদ্ধারকৃত হরিণটি সুস্থ থাকায় শনিবার বিকালে কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া বনে অবমুক্ত করা হবে। ধারণা করা হচ্ছে, হরিণটি রাজকান্দি রেঞ্জের কামারছড়া বন বিট এলাকা থেকে খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে বেরিয়ে এসেছিল।’
চা-শ্রমিকদের ফাগুয়ার উৎসব বোনাস প্রদানের দাবি জানিয়েছে
চা-শ্রমিকদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব ফাল্গুন মাসের মাসের দোল পুর্ণিমার সময় ফাগুয়া(লাল পূজা) উৎসবের সময় প্রাপ্য উৎসব বোনাস সকল চা-বাগানে প্রদান করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে চা-শ্রমিক সংঘ।
চা-শ্রমিক সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির আহবায়ক রাজদেও কৈরী এবং যুগ্ম-আহাবয়ক শ্যামল অলমিক এক যুক্ত বিবৃতিতে অভিযোগ করেন চা-বাগান মালিকদের সাথে সম্পাদিত চুক্তি এবং চা-শিল্পে সরকার ঘোষিত নি¤œতম মজুরির গেজেট (এস. আর.ও. নং ২৪৬-আইন/২০২৩) অনুযায়ী ফাগুয়ায় সকল চা ও রাবার-শ্রমিক উৎসব বোনাস পাওয়ার অধিকারী। কিন্তু এবছর ফাগুয়া উৎসবে এখনো অধিকাংশ বাগানের চা-শ্রমিকরা উৎসব বোনাস পাননি, এমন কি কোন কোন চা-বাগানের শ্রমিকদের সাপ্তাহিক মজুরিও ঠিক মতো পরিশোধ করা হয়নি। ডানকান ব্রাদার্স লিমিটেডের আলীনগর, সুনছড়া, চাতলাপুর, শমসেরনগর; দেউন্দি টি কোম্পানির মৃত্তিঙ্গা, লালচান, দেউন্দি নয়াপাড়া, এনটিসির দেওরাছড়াসহ বিভিন্ন বাগানের শ্রমিকদের অদ্যাবধি ফাগুয়া উৎসব বোনাস প্রদান করা হয়নি। আবার কোন কোন বাগানে ফাগুয়ায় উৎসব বোনাস প্রদান করা হলেও পূর্ণ বোনাস না দিয়ে আংশিক বোনাস দেওয়া হচ্ছে।
বিভিন্ন বাগানের চা-শ্রমিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন দৈনিক মাত্র ১৭০ টাকা মজুরিতে বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্দ্ধগতির বাজারে এমনিতেই চা-শ্রমিকদের অনাহার-অর্ধাহারে দিন কাটাতে হয়। তার উপর শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার হতে বঞ্চিত করা হলে শ্রমিকরা কোথায় যাবে? অথচ চা-শ্রমিকদের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমে ২০২৩ সালে লক্ষ্য মাত্রা অতিক্রম করে রেকর্ড পরিমান চা-উৎপাদন হয়। ২৪ মার্চ থেকে ফাগুয়া উৎসব শুরু হয়ে গেলেও এখনো অধিকাংশ চা-শ্রমিকদের উৎসব বোনাস প্রদান করা হয়নি। চা বাগান মালিকদের সাথে সম্পাদিত সর্বশেষ মজুরি চুক্তি (২৩ ডিসেম্বর ২০২৩) অনুযায়ী প্রতি বছর একজন চা-শ্রমিক ৫২ দিনের মজুরির সমপরিমান উৎসব বোনাস প্রাপ্য হবেন, যার ৬০ শতাংশ দুর্গা পূজায় এবং অবশিষ্ট ৪০ শতাংশ ফাগুয়ায় পাবেন। সেই হিসেবে ফাগুয়ায় একজন শ্রমিক ৩,৫৩৬ টাকা উৎসব বোনাস পাবেন। চা-শ্রমিক সংঘের নেতারা অবিলম্বে সকল চা ও রাবার শ্রমিকদের পূর্ণ বোনাস হিসেবে ৩,৫৩৬ টাকা প্রদান এবং যে সকল চা-বাগানে এরিয়ারা টাকা বকেয়া রয়েছে ও মজুরি বকেয়া আছে তা অবিলম্বে পরিশোধ করা দাবি জানান। অন্যথায় চা-শ্রমিকরা বেঁচে থাকার তাগিয়ে ২০২২ সালের আগষ্ট মাসের আন্দোলনের শিক্ষা থেকে নতুন করে আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়তে বাধ্য হবে।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় পবিত্র রমজান উপলক্ষে ন্যায্য দামে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য প্রাপ্তির নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, মৌলভীবাজার এর সহকারী পরিচালক মো: শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে ও শমসেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির সহযোগিতায় তদারকি অভিযান ও জরিমানা পরিচালনা করা হয়। বৃহস্পতিবার উপজেলার শমশেরনগর বাজার ও পতনউষার শহীদনগর বাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য পণ্য, ফল ও সবজির ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে সচেতনতামূলক ও মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, তদারকি অভিযানে দৃশ্যমান স্থানে মূল্য তালিকা না রাখা, প্যাকটজাত খাদ্য পণ্যের গাঁয়ে উৎপাদন, মেয়াদ উত্তীর্ণে তারিখ ও মূল্য উল্লেখ না থাকা, মেয়াদ উত্তীর্ণ খাদ্য পণ্য বিক্রয় করাসহ বিভিন্ন অনিয়মের দায়ে পতনউষার শহীদনগর বাজারে অবস্থিত দেওয়ান ট্রেডার্সকে ৪ হাজার টাকা, শমশেরনগর বাজারে অবস্থিত শাহপরাণ ফল ভান্ডারকে ২ হাজার টাকা, বিসমিল্লাহ স্টোরকে ১০ হাজার টাকা, মেসার্স মদিনা ট্রেডার্সকে ৩ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ ও তা আদায় করা হয়।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো: শফিকুল ইসলাম অভিযানের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, অভিযানে ৪ টি প্রতিষ্ঠানকে ১৯ হাজার টাকা জরিমানা ও তা আদায় করা হয়। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী ন্যায্য মূল্যে প্রাপ্তি এবং নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের তদারকি কার্যক্রম চলমান থাকবে।
গরুসহ চিহ্নিত দুই গরু চোর গ্রেফতার
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে গরু চুরির ঘটনায় চিহ্নিত দুই গরু চোরকে গ্রেফতার করছে পুলিশ। গত শনিবার রাতব্যাপী আসামীদের বাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের শ্রীগোবিন্দপুর চা বাগানের নয়ন পাশির পাশি’র বাড়ি থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশ সুত্রে জানা যায়, উপজেলার সীমান্তবর্তী ইসলামপুর ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে আব্দুল জব্বার (২৫) কে গ্রেফতারের পর তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী চুরির ঘটনায় তার সহযোগী পাত্রখোলা এলাকার তমিজ উদ্দিনের ছেলে জাকির হোসেন (৪৯) ও শ্রীপুর এলাকার আং মজিদের ছেলে মুন্না মিয়া (২৬)কে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরবর্তীতে আটকদের তথ্যের ভিত্তিতে শ্রীগোবিন্দপুর চা বাগান এলাকা থেকে চোরাই যাওয়া নব্বই হাজার টাকা মূল্যের একটি গরু উদ্ধার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৭ মার্চ রাত আড়াই ঘটিকার সময় মাধবপুর ইউনিয়নের শ্রীগোবিন্দপুর বাগানের নয়ন পাশির গোয়াল ঘর থেকে চুরেরা গরু চুরি করে নিয়া যায়। এ ঘটনায় অভিযোগের প্রেক্ষিতে কমলগঞ্জ থানায় একটি নিয়মিত মামলা রুজু হয়।
কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ সাইফুল আলম জানান, শ্রীগোবিন্দপুর বাগান থেকে গরু চুরির ঘটনায় মূল হোতাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আসামীদের বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। পরে রিমান্ডে এনে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
হৈরোল ফাউন্ডেশন কর্তৃক গুণীজন সংবর্ধনা ও আলোচনা সভা
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে হৈরোল ফাউন্ডেশনের ৩য় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে গুণিজন সংবর্ধনা, আলোচনা সভা ও মণিপুরি ভাষা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের ভানুবিল মাঝেরগাঁও গ্রামের কৃষ্ণচন্দ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
হৈরোল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কনথৌজম শিল্পীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বিলকিস বেগম। শিক্ষার্থী এল সুচনা সিনহা ও অন্তরা শর্মার যৌথ সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন কমলগঞ্জ উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা জয় কুমার হাজরা, কবি ও কথা সাহিত্যিক আকমল হোসেন নিপু, মণিপুরি কাং ফেডারেশনের সভাপতি ইবুংহাল সিংহ শ্যামল, কবি ও সাহিত্যিক খইরোম ইন্দ্রজিৎ, কৃষ্ণচন্দ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শান্ত কুমার সিংহ, স্বাস্থ্য পরিদর্শক মিকইবী দেবী প্রমুখ। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ইউপি সদস্য গুলনাহার বেগম, হকতিয়ারখোলা মণিপুরি ভাষা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বৃন্দা রাণী সিনহা, কবি ও লেখক সাজ্জাদুল হক স্বপন, কবি আয়েকপম অঞ্জু, সাংবাদিক সালাউদ্দিন শুভ ও আর কে সোমেন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে সমাজ উন্নয়নে স্ব স্ব ক্ষেত্রে অবদান রাখার রাজকুমারী অমুস্না, আমুসেনা দেবী, মোছা. নুরুন নেছা বেগম, রাধাবতী দেবী ও বীনা রানী সিনহাকে সম্মাননা ক্রেস্ট ও উত্তরীয় প্রদান করা হয় এবং মণিপুরি ভাষা পরীক্ষায় বিজয়ী ১ম, ২য় ও ৩য় দলকে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা। পরে স্থানীয় শিল্পীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
মৌলভীবাজাররে কমলগঞ্জ উপজলোর শমশেরনগরে ইসলামিক ফাউন্ডশেনরে ৪৯ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। রোববার সকাল সাড়ে ১১টায় শমশেরনগর ইসলামিক মিশন এর উদ্যোগে মিশন কার্যালয়ে সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. মো. মোহেব্বুল হক এর সভাপতিত্বে ও প্রোগ্রাম অফিসার মো. মুমিনুল হক এর পরিচালনায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু বক্কর, শিক্ষক মাওলানা কামাল উদ্দিন আল হাবিব। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন মসজিদের ইমাম ও খতিবসহ ছাত্রছাত্রীগন উপস্থিত ছিলেন।