।।হারুনূর রশীদ।।
মঙ্গলবার, ২০শে সেপ্টেম্বর ২০১৬
একটি ভিন্ন বিষয় খুঁজতে গিয়ে ‘উইকিপেডিয়া’তে পেলাম দু’বছর আগের সেই শরীর হিম হয়ে যাওয়া ঘটনা। অনেকেরই নিশ্চয়ই খেয়াল আছে আবার অনেকেই হয়তো ভুলেই গেছি। শরীর হিম হয়ে যাওয়া ঠিকই কিন্তু ঘটনার বিবরণ পড়তে গেলে যেকোন জনই স্তম্ভিত না হয়ে পারবে না। আমারও হলো তাই, কিছুক্ষনের জন্য লেপটপ থেকে হাত গুটিয়ে নিয়ে টেবিল পাশের জানালা দিয়ে আকাশের অসীমতার দিকে তাকিয়ে ছিলাম কতক্ষন এখন আর বলতে পারবো না। যখন খেয়ালে ফিরে এলাম তখন আকাশ নীলিমায় আচ্ছন্ন। বুঝতেই পারছিলাম না কি করে মানুষ পরের তরে নিজেকে অবলিলায় মরতে দিতে পারে! অন্যকে বাঁচানো ছাড়া নিজের আর কোন প্রাপ্তি নেই, কেবল নিশ্চিত মৃত্যু ভিন্ন; এমন অবস্থায় জেনে শুনে কোন মানুষ নিজেকে মৃত্যুর হাতে তুলে দেয়? হ্যাঁ আছে, এমন আত্মার মানুষ আছে। এরা মরেও মরে না! এরাই অমৃতের সন্তান! এদেরই বলতে হয় মহামতি আত্মা।
পাকিস্তানের খাইবার পাকতুনখোয়া প্রদেশের হাঙ্গু জেলার ইব্রাহীম জাঁই গ্রাম। মুজাহিদ আলী তার পরিবার নিয়ে ওই গ্রামে বাস করেন। তার দুই ছেলে দুই মেয়ে আর স্ত্রী এই নিয়ে ছিমছাম সংসার। মুজাহিদ রুটি-রুজীর তাগিদে দুবাই থাকেন।
গ্রামের নামেই স্কুল আছে ‘ইব্রাহীম জাঁই’ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়। মুজাহিদ আলীর বড় ছেলে ইতজাজ হাসান এ স্কুলের ৯বম শ্রেণীর ছাত্র। এ বয়সের কোমলমতি কিশোর-কিশোরীরা প্রকৃতিজাত কারণেই বিনোদনমুখী কর্মকান্ডের দিকে উৎসাহী হয় বেশী। মুজাহিদ আলীর ছেলে ইতজাজও লেখা-পড়ার চেয়ে খেলা-ধূলা আর বিনোদনী কাজে সময় দেয় বেশী। অনেক সময় দেরীতে আসার কারণে স্কুলে ঢুকতে পারেনা। স্কুলের পুরো সময় বাইরেই থাকতে হয়।
খেলা-ধূলা শেষ করে এক বন্ধুর সাথে গল্প-গোজবে মশগুল হয়ে স্কুলে আসতে গিয়ে এদিনও দেরী হয়ে যায়। আসার পথেই বুঝতে পারে তাদের কাছ দিয়েই যে লোকটি আসছে তার শরীর দেখে কেমন সন্দেহ সন্দেহ লাগছে। কি যেনো সে বয়ে নিয়ে আসছে। লোকটি যখন স্কুলে ঢুকতে যাবে ইতজাজরা দাড়াতে বলে। এতে ওই লোক আরো বেশী তাড়াহুড়া করে স্কুলে ঢুকে যাবার চেষ্টা করে। ইতজাজ দৌড়ে গিয়ে লোকাটাকে ধরে ফেলে। তাকে বললো- স্কুলের ভেতরে গিয়ে তোমাকে বোমা ফাটাতে দেবো না। সাহস থাকে তো তোমার বোমা এখানে ফাটিয়ে দাও! আত্মঘাতি বোমাবাজ যখন বুঝলো যে ছেলেটি তাকে ছাড়বে না, তখনই সে বোমা ফাটিয়ে দেয়। আত্মঘাতির সাথে ইতজাজও শহীদ হয়, হাসপাতালে নেয়ার পর। পরে জানা যায় লোকটি জঙ্গী সন্ত্রাসী দল “লস্কর ই জঙ্গী”র সদস্য। ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১৪ সালের ৬ই জানুয়ারী।
ইতজাজের এই সাহসী ভূমিকার জন্য তাকে ‘সিতারা ই সুজাত’ পদবীতে ভূষিত করে পাকিরা। পদবীর সাথে ৫০লক্ষ রুপি তার পরিবারকে দেয়া হয়। গ্রামের ‘ইব্রাহীম জাঁই’ স্কুলের নাম বদলে রাখা হয়েছে ‘ইতজাজ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়’। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশন, পুরস্কারে ভূষিত করেছেন ইতজাজকে। সে অনেকই তো এখন হবে। কারণ ইতজাজ আর কোন কালেই ফিরে আসবেনা।
তাই বলছিলাম ইতজাজরা মরেও অমর হয়ে থাকে। এরা মরেও মরে না! এদেরই বলতে হয় মহামতি আত্মা। তবে হ্যাঁ, এরা কোটিতে এক!
অমৃতের সন্তান তারাই।