দীর্ঘস্থায়ী বন্যার
স্থায়ী সমাধানের দাবিতে মানববন্ধন
সিলেট বিভাগের বিল ও হাওর খনন, বুড়িকিয়ারী বাঁধ অপসারণ, হাওরে জলজ উদ্ভিদ রোপন ও বন্যার স্থায়ী সমাধানের দাবিতে মৌলভীবাজারে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল।
মৌলভীবাজার কাউয়াদিঘী হাওর রক্ষা আন্দোলনের উদ্যোগে সোমবার দুপুরে মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব সম্মুখে অনুষ্ঠিত
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহ্বায়ক আ স ম সালেহ সুহেল। সদস্য সচিব খছরু চৌধুরীর পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন, সিনিয়র সাংবাদিক সরওয়ার আহমদ, কাউয়াদিঘী হাওর রক্ষা আন্দোলনের যুগ্ন সদস্য সচিব কৃষক নেতা আলমগীর হোসেন, সাংবাদিক হোসাইন আহমদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা রঞ্জিত কুমার বিশ্বাস, বাপা সাধারণ সম্পাদক শিব প্রসঞ্জ ভট্টাচার্য, ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সাধারণ সম্পাদক তাপস ঘোষ, আমার গৌরভ ফাউন্ডেশনের মৌলভীবাজার জেলা সভাপতি আলতাফুর রহমান, মাওলানা মকবুল হোসেন খান, আখাইলকুড়া ইউনিয়নের কৃষক নেতা লোকমান খান নবিন, আব্দুল লতিফ, সামছ উদ্দিন মাষ্টার, রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়নের সামছুল হক, হাকালুকি হাওর পাড়ের কৃষক মোঃ এলাইছ মিয়া, মানিকুল ইসলাম রহম, কৃষক নেতা লায়েক আহমদ, রেজাউল করিম বেগ, আবু তালেব চৌধুরী সহ কৃষক, শ্রমিক, হাওর পারের বাসিন্দা সহ বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার লোক উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা বলেন, মৌলভীবাজারকে বন্যা হতে রক্ষা করতে হলে পরিকল্পিতভাবে এ জেলার বড় নদী কুশিয়ারা, হাওর, খাল ও বিল খনন করতে হবে। বিশেষ করে হাকালুকি হাওরের বুড়িকিয়ারী বাঁধ অপসারণের দাবি তোলেন বক্তারা। তারা আরও বলেন, বন্যা আসলে তাড়াহুড়া করে অস্থায়ী কিছু কাজ করে দেখানো হয়। পরবর্তীতে আর কোনো কাজ হয় না। সমস্যার কথা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা ভুলে যান। মাঝে মধ্যে খননের জন্য বরাদ্দ আসলেও এ কাজ পরিপূর্ণভাবে করা হয় না। হরিলুট হয়ে যায়। বন্যার স্থায়ী সমাধান নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের দৃশ্যমান কোনো তৎপরতা নেই মৌলভীবাজারে। এদিকে বৃহত্তর সিলেট বিভাগের বন্যার জন্য কিশোরগঞ্জের মিঠামইনের বাঁধকে দায়ি করেন বক্তারা।
বক্তারা আরও বলেন, হাওরকে ধ্বংস করার জন্য শিল্পপতিরা হাওরের মধ্যে কারখানা স্থাপনের চিন্তা করছেন। আমরা জানতে পেরেছি ইতিমধ্যে তারা অনেক জায়গা কিনেছেন। হাওরের মধ্যে কোনো অবস্থাতে এ জেলার কৃষকরা কারখানা স্থাপন করতে দেবেন না।
সাবেক কৃষি ও বন মন্ত্রীর বাসা-বাড়িতে ভাংচুর
দুষ্কৃতিকারীরা জেলায় ৬ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি করেছে।
মৌলভীবাজার জেলা শহরসহ জেলা জুড়ে হামলা-ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগের ঘটনায় অন্তত ৬ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সম্প্রতি আ’লীগ সরকারকে হঠানো আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যুবলীগ-ছাত্রলীগ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যকার সংঘর্ষ ও বিচ্ছিন্ন হামলায় এসব ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে আ’লীগকে হঠালে আরেক ধাপের বিচ্ছিন্ন ঘটনায় জেলাজুড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়। এসব ঘটনার মধ্যে ছিল শ্রীমঙ্গল উপজেলায় সাবেক কৃষি মন্ত্রীর বাসায় ভাংচুর, শ্যামলী বাস কাউন্টারে হামলা, শ্যমা মিষ্টি ভান্ডার ভাংচুর করা হয়। তবে এসব ঘটনায় জেলায় শতাধিক মানুষ গুরুতর জখম থাকলেও কোন হত্যার ঘটনা ঘটেনি।
এদিকে জেলার বড়লেখা উপজেলায় সাবেক পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন’র বাড়ি ও মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের শেখ মুজিব’র মুড়াল ভাংচুর করা হয়। কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বড়লেখার এক ব্যক্তি জানান, বিএনপির সুবিধাভোগী কিছু মানুষ এর সাথে জড়িত ছিল।
এদিকে জেলা শহরের আ’লীগ নেতা মোহাম্মদ আব্দুল রহীম শহিদ’র বাসভবন ও ব্যবসায়ী স্থাপনা এমআর টাওয়ারে ভাংচুর, মৌলভীবাজার সদর মডেল থানা ও থানার গাড়ি ভাংচুর, দূরপাল্লার এনা বাসসহ ৩টি গাড়ি, জেলা আ’লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মোঃ কামাল হোসেনের চৌমুহনাস্থ বাসার গাড়িতে অগ্নী সংযোগ ও চৌমুহনা এলাকার ম্যানাজার স্টল, রাধিকা স্টল ও মামাবাড়ী রেস্তোরায় ভাংচুর করা হয়।
এছাড়াও জেলার কুলাউড়া উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ভাংচুর ও আগ্নী সংযোগের ঘটনা ঘটেছে। কুলাউড়া ডাক বাংলো, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, কুলাউড়া থানা, দোকানপাটসহ শুধু কুলাউড়ায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রায় দেড় কোটি টাকার। রাজনগর উপজেলা অডিটোরিয়াম, জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান কিশোর রায় চৌধুরী মনির বাসায় হামলা করা হয়। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান জানতে চাইলে তারা জানান, এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনায় জেলায় সর্বনিম্ন ৬ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মোঃ ইয়ামীর আলী এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনার জন্য মৌলভীবাজার জেলা জামায়াত দুঃখ প্রকাশ করছে। তিনি বলেন, এ ধরণের ঘটনা রাজনৈতিক ব্যানারে হয়নি। সুযোগ সন্ধানী দুবৃত্তরা ঘটিয়েছে। এ ধরণের ঘটনা যেন আর না ঘটে, জামায়াত সর্বচ্চ সতর্ক অবস্থানে থেকে প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পাহারা দিচ্ছে।
এদিকে মৌলভীবাজার জেলায় দ্বায়িত্বরত সেনাবাহিনীর ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্ট-১৮ এর অধিনায়ক লেঃ কর্নেল ইব্রাহিম বৃহস্পতিবার এ প্রতিবেদককে বলেন, মৌলভীবাজার জেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। অন্য জেলার তুলনায় এ জেলার পরিস্থিতি শান্ত আছে। যেগুলো ঘটেছে, সেগুলো বিচ্ছিন্ন ও রাজনৈতিক ঘটনা। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সতর্ক অবস্থান নিয়ে মাঠে কাজ করছে।