ছাত্র আন্দোলনে সহিংসতা
তদন্তে জাতিসংঘের নেতৃত্ব চায় এবি পার্টি
গত ১০ আগস্ট, শনিবার, ২০২৪, দেশের প্রায় সকল পত্র-পত্রিকায় এ খবরটি প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত ওই খবরে, জুলাই ও আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার স্বতঃস্ফূর্ত অভ্যুত্থান চলাকালে শেখ হাসিনার নির্দেশে ‘গণহত্যা’ ও চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছে আমার বাংলাদেশ পার্টি(এবি পার্টি) নামে একটি রাজনৈতিক দল। তারা এসব ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তে জাতিসংঘকে নেতৃত্ব দিতে আহ্বান জানিয়েছে।
গেল শনিবার সকালে জাতিসংঘ বাংলাদেশ মিশনের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দলটির নেতারা এ আহ্বান জানিয়েছেন। বিকেলে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন এবি পার্টির প্রচার সম্পাদক আনোয়ার সাদাত।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জুলাই ও আগস্টে তৎকালীন সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের প্রত্যক্ষ নির্দেশে বাংলাদেশে সবচেয়ে জঘন্যতম গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এর অবশ্যই পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করা উচিত এবং অপরাধীদের জবাবদিহি ও বিচারের আওতায় আনতে হবে। এবি পার্টি চায় জাতিসংঘ এ তদন্তে সর্বাত্মক সহায়তা ও নেতৃত্ব দিক।
পাশাপাশি ২০০৯ সাল থেকে আজ পর্যন্ত দেশে যত গুম, খুন, আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, সেগুলোর নিরপেক্ষ বিচারের পথ তৈরিতে বাংলাদেশের অন্যান্য উন্নয়ন অংশীদার এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে অংশ নিতে আহ্বান জানায় দলটি।
সম্প্রতি গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ ও চ্যালেঞ্জ, বিশেষ করে ন্যায়বিচার, জবাবদিহি নিশ্চিত করা ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি দূর করার বিষয়সহ নানা বিষয়ে এবি পার্টির নেতারা গোয়েন লুইসের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে দলের হয়ে সদস্যসচিব মজিবুর রহমান নেতৃত্ব দেন। প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন যুগ্ম আহ্বায়ক বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তাজুল ইসলাম, যুগ্ম সদস্যসচিব আসাদুজ্জামান ও জুবায়ের আহমেদ ভূঁইয়া এবং এবি পার্টি উইমেন শাখার ইনচার্জ নাসরীন সুলতানা ছিলেন। এ সময় জাতিসংঘের সিনিয়র মানবাধিকার উপদেষ্টা হুমা খানও উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য এবি পার্টি হলো- ২০২০সালে জামাত-ই-ইসলামীর পদত্যাগী নেতা সোলায়মান চৌধুরী কর্তৃক সংগঠিত একটি দল এবং তিনি দলটির আহ্বায়ক।
সোলায়মান চৌধুরী ১৯৭৭ সালে অনুষ্ঠিত সুপিরিয়র পোষ্ট পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৭৯ সালে সহকারী কমিশনার ও ম্যাজিষ্টেট পদে ঢাকা জেলায় সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সচিব, পাটকল সংস্থার চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম ওয়াসা চেয়ারম্যান, জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান, পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের চেয়ারম্যান, রাষ্ট্রপতির সচিবসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ২০০১ সালে ফেনীর জেলা প্রশাসক, ২০০৬ সালে পরপর তিনি সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও সর্বশেষ রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান পদ থেকে অবসরে যান। চাকরি শেষে তিনি বিএনপির চেয়ার পার্সন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবেও কিছুদিন দায়িত্ব পালন করেন।[৩]
তিনি ১৯৬৪ সালে ইসলামী ছাত্র সংঘে যোগ দিয়ে ১৯৭৫ সালের নভেম্বরে ছাত্রজীবন সমাপ্ত হলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীতে যোগদেন। ১৯৭৭ সালে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য বিষয়ক সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৬ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে থাকায় প্রকাশ্যে রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন।
সচিব পদ থেকে অবসরে যাওয়ার পর ২০০৯ সালে পুনরায় তিনি জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরার সদস্য এবং দলের পেশাজীবীদের সংগঠন জাতীয় পেশাজীবী ফোরামের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। ১০ ডিসেম্বর ২০১৯ সালে তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী থেকে পদত্যাগ করেন।[৪]
২ মে ২০২০ সালে আত্মপ্রকাশ হওয়া ‘আমার বাংলাদেশ পার্টি’(এবি পার্টি) নামক নতুন রাজনৈতিক দলের আহ্বায়ক ঘোষিত হন তিনি।